ঝাড়গ্রাম : পাঁচ থেকে ছয় জন কারিগর একনাগাড়ে তৈরি করে চলেছে মুখরোচক সুস্বাদু জিলিপি। লক্ষ্মী পুজোকে কেন্দ্র করে জিলিপির মেলায় মেতে ওঠেন এলাকার মানুষজন। এক-দুই কুইন্টাল নয় প্রায় ১৬০০ কুইন্টাল জিলিপি বিক্রি হয় লক্ষ্মীপুজোর এই জিলিপির মেলায়। মেলার মধ্যে সমস্ত প্রকারের দোকান একাধিক থাকলেও জিলিপির দোকান থাকে মাত্র একটি। তাও আবার নিলামে নিতে হয় জিলিপির দোকান। ২ লক্ষ ৯০ হাজার টাকার বিনিময়ে বরাত পেয়েছেন জিলিপি এই দোকানের এক গ্রামবাসী। যুদ্ধকালীন তৎপরতার সঙ্গে চলছে জিলিপি তৈরি। লুটপাট এর মত বিক্রি হয়ে যাচ্ছে কেজি কেজি জিলিপি।
ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর ২ নম্বর ব্লকের হাড়দা গ্রাম পঞ্চায়েতের হাড়দা গ্রামে ১৬২ বছর ধরে চলে আসছে লক্ষ্মীপুজো। এখানে কেবল লক্ষ্মী নয় লক্ষ্মীর পাশাপাশি বিষ্ণুপুরাণ অনুযায়ী বিষ্ণুর দুই স্ত্রী হওয়ায় সরস্বতীরও আরাধনা করা হয়। পাঁচ দিন ধরে পুজো চলে আর এই পুজোকে কেন্দ্র করে মেতে থাকেন গ্রামবাসীরা। আর বিশেষ আকর্ষণ থাকে এখানকার জিলিপি।
চালের গুড়ি, বিরি গুড়ি দিয়ে তৈরি হয় এই জিলিপি। ১৫ থেকে ২০ দিন বাড়িতে রেখে খেলেও নষ্ট হয় না লক্ষ্মী পুজোর এই জিলিপি। জিলিপির টানে ঝাড়গ্রাম জেলার বিভিন্ন প্রান্তের পাশাপাশি পার্শ্ববর্তী জেলা বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, পশ্চিম মেদিনীপুর এবং পার্শ্ববর্তী রাজ্য ঝাড়খন্ড থেকেও বহু মানুষ জিলিপির টানে এখানে আসে। দোকানের বরাত যত টাকাই নেওয়া হোক না কেন জিলিপির দাম কিন্তু ১০০ টাকা প্রতি কেজি থাকে প্রতিবারেই। দোকানদার তার ইচ্ছে মতদাম ঠিক করতে পারে না লক্ষ্মীপুজোর কমিটি দাম ঠিক করে দেয়।
এবছর লক্ষ্মীপুজোয় জিলিপির দোকানের বরাত পেয়েছেন হাড়দা গ্রামের বাসিন্দা বীরেশ্বর মন্ডল। বীরেশ্বর বলেন,”লক্ষ্মীপুজোর সময় একমাত্র এই জিলিপি পাওয়া যায়, অন্যান্য সময় এই ধরনের জিলিপি পাওয়া যায় না। চালের গুড়ি, বিরি গুড়ি দিয়ে এই জিলিপি তৈরি করা হয়। ১৫ থেকে ২০ দিন বাড়িতে রেখে খেলোও জিলিপি টাটকা থাকে। এই বছর আমি দু’লক্ষ ৯০ হাজার টাকায় জিলিপির দোকানের বরাত পেয়েছি। প্রায় ১৬০০ কুইন্টাল এরও বেশি জিলেপি বিক্রি হবে”।
আরও পড়ুনঃ Lakshmi Puja 2024: এই গ্রামে লক্ষ্মী পুজোই প্রধান উৎসব! জাঁকজমক দেখলে অবাক হবেন
গত বছর যিনি বরাত নিয়েছিলেন তিনি পাঁচজন কারিগর নিযুক্ত করেছিলেন এবার আমি আর একজন বাড়িয়েছি। বিভিন্ন জায়গার মানুষের পাশাপাশি এখানে যে সমস্ত বাসিন্দারা রয়েছে তারা এই জিলিপি তাঁদের আত্মীয়-স্বজনদেরও পাঠায়। শারদউৎসবের চেয়েও বড় উৎসব লক্ষ্মীপুজো হাড়দা গ্রামের প্রায় ৫০০ টি সাহা ও মন্ডল পরিবারের। আর এই লক্ষ্মীপুজোয় মেতে ওঠে এলাকার বাসিন্দাদের পাশাপাশি দূর দূরান্তের বহু মানুষ। জিলিপির টানে ঝাড়গ্রাম বেড়াতে আসা পর্যটকরাও পৌঁছে যায় হাড়দার এই লক্ষ্মীপুজোয় ।
বুদ্ধদেব বেরা