‘নাটক’ ও ‘সেলফিশ’ মন্তব্য করে বিপাকে দিলীপ ঘোষ এবং অশোক দিন্দা

Dilip Ghosh-Ashok Dinda: ‘নাটক’ ও ‘সেলফিশ’ মন্তব্য করে বিপাকে দিলীপ-অশোক ! কড়া বার্তা বঙ্গ বিজেপির

ভেঙ্কটেশ্বর লাহিড়ী, কলকাতা: একজন বলেছিলেন ‘নাটক’। আর অন্যজন বলেছিলেন ‘সেলফিশ’ আন্দোলন। আরজি কর ইস্যুতে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে দুই বঙ্গ বিজেপি নেতার বক্তব্যে তুমুল বিতর্ক তৈরি হয়। পাল্টা আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকাও বিজেপি নেতাদের নিশানা করেন। যদিও রাজ্য বিজেপি নেতৃত্ব প্রথম দিন থেকেই আরজি কর ইস্যুতে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে নৈতিক সমর্থন জানিয়ে আসছেন। কিন্তু দুই বিজেপি নেতার বক্তব্য নিয়ে রীতিমত অস্বস্তিতে পড়ে বঙ্গ পদ্ম শিবির।

দুই বিজেপি নেতা হলেন দিলীপ ঘোষ আর অশোক দিন্দা। একজন দলের প্রাক্তন সভাপতি তথা প্রাক্তন সর্বভারতীয় সহ-সভাপতি আর অন্যজন দলীয় বিধায়ক। বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদার থেকে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীরা প্রথম দিন থেকেই জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনকে পূর্ণ সমর্থন জানিয়ে আসছেন। বিজেপির এ রাজ্যের প্রধান মুখপাত্র তথা রাজ্যসভার সাংসদ শমীক ভট্টাচার্য কার্যত স্পষ্ট বুঝিয়ে দিয়েছিলেন যে দিলীপ ঘোষ কিংবা অশোক দিন্দার বক্তব্যকে দল অনুমোদন করে না।

আরও পড়ুন– শক্তি খুইয়ে দুর্বল নিম্নচাপ, আবহাওয়ার কিছুটা উন্নতি হবে, ফের বৃষ্টি বাড়বে কবে থেকে? জেনে নিন

দলের দুই নেতার তরফে জুনিয়র চিকিৎসকদের সমালোচনা তাঁরা কোন পরিপ্রেক্ষিতে করেছেন তা তাঁর জানা নেই বলে শমীক মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘ব্যক্তিগত মত কেউ প্রকাশ করতেই পারেন।’’ আর এবার বৃহস্পতিবার সল্টলেক অফিসে বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে আগামী দিনে আন্দোলনের রণকৌশল-সহ অন্যান্য বিষয়ে আলোচনার পাশাপাশি এই প্রসঙ্গও উঠে এসেছে বলে বিজেপি সূত্রের খবর।‌ সুকান্ত মজুমদার, মঙ্গল পান্ডে, অমিত মালভিয়া-সহ বৈঠকে অন্যান্য বিজেপি পদাধিকারীদের উপস্থিতিতেই পদ্ম নেতৃত্ব স্পষ্ট জানায়, জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলন নিয়ে কোনও সমালোচনা নয়। দলের নীতির বাইরে গিয়ে কোনও মন্তব্য করা যাবে না, এ ব্যাপারে শুধুমাত্র দলীয় মুখপাত্ররাই যা বলার বলবেন বলে বৈঠকে মন্তব্য করা হয় বলে সূত্রের খবর।

আরও পড়ুন- ‘ভুয়ো জিএসটির মাধ্যমে কোটি কোটি টাকার দুর্নীতি হয়েছে…’ বিস্ফোরক অভিযোগ সুকান্তর

রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকদের একাংশের মতে, বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকে পদ্ম নেতৃত্বের এই কড়া বার্তা এক প্রকার দিলীপ ঘোষ ও অশোক দিন্দাদের উদ্দেশ্যেই দেওয়া হয়। কারণ বিজেপি নেতারা মনে করেন, জুনিয়ার চিকিৎসকদের আন্দোলনের সঙ্গে একটা বিরাট অংশের সাধারণ মানুষের যোগসূত্র রয়েছে। জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে বিজেপির কেউ যদি সমালোচনা করেন তাহলে তার কুপ্রভাব দলে পড়তে পারে। আর এই কারণেই ‘সতর্ক’ বঙ্গ বিজেপি।

প্রসঙ্গত, আরজি কর ইস্যুতে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলন নিয়ে দিলীপ ঘোষ থেকে দলীয় বিধায়ক অশোক দিন্দা একাধিক প্রশ্ন তুলে সমালোচনা করেছিলেন। সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে বর্ধমানে দিলীপ বলেছিলেন, ‘‘রাত জাগার পর আরজি করের যে ঘটনা তার কি কোনও পরিবর্তন হল? ডাক্তারদের আন্দোলনের জেরে ক’জন দোষী সাজা পেয়েছে? যাদের পদত্যাগ চেয়েছেন ওনারা, তারা প্রমোশন পেয়েছে। পিছন থেকে এই আন্দোলনকে যারা চালাচ্ছে তারা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে বাঁচানোর জন্য এসব নাটক করছেন না তো? রাত জাগো, চলো রাতের বেলা একটু বাতি জ্বালিয়ে ছবি তুলে চলে আসি, এইজন্য কি দেড় মাস ধরে বাংলার মানুষ কষ্ট পেল?’’

একদিকে যখন দিলীপ ঘোষ এই একাধিক প্রশ্ন তোলেন তখন অন্যদিকে ময়নার বিজেপি বিধায়ক অশোক দিন্দা সংবাদমাধ্যমকে বলেছিলেন, ‘‘জুনিয়র চিকিৎসকরা যে আন্দোলন করেছেন তাঁরা তা নিজেদের স্বার্থের কথা ভেবে করেছেন। আরজি কর কাণ্ডে ফাঁসি কিম্বা অন্যান্য দাবি-দাওয়া ছিল না জুনিয়ার চিকিৎসকদের।‌ ওঁদের আন্দোলন ছিল ‘সেলফিশ’ আন্দোলন।’’