রঘু ডাকাতের কালী মন্দিরের প্রতিমা

Kali Puja 2024: মায়ের ভোগপ্রসাদে আজও থাকে পোড়া ল্যাটামাছ! ‘রঘু ডাকাতের কালীমন্দিরে’ নিষ্ঠা মেনে পালিত হয় শ্যামাপূজা

রাহী হালদার, হুগলি: আজ থেকে প্রায় ৫০০ বছর আগের কথা। যে সাতটি গ্রাম নিয়ে তৈরি হয়েছিল আদি সপ্তগ্রাম বন্দর, তার একটি গ্রাম বাসুদেবপুর। সপ্তগ্রাম থেকে পাণ্ডুয়ার দিকে যেতে পূর্ব দিকে নেমে গিয়েছে এক পায়ে চলা পথ , এ পথ গিয়ে মিশেছে ত্রিবেণীতে, যেখানে বয়ে চলেছে পুণ্যতোয়া ভাগীরথী। সারাদিন ধরে বহু পুণ্যার্থী  যাতায়াত করেন এই পথ ধরে। ঘন জঙ্গলে ঢাকা এ পথ আপাতদৃষ্টিতে ছায়াসুনিবিড় হলেও ,ভুক্তভোগীরা জানেন এ পথ কত ভয়ঙ্কর !

কথিত, এ পথের উত্তর পারে বাঘটি গ্রামেই বাস ছিল রঘু ডাকাতের। এই রাস্তার পাশেই গহীন জঙ্গলের মধ্যে রয়েছে রঘু ডাকাতের ‘ডাকাতকালী মন্দির’। একচূড়াবিশিষ্ট ডাকাত কালীমন্দির বিখ্যাত রঘু ডাকাতের ভাই বুধো নামক এক ডাকাত প্রতিষ্ঠা করেন। বুধো ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত কালীমূর্তিটির বর্তমানে কোন অস্তিত্ব নেই। সাত ফুট উচ্চ বর্তমান বিগ্রহটির পদতলে শায়িত শিব। বুধো ডাকাতের প্রতিষ্ঠিত হলেও এই কালী বর্তমানে রঘু ডাকাতের কালী নামে জনপ্রিয় ও সিদ্ধেশ্বরী কালী হিসেবে পূজিতা হন।

কথিত ইতিহাস অনুযায়ী, বাগহাটির জয়পুরের বাসিন্দা বিধুভূষণ ঘোষ ও রঘু ঘোষ ঘন জঙ্গলের মধ্যে এই মূর্তিটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। তাঁরা দিনের বেলা ক্ষেতমজুরের কাজ করার পর রাতে এলাকার ধনী ও প্রভাবশালীদের বাড়িতে ডাকাতি করতে বেরত। রঘু ডাকাতের দলবল জঙ্গলের ভিতর দিয়ে যাতায়াতকারীদের গাছে দড়ি দিয়ে বেঁধে রাখত। ল্যাটামাছ পোড়া দিয়ে কালীর পুজো হত সেই সময়। বর্তমানেও মায়ের প্রধান ভোগ হিসেবে চলে আসছে সেই প্রথা।

আরও পড়ুন : ভাল লাগলেও ফুলকপি একদমই খাবেন না এঁরা! কারা শীতের এই সবজি খেলেই চরম বিপদ? কখন এটা খাওয়াই যাবে না? জানুন

মন্দিরে সেবায়েত সুমন চক্রবর্তী জানান এক ভয়ঙ্কর ডাকাতি হওয়ার পর মাকে আবার নতুন করে মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করা হয়। সেই বিগ্রহই এখনও পর্যন্ত পূজিত হয়ে আসছে। কথিত ইতিহাস থেকে জানা যায় তৎকালে কালীবাড়ি ভাগ হয়ে যায় দুটো দলে। এক , গেরস্থ কালীবাড়ি; আর দ্বিতীয় , কুখ্যাত ডাকাতকালীবাড়ি! একটা সময় ছিল যখন নরবলি ও ল্যাটামাছ পোড়া দিয়ে পুজো দিয়ে ডাকাতির উদ্দেশে রওনা দিতেন রঘু ডাকাত ও তাঁর দলবল। কালীপুজোর দিনে এখনও চল রয়েছে ল্যাটামাছ পোড়া দেওয়ার। আর তা মহাপ্রসাদ হিসেবে নিতে দূরদূরান্ত থেকে বহু ভক্ত এসে ভিড় জমান রঘু ডাকাতের কালীমন্দিরে।

আবার ও নতুন করে নির্মিত হচ্ছে সুপ্রাচীন এই কালীমন্দির। স্থানীয় এক বাসিন্দা কার্তিক ভৌমিক জানান ‘‘হাজার হাজার ভক্ত সমাগম হয় কালীপুজোর রাতে। নতুন ভাবে মায়ের মন্দিরে নির্মাণকার্য শেষ হলে প্রাচীন কথার মাহাত্ম্য মানুষের মনে গেঁথে থাকবে আরও সুদৃঢ় ভাবে।