ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার পূর্ব রেলের

Railway Safety: কন্ট্রোল রুমে লাইভ ফিড মনিটরিং, ট্রেনে মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরও জোরদার পূর্ব রেলের 

আবীর ঘোষাল, কলকাতা: পূর্ব রেলওয়ে যাত্রীদের, বিশেষত নিত্যযাত্রী এবং মহিলাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। মহিলা যাত্রীদের সুরক্ষা এবং তাদের মর্যাদা বজায় রাখতে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে । পূর্ব রেলের সুরক্ষা বাহিনী (আরপিএফ) মহিলা যাত্রীদের উদ্বেগ দূর করতে এবং একটি সুরক্ষিত ভ্রমণের পরিবেশ দেওয়ার জন্য অপারেশন মহিলা সুরক্ষার অধীনে একটি প্রচার শুরু করেছে।

২০২৪ সালের অগাস্ট মাস জুড়ে, পূর্ব রেলওয়ের আরপিএফ বাহিনী বিভিন্ন ট্রেনের মহিলা কামরায় নিয়মিত ভাবে  নিখুঁত অভিযান চালিয়েছিল, সেই বগিগুলিতে অবৈধভাবে ভ্রমণকারী পুরুষ যাত্রীদের গ্রেফতার ও বিচার করেছিল। এই এক মাসে রেলওয়ে আইনের ১৬২ ধারায় মোট ১,৭৭৪ জন অপরাধীকে গ্রেফতার ও মামলা দায়ের করা হয়েছে এবং ৩,২৪,৪৫০ টাকা জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পূর্ব রেলের পক্ষ থেকে স্পষ্ট জানিয়ে দেওয়া হয়েছে, মহিলা যাত্রীদের নিরাপত্তা ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ  করে এমন নিয়ম লঙ্ঘন করলে কাউকে বরদাস্ত করা হবে না।

আরও পড়ুন– চ্যালেঞ্জ সিপি-কে ! সংগ্রামী ভাতা ঘোষণা শুভেন্দুর, কেন, কারা পাবেন ভাতা?

নারী ও শিশু সুরক্ষার জন্য যেসব  মূল পদক্ষেপগুলি বাস্তবায়িত করা  হয়েছে, সেগুলি নিম্নরূপ :

১. ট্রেন এসকর্ট এবং নজরদারি:

১২টি মহিলা ইএমইউ স্পেশাল ট্রেন-সহ ৩৩৯টি ট্রেনে নিয়মিত যাতায়াত করেন আরপিএফ জওয়ানরা। ৭৪টি এক্সপ্রেস ট্রেনে পুরুষ ও মহিলা আরপিএফ কর্মীরা যৌথভাবে সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেন। নেটওয়ার্ক জুড়ে ১৭০ টি স্টেশনে মোট ৩,৮৯৪টি সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে, বিশেষত মহিলা যাত্রীদের  সুরক্ষার জন্য আরপিএফ দ্বারা ৮৭ টি স্টেশনে ২,২৬৫ টি ক্যামেরা মাধ্যমে সক্রিয়ভাবে পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে।

২. যাত্রী সচেতনতা এবং সংবেদনশীলতা:

সুরক্ষা প্রোটোকল এবং সুরক্ষা ব্যবস্থা সম্পর্কে সচেতনতা বাড়াতে স্টেশনে, ট্রেনে এবং স্কুল ও কলেজের মতো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মহিলা যাত্রীদের সচেতনতা প্রচার নিয়মিতভাবে পরিচালিত হয়।

আরও পড়ুন– ‘নিরামিষ’ নয়, মুখ্যমন্ত্রীর বিরুদ্ধে এবার বিরাট আন্দোলনের প্রস্তুতির কথা জানালেন শুভেন্দু অধিকারী

৩. উন্নত পর্যবেক্ষণ:

ট্রেন এসকর্ট এবং যাত্রী ইন্টারফেস অপারেশন চলাকালীন আরপিএফ কর্মীদের ১২৭ টি পরিধানযোগ্য ক্যামেরা সরবরাহ করা হয়েছে যা সুরক্ষা পরিস্থিতির রিয়েল-টাইম পর্যবেক্ষণের অনুমতি দেয়।

৪. একক মহিলা ভ্রমণকারীদের জন্য বিশেষ সহায়তা:

৮৮টি ট্রেনে একা যাতায়াতকারী মহিলাদের সহায়তার জন্য ১৫টি স্টেশনে ‘মেরি সহেলি’ দল মোতায়েন করা হয়েছে। যার ফলে মহিলা যাত্রীরা একা হওয়া সত্ত্বেও সম্পূর্ণ যাত্রা সুরক্ষিত ও নিরাপদ ভাবে যাত্রা করতে পারেন।

৫. মাতঙ্গিনী স্কোয়াড:

শহরতলির অঞ্চলগুলিতে প্রায় ২৫টি স্টেশনে যেখানে দৈনিক মহিলা যাত্রীদের যাতায়াত বেশি সেখানে ‘মাতঙ্গিনী স্কোয়াড’ মোতায়েন করা হয়েছে যারা সুনিশ্চিত করে মহিলা যাত্রীদের সুরক্ষা।

৬. শিশু উদ্ধার ও পাচার বিরোধী অভিযান:

অভাবী শিশুদের সাহায্য ও উদ্ধারের জন্য (হাওড়া, শিয়ালদহ, আসানসোল, মালদা টাউন, ভাগলপুর, সাহেবগঞ্জ) ছয়টি চাইল্ড হেল্প ডেস্ক চালু রয়েছে। ব্যান্ডেল, বর্ধমান, বোলপুর শান্তিনিকেতন এবং জামালপুরে চারটি অতিরিক্ত হেল্প ডেস্ক স্থাপনের প্রক্রিয়া চলছে। শুধু অগাস্ট মাসেই অপারেশন নানহে ফারিশতের আওতায় ১২৫ জন শিশুকে (৮৮ জন ছেলে ও ৩৭ জন মেয়ে) উদ্ধার করে পুনর্বাসনের জন্য শিশু কল্যাণ কমিটির কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। অপারেশন এএএইচটি (মানব পাচার রোধ)-এর অঙ্গ হিসেবে শিয়ালদহ, হাওড়া, মালদা টাউন এবং আসানসোলের আরপিএফ পোস্টগুলিতে ৭১টি বিশেষ দল গঠন করা হয়েছে। যারা অগাস্ট মাসে ৯ জন কিশোরকে উদ্ধার ও ৫ জন পাচারকারীকে গ্রেফতার করেছে ।
আরপিএফ উপস্থিতি আরও জোরদার করা হয়েছে।

মহিলা যাত্রীদের মধ্যে নিরাপত্তার ভাব জাগিয়ে তুলতে পূর্ব রেলওয়ের বড় বড় স্টেশনগুলিতে আরপিএফ কর্মীদের উপস্থিতি উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ানো হয়েছে। এই সক্রিয় পদক্ষেপটি যে কোনও সম্ভাব্য দুর্বৃত্তকে প্রতিরোধ করে এবং যাত্রীরা তাদের ভ্রমণের সময় যাতে নিরাপদ বোধ করে, তা সুনিশ্চিত করে।

পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক কৌশিক মিত্র জানিয়েছেন, ‘‘পূর্ব রেল মহিলা ও শিশু যাত্রীদের উপর বিশেষ আলোকপাত করেছে যা যাত্রীদের সুরক্ষা, মর্যাদা এবং স্বাচ্ছন্দ্যভাব বজায় রাখার জন্য সম্পূর্ণরূপে নিবেদিত। এই বিস্তৃত পদক্ষেপগুলি সকলের জন্য একটি সুরক্ষিত এবং বিশ্বাসযোগ্য পরিবেশ সরবরাহের প্রতিশ্রুতিকে প্রতিফলিত করে।’’