বাঁকুড়া: চতুর্থ শতকের গুপ্ত আমলের শিলালিপি বাঁকুড়ার পাহাড়ে। রাজস্থানের সিংহ বর্মণের অজেয় পুত্র চন্দ্র বর্মণ আসেন বাঁকুড়ার শুশুনিয়া। এখানে পাহাড়ে ব্রাহ্মী খরোষ্ঠী লিপিতে, বিষ্ণু চক্রের নিচে লেখা রয়েছে দু’টি পংক্তি, যার রয়েছে গভীর অর্থ।
এই দুই পংক্তিকে ঘিরে দেশব্যাপী ঐতিহাসিকদের গবেষণা এবং আলাপ আলোচনা। ভারতের দুর্লভ এমন লিপি! অজেয় এই রাজা চন্দ্র বর্মণের শিলালিপি পাওয়া যায়, দিল্লির মেহরলি লৌহস্তম্ভতে, এলাহাবাদ প্রশস্তিতে এবং রয়েছে প্রান্তিক জেলা বাঁকুড়ার “প্রাগৈতিহাসিক” ভূখণ্ড শুশুনিয়া পাহাড়ের একটি দুর্গম জায়গায় রয়েছে সিংহ বর্মণের ছেলে চন্দ্র বর্মণের উল্লেখ।
শুশুনিয়া থেকে ৩৮ কিলোমিটার দূরত্বে, পখন্না গ্রামে রাজধানী স্থাপন করেন চন্দ্র বর্মণ। কী লেখা রয়েছে সেই লিপিতে জানলে আপনি অবাক হবেন। ইতিহাস গবেষক সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, “বিষ্ণুরূপাচক হচ্ছেন রাজা চন্দ্র বর্মণ, যা ফুটে উঠেছে প্রথম পংক্তিতে। দ্বিতীয় পংক্তিতে রয়েছে বিষ্ণুর উপাসনার জন্য গ্রাম দান করা হয়েছে।”
আরও পড়ুন: সন্দীপ ঘোষ সব জানেন? তদন্তকারীদের হাতে আরও চাঞ্চল্যকর তথ্য? জেলে গিয়ে জেরা শুরু তদন্তকারীদের
বাঁকুড়া জেলার শুশুনিয়া পাহাড়। সমগ্র জেলার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ পর্যটন কেন্দ্রগুলির মধ্যে অন্যতম হল শুশুনিয়া পাহাড়। শুশুনিয়া পাহাড়টি একটি ঐতিহাসিক মূল্যবান সমৃদ্ধি। এই গ্রামের পাশ দিয়েই পাহাড়ের কোলে একটি শিলালিপি রয়েছে, যা পশ্চিমবঙ্গের ‘প্রাচীনতম’ শিলালিপি হিসাবে বিবেচিত। রাজা চন্দ্রবর্মণের শিলালিপি বলে পরিচিত এই শিলালিপি।
শুশুনিয়া পাহাড়ের একটি দুর্গম স্থানে অবস্থিত এই শিলালিপি। প্রাচীন এই শিলালিপিতে রয়েছে দুটি অংশ। ‘চক্র’ বা চাকা এবং একটি লিপি। পাহাড়ের এই দুর্গম অংশ থেকে দেখতে পাওয়া যাবে দূর-দূরান্ত পর্যন্ত। অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য মন জয় করবে প্রত্যেকের। তবে এই জায়গায় আসার আগে অবশ্যই সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে। যে রাস্তা দিয়ে উপরে উঠবেন সেটাকে রাস্তা বলাই বাহুল্য। আদতে একটি পাথুরে বক্র রেখা।
আরও পড়ুন: আচমকা বুক ধড়ফড় করে? শরীরের বড় ক্ষতির আগে জানুন, এই খনিজ অপরিহার্য
যদিও এই দুর্গম অঞ্চলেও ভিড় জমাচ্ছেন পর্যটকেরা। বলছেন কষ্ট করে উপরে আসা সার্থক হয়েছে। শিলালিপিটি প্রত্যক্ষ করার পর সব কষ্ট মুছে গিয়েছে। প্রাগৈতিহাসিক ভূখণ্ড শুশুনিয়া পাহাড়। শুশুনিয়া পাহাড়ের কোলে পর্যটনের কারণ ছাড়াও গবেষণার কারণে ভিড় জমান আগ্রহী মানুষেরা। বাঁকুড়া জেলার ইতিহাসের পাতায় বিশেষ ভূমিকা পালন করে এই শুশুনিয়া পাহাড়।
রাজা চন্দ্র বর্মণের শিলালিপি সেই ঐতিহাসিক গুরুত্বকে অন্য পর্যায়ে পৌঁছে দিয়েছে। আবহাওয়ার পরিবর্তন হচ্ছে! সবে পুজো পেরিয়েছে, এবার শীতের পালা! তাই দোনামনা না করে, চলে আসুন শুশুনিয়া পাহাড়ের এই ইতিহাস খুঁজতে। আশা করি হতাশ হবেন না।
সূত্র: ইতিহাস গবেষক সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায়, ঐতিহাসিক মহলে গ্রহণযোগ্যতা প্রাপ্ত জয়ন্ত চক্রবর্তীর লেখা পুস্তক “ব্রাহ্মী থেকে বাংলা” এবং সুকুমার বন্দ্যোপাধ্যায় এর লেখা “দক্ষিণ-পশ্চিম রাঢ় পরিক্রমা”
নীলাঞ্জন ব্যানার্জী