বুদ্ধদেব বেরা, ঝাড়গ্রাম : রক্তমুখী দেবী কনকদুর্গা পুজোর দিনগুলিতে তন্ত্রমতে ষোড়শোপচার দুর্গা রূপে পুজিত হয়। পুজোর দিনগুলিতে দেবীকে সিদ্ধ হাঁসের ডিম, কালো পাঁঠার মাংস, মাছ পোড়া, পান্তা ভাত নিবেদন করা হয় । প্রায় পাঁচশো বছর প্রাচীন দেবী কনকদুর্গার মন্দিরে এই ভাবেই পুজিত হয়ে আসছেন দেবী দুর্গা । প্রতিবছর এখানে দুর্গা পুজো দিতে বহু মানুষের সমাগম হয়। ঝাড়গ্রাম জেলার জামবনি ব্লকের চিল্কিগড়ে নিরবচ্ছিন্ন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে দেবী কনকদুর্গার মন্দির। এটি একটি পর্যটন স্থল হওয়ায় সারা বছর এখানে পর্যটকের ভিড় দেখা যায়।
চিল্কিগড়ের রাজা মত্তগজ রাজবংশের গোপীনাথ সামন্ত ডুলুং নদীর তীরে চিল্কিগড়ের গভীর জঙ্গলের মধ্যে দেবী কনকদুর্গার মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন বলে দাবি স্থানীয়দের। দেবী এখানে রক্তমুখী অশ্বারোহী খড়গধারিণী চতুর্ভুজা। দুইবার দেবীর বিগ্রহ চুরি হয়ে যায়। বর্তমানে অষ্ট ধাতু দিয়ে নির্মিত দেবীর বিগ্রহ রয়েছে মন্দিরের ভেতরে। মন্দিরে নিয়মিত দেবী কনকদুর্গার পুজো করা হয় । ওড়িশা থেকে আগত সড়ঙ্গী পুরোহিতরা বংশপরম্পরায় দেবীর পুজো করে আসছেন।
ডুলুং নদী থেকে ঘট উওোলনের মধ্যেদিয়ে বেলবরণের দিন থেকেই তন্ত্র মতে ষোড়শোপচারে দেবীকে দশভুজা দেবী দুর্গা রূপে পুজো করা শুরু হয়ে যায়। সপ্তমী থেকে নবমী পর্যন্ত দেবীতে সকল ,দুপুর ,রাত তিন বেলা অন্ন ভোগ ও রাতের ভোগ নিবেদন করা হয়। গুঞ্জ্ভোগে থাকে পায়েস ,লুচি ,মিষ্টি , লাড্ডু, ঘি ভাত, পাঁচ রকম সবজির ভাজা এবং সিদ্ধ হাঁসের ডিম দেওয়া হয়। অন্নভোগে ভাত, ডাল,পাঁচ ধরনের সবজির ভাজা, চুনা মাছের ভাজা-সহ বিভিন্ন ধরনের মাছের ঝোল, পাপড়, মিষ্টি, চাটনি দেওয়া হয়। এছড়াও রাতের ভোগে লুচি, মিষ্টি,পায়েস দেওয়া হয় দেবীকে। এর মধ্যে বিশেষ ভোগটি হল বিরামভোগ।
মান্দিরের পিছনে রয়েছে মন্দিরের রান্নাঘর। সেখানে এমন একটি ঘরের মধ্যে কেবলমাত্র একটি মাটির উনুন রয়েছে। সেখানে নতুন মাটির একটি হাঁড়িতে পাঁঠার মাংস যাবতীয় মশলা দিয়ে হাঁড়ির মুখ বন্ধ করে উনুনে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়। তারপর বাইরে থেকে রান্নাঘরের দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়ে চাবি রাজবাড়িপাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরের দিন নবমীতে সকাল থেকে বলি শুরু হয়ে যায় মন্দির প্রাঙ্গণে। বলি শেষ হলে রাজবাড়ি থেকে রান্নাঘরের চাবি নিয়ে এসে রান্নাঘর খুলে দেবীকে ভোগ নিবেদন করা হয়। দশমীতে এখানে দেবীকে পান্তা ভাত ও পোড়া মাছ নিবেদন করা হয়। পুজোর এই কয়েকটা দিন এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি পর্যটকের ভিড় জমে চিল্কিগড়ে।
মন্দিরের পুরোহিত গৌতম সড়ঙ্গী বলেন , ” দেবীকে পুজোর এই দিন গুলিতে তন্ত্র মতে দেবী দুর্গার ষোড়শোপচারে পুজো করা হয়। দীর্ঘদিন ধরে যে রীতিনীতি অনুযায়ী দেবীকে পুজো করা হয় সেই নীতি মেনেই আজও পুজো করা হয়”। চিল্কিগড় কনকদুর্গার মন্দির ওয়েলফেয়ার কমিটির সদস্য তথা সিকিউরিটি ইনচার্জ মানস জানা বলেন, “পুজোর দিনগুলিতে প্রচুর মানুষের এখানে সমাগম হয়। জামবনি থানার সহযোগিতায় প্রতি বছর আমরা সুষ্ঠুভাবে মানুষের মন্দির পরিদর্শনে ব্যবস্থা করে থাকি। এই বছর মেডিক্যাল টিমেরও ব্যবস্থা থাকছে মন্দির প্রাঙ্গণে”।