অসুরের চরিত্রে অভিনয় করেই জনপ্রিয় হন অমল চৌধুরী৷

Amal Asur: অনটন আর একাকীত্বই এখন সঙ্গী, মহালয়ার সকালে মন খারাপ অমল অসুরের

জিয়াউল আলম, অশোকনগর: বৃদ্ধ হয়েছেন অসুর! দূরদর্শনের পর্দায় মা দুর্গার সঙ্গে প্রবল বিক্রমে যুদ্ধ করতেন যিনি, সেই মানুষটির মহালয়ার সকালই আজ সম্পূর্ণ বদলে গিয়েছে৷ দিন কাটছে একাকী, প্রবল অনটনে৷

একসময় মহালয়ার মাসখানেক আগে থেকেই তাঁর কদর বেড়ে যেত৷ ব্যস্ততা থাকত তুঙ্গে৷ কারণ দূরদর্শনের পর্দায় অসুর রূপে অভিনয় করার জন্য তিনিই ছিলেন পরিচিত মুখ৷ এলাকার মানুষও তাঁকে চিনতেন অমল অসুর নামে৷ মহালয়ার সকালে টিভি-র পর্দায় তাঁর অভিনয় দেখার জন্য মুখিয়ে থাকতেন উত্তর চব্বিশ পরগণার অশোকনগর এলাকার বাসিন্দারা৷

আরও পড়ুন: ‘রাজনীতি ছেড়ে দেব!’ গভীর রাতে হঠাৎ হুঁশিয়ারি তৃণমূল বিধায়কের, তুমুল জল্পনা

আসল নাম অমল চৌধুরী৷ কিন্তু অশোকনগরের সংহতি পার্ক এলাকার বাসিন্দারা তাঁকে চেনেন অমল অসুর নামে৷ কারণ বছরের পর বছর দূরদর্শনের মহালয়ায় অসুরের ভূমিকায় অভিনয় করেই বিখ্যাত হয়েছিলেন তিনি৷ শুধু অসুরের চরিত্রে অভিনয় নয়, টালিগঞ্জের স্টুডিওপাড়াতেও সিনেমা, সিরিয়ালে ছোটখাটো বহু চরিত্রে অভিনয় করেছেন অমলবাবু৷ মূলত নেগেটিভ চরিত্রে অভিনয় করেই স্টুডিওপাড়ার পরিচিত মুখ হয়ে উঠেছিলেন তিনি৷

কিন্তু বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে শিল্পী হিসেবে অমলবাবুর কদর কমতে থাকে৷ একসময় স্টুডিওপাড়ার সঙ্গে যোগাযোগই ছিন্ন হয় তাঁর৷ শুধু পেশাদারি ক্ষেত্রে নয়, ব্যক্তিগত জীবনেও বড় ধাক্কা খান এই অভিনেতা৷ অবিবাহিত অমলবাবু একে একে বাবা, মা, দাদা, দিদি- সবাইকেই হারিয়েছেন৷ বর্তমানে অশোকনগরের সংহতি পার্ক এলাকায় টিনের চাল দেওয়া ছোট্ট বাড়িতে একাই দিন কাটে তাঁর৷ অসুস্থ শরীরেই কোনওক্রমে গ্যারাজে গ্যারেজে মাঝে মধ্যে গাড়ির নম্বর লিখে বা ছবি এঁকে কোনওক্রমে দিন কাটছে তাঁর৷ একাকীত্বের সঙ্গে দারিদ্রের সঙ্গেও লড়াই করতে হচ্ছে তাঁকে৷

মহালয়ার দিন সকাল থেকে পুরনো কথা মনে পড়ে ভারাক্রান্ত অমলবাবুর মন৷ প্রবীণ অভিনেতা বলেন, ভোরে ঘুম থেকে উঠে রেডিওয় মহালয়া শুনেছি৷ তারপর ট্রাঙ্ক থেকে পুরনো দিনের ছবি বের করে দেখলাম৷ সবাই সহযোগিতা করলে হয়তো আবার আগের মতো অভিনয়ের জগতেই ফিরতে পারতাম৷

একসময় মহালয়ার দিন টিভি-তে তাঁর অভিনয় দেখে বাড়িতে ভিড় জমাতেন বহু মানুষ৷ মহালয়ার সকালে অমলবাবুর স্মৃতিতে ভেসে আসছিল সবই৷ টিভির পর্দায় দাপিয়ে অসুরের চরিত্রে অভিনয় করা সেই অমল অসুরই আজ বড় অসহায়৷ কেউ তাঁর খোঁজ নিতে আসবেন, এই আশাতেই ফ্যালফ্যাল করে বাড়ির দরজার দিকে চেয়ে থাকেন তিনি৷