ব্যবসা-বাণিজ্য Value Of Money: ২০-৩০ বছর আগে জমানো ১ কোটি টাকার মূল্য এখন কোন তলানিতে এসে ঠেকেছে ভাবতেও পারবেন না! Gallery September 30, 2024 Bangla Digital Desk মুদ্রাস্ফীতি এমন একটি বিষয়, যার কারণে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে টাকার মূল্য হ্রাস পায়, ফলে পণ্য ও পরিষেবার মূল্য বৃদ্ধি পায়। আমরা যখন শুনতে পাই যে মুদ্রাস্ফীতি বেড়েছে, তার মানে জিনিসপত্র কেনার ক্ষমতা কমে গিয়েছে। উদাহরণস্বরূপ দেখা যেতে পারে ২০ বছর আগে ১০০ টাকায় আমরা যে জিনিস ক্রয় করতে পারতাম, বর্তমান সময়ে সেই সব কিছুই অনেক দামি হয়ে গিয়েছে। এর মানে হল এখন একই জিনিস ১০০ টাকা দিয়ে আর ক্রয় করা সম্ভব নয়। এরপর যদি ভবিষ্যতের দিকে তাকানো হয়, তাহলে বর্তমান সময়ে ১০০ টাকা দিয়ে যে জিনিসগুলি ক্রয় করা সম্ভব হচ্ছে, তা আগামী ২০ বছরের মধ্যে আরও দামি হয়ে উঠবে চোখ বুজে বলা যায়। মুদ্রাস্ফীতি হল এমনই একটি বিষয়, যা নিয়ে আমরা সকলেই চিন্তিত। এক নজরে দেখে নেওয়া যাক এই মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব কী ভাবে আমাদের সঞ্চিত তহবিলকেও প্রভাবিত করে তুলেছে। অর্থের মূল্য হ্রাস: বেতন এবং ক্রয় ক্ষমতা –অনেকেই সম্ভবত নিজেদের পরিবারের সদস্য, যেমন দাদামশায় এবং বাবার কাছ থেকে শুনেছেন যে, তাঁরা যখন কাজ করতেন, তখন তাঁদের বেতন অনেক কম ছিল, যা আজকের দিনে অনেক লোকই হেসে-খেলে উপার্জন করে। যদিও তাঁরা আজকের তুলনায় কম বেতন পেতেন, কিন্তু অভাব গ্রাস করত না, কেন না সেই সময় সেই অর্থের মূল্য অনেক বেশি ছিল। ফলে, আমরা আজ যা ক্রয় করতে পারি তার তুলনায় তাঁরা একই পরিমাণ টাকা দিয়ে অনেক বেশি জিনিস ক্রয় করতে পারতেন। উদাহরণস্বরূপ দেখা যেতে পারে যে, ১৯৫০ সালে সোনার দাম ছিল মাত্র ৯৯ টাকা প্রতি ১০ গ্রাম এবং আজ, ২০২৪ সালে, এটি প্রায় ৭৮,০০০ টাকায় পৌঁছেছে। যদি আমরা এটিকে আয়ের সঙ্গে সম্পর্কিত করি, তাহলে ১৯৫০ সালে যদি কেউ প্রতি মাসে ২০০ টাকা উপার্জন করে, তাকে একই ক্রয় ক্ষমতার জন্য এখন প্রতি মাসে ১.৫ লাখ টাকার বেশি উপার্জন করতে হবে। এটি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় যে, কীভাবে মুদ্রাস্ফীতি বছরের পর বছর ধরে টাকার মূল্যকে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করেছে। এর থেকে, আমরা দেখতে পাচ্ছি যে, ১৯৮০-এর দশকে একজন লাখপতি (যার নেট মূল্য লক্ষাধিক) যা কিনতে পারত, তা এখন প্রায়শই একজন কোটিপতিওর নাগালের বাইরে (১ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে)। এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হিসাবে কাজ করতে পারে। তাই ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করার সময়, অর্থের ভবিষ্যতের মূল্য বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভবিষ্যতে এই মুদ্রাস্ফীতি কোন দিকে যেতে পারে, তা আমাদের কারও জানা নেই। প্রায়শই, যখন আমরা ফিক্সড ডিপোজিট (FDs) বা অন্যান্য আর্থিক স্কিমে বিনিয়োগ করি, তখন আমরা আজকের প্রেক্ষাপটে আমাদের বিনিয়োগের মূল্য সম্পর্কে চিন্তা করি। আমরা এই বিষয়টি উপেক্ষা করি যে, ২০ বছরে আমরা যে অর্থ পাব, তাতে মুদ্রাস্ফীতি কারণে একই ক্রয় ক্ষমতা থাকবে না। সুতরাং বিনিয়োগ করার সময়ে এই মুদ্রাস্ফীতির বিষয়টি মাথায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ১ কোটি টাকার মূল্য –মুদ্রাস্ফীতির প্রভাব বোঝাতে, দুটি পরিস্থিতি বিবেচনা করে দেখা যাক। ধরা যাক, একজন ব্যক্তির ২০ বছর আগে ১ কোটি টাকা ছিল এবং অন্য ব্যক্তির ১ কোটি টাকা ছিল ৩০ বছর আগে, এবার আমরা ২০২৪ সালে সেই টাকার বর্তমান মূল্য বিশ্লেষণ করব, গড় বার্ষিক মুদ্রাস্ফীতির হার ৫% ধরে নিয়ে। -সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ১ কোটি টাকার মূল্য হ্রাসই পাবে –-২০ বছর আগে (২০০৪ সালে):-মূল পরিমাণ: ১ কোটি টাকা-বর্তমান মূল্য (২০২৪): আনুমানিক ৩৮ লাখ টাকা-কারণ: বিগত ২০ বছরে মুদ্রাস্ফীতির কারণে ১ কোটি টাকার ক্রয় ক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। -৩০ বছর আগে (১৯৯৪ সালে):-মূল পরিমাণ: ১ কোটি টাকা-বর্তমান মূল্য (২০২৪): আনুমানিক ২৩,২০,০০০ টাকা-কারণ: একইভাবে, ৩০ বছর আগের থেকে ১ কোটি টাকার মূল্য উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। যা তিন দশক ধরে মুদ্রাস্ফীতির প্রভাবকে চিত্রিত করে। – ২০০৪ সালের ১ কোটি টাকা আজ প্রায় ৩৮ লাখ টাকার সমান।– ১৯৯৪ সালের ১ কোটি টাকা আজ প্রায় ২৩,২০,০০০ টাকার সমান। এই হিসেব থেকেই আমরা বুঝতে পারব যে, কীভাবে মুদ্রাস্ফীতি সময়ের সঙ্গে সঙ্গে অর্থের মূল্যকে হ্রাস করে দেয়। তাই ভবিষ্যতের জন্য আর্থিক পরিকল্পনা করার সময় এগুলি বিবেচনা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।