হাওড়া: শিশুদের হাতে সূচনা হওয়া পুজো এখন গ্রামের মানুষেরা প্রাণকেন্দ্র! সে প্রায় ৩৫-৩৬ বছর আগের কথা। তখন দুর্গা পুজো আয়োজন মানে বহু গ্রামেই অসাধ্য প্রায়। তাই বহু গ্রামের মানুষ দুর্গাপুজোর পূর্ণ উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হত। দুর্গাপুজোর উৎসবে শামিল হতে বহুদূর পৌঁছে যেত। হাওড়া শহরের অদূরে সাঁকরাইল ব্লকের অন্তর্গত কান্দুয়া গ্রাম। এই গ্রামে দুর্গাপুজোর রেওয়াজ বহুকাল থেকে। বড়গ্রাম বেশ কয়েকটি পুজো অনুষ্ঠিত হয়। তেমনি কান্দুয়া দাস পাড়ার মানুষকে পুজোর অংশগ্রহণ করতে বেশ কিছুটা দূর যেতে হত।
গ্রামেরই একটি পুজো মণ্ডপে পুজোর আনন্দে সামিল হত কান্দুয়া দাস পাড়ার মানুষ। তবে তার মধ্যে পাড়ার কয়েক জন শিশু খেলার ছলে কাদা তুলে দুর্গা প্রতিমা গড়ে। সেই পুজো বর্তমানে গ্রামের অন্যতম পুজো। যেমন এলাকার মানুষ এই পুজোর আনন্দে মেতে ওঠে তেমনি বহু বাড়িতে আত্মীয় স্বজন আসে এই পুজো উপলক্ষে।
আরও পড়ুন: ভয়াবহ স্মৃতি ভুলে দুর্গাপুজোর আমেজ ফিরল হাওড়ার উদয়নারায়ণপুর! কী ঘটেছিল?
হাতেগড়া কাদার প্রতিমা, প্রতিবার জন্য তৈরি হতো পাতার ছোট্ট মণ্ডপ। নিজে হাতে প্রতিমা গড়া থেকে পুরোহিতের দ্বায়িত্ব সামাল দিতে সে সময়ের ছোট্ট গৌতম। সূচনা বছরের পর থেকে পাড়ার প্রিয় মানুষদের থেকে ৫-১০ পয়সা করে চাঁদা তুলে সব মিলিয়ে হাতে মিলত কয়েক টাকা। তাতেই সে সময় দুর্গা পুজো জমে উঠত ওদের। প্রতিবছর দুর্গাপুজোয় এভাবেই আয়োজন হত। পুজোর আয়োজনে শিশুদের মধ্যে প্রধান ছিল গৌতম। যদিও ধীরে ধীরে পুজোর সঙ্গী বৃদ্ধি হতে থাকে। সেই ছোট্টবেলার পুজো প্রাঙ্গণ এখন গ্রামের মানুষের প্রাণ কেন্দ্র। সে সময় ৫-৭ জন খুদেদের পুরো এখন সদস্য সংখ্যা শতাধিক ছড়িয়েছে। সেখানেই এখন মহাসমারহে পুজোর আয়োজন ৮ থেকে ৮০ বয়সের মানুষ পুজোর কটা দিন দারুণ আনন্দ উপভোগ করেন। কান্দুয়া রয়েল ক্লাবের পুজো গৌতমে’র পুজো নামেও পরিচিত।
আরও পড়ুন: পুজো মণ্ডপের সেলফি জোনেই আসল মজা! কী হচ্ছে সেখানে? জানলে চমকে যাবেন
মণ্ডপে বিশাল সাবেকি প্রতিমা, একই সঙ্গে মণ্ডপ সেজে উঠেছে চোখ জুড়ানো আলোকসজ্জা ও নানা সাজে সেজেছে মণ্ডপ। পুজো উপলক্ষে কয়েকদিন ব্যাপী বিভিন্ন অনুষ্ঠান। অসহায় মানুষকে পোশাক উপহার একইসঙ্গে স্থানীয় মানুষকে সুস্থ রাখতে ডেঙ্গুর প্রকোপ থেকে বাঁচাতে মশারি প্রদান। সবমিলিয়ে যেমন উৎসব তেমনই সকলে ঐক্যবদ্ধ হয়ে সামাজিক কর্মসূচিতেও অংশগ্রহণ গৌতম মিত্র। এ প্রসঙ্গে পুজো উদ্যোক্তা গৌতম মিত্র জানান, এলাকার মানুষের এই পুজো সারা বছরের অপেক্ষার। সে সময়ের ছোট্ট পুজো এত বড় আকার ধারণ করবে তা স্বপ্নেও ভাবিনি। তখন কাঁদার প্রতিমা মান পাতার মণ্ডপ। সেই মণ্ডপে আমরা কয়েকজন শিশু সদস্য থাকতাম। মণ্ডপে ছোট্ট লন্ঠন জলে আলো দিত। আলোকসজ্জা এলাকার সমস্ত মানুষ হাজির হয় এই মণ্ডপে।
রাকেশ মাইতি