কলকাতা: ঋতুপর্ণ ঘোষ একদা লিখেছিলেন মন খারাপ হলে কুয়াশা হয়। আবার, শ্রীজাত বন্দ্যোপাধ্যায়ের মতে ডিপ্রেশনের বাংলা না কি নিম্নচাপ! কথাগুলোর ওঠার কারণ নিম্নচাপের দুর্যোগ যেন আর কিছুতেই পিছু ছাড়তে চাইছে না। সবাই বলবেন বিপদ যখন প্রাকৃতিক, তখন তা প্রকৃতির খেয়াল বলে মেনে নিতেই হবে। তবে উৎসবের মরশুমে নিম্নচাপ, বৃষ্টি ঘনিয়ে এলে মন খারাপ হয় বইকি। দুর্গাপুজোয় সেই আশঙ্কার মেঘ ঘনাতে ঘনাতেও কেটে গিয়েছে। এবার নজর কালীপুজোয়। তবে তার আগে সব নজর ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-য় ৷
Cyclone Dana(ঘূর্ণিঝড় দানা) Live Updates
বুধবার রাতেই শক্তি বাড়বে ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’র। রাত সাড়ে ১১টার পর তা ‘প্রবল ঘূর্ণিঝড়ে’ পরিণত হবে, জানিয়েছে হাওয়া অফিস। বৃহস্পতিবার সকালের মধ্যে শক্তি আরও বাড়বে। এই মুহূর্তে ‘দানা’র প্রভাবে সমুদ্রের উপর ঘণ্টায় ৮০ থেকে ৯০ কিলোমিটার বেগে ঝড় বইছে। বৃহস্পতিবার থেকে পশ্চিমবঙ্গের উপকূল এলাকায় বাড়বে বৃষ্টির পরিমাণ। মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ এবং ওড়িশা দুই রাজ্যেই ভারি বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি করা হয়েছে। বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপের কারণে তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশেও ব্যাপক প্রভাব পড়তে পারে বলে জানানো হয়েছে।
আরও পড়ুন– ‘গুলি আমি চালাইনি’, কৃষ্ণসার হত্যা নিয়ে সলমনের মন্তব্যে নতুন করে তোলপাড় নেটদুনিয়া !
‘দানা’ গত দুই মাসে ভারতীয় উপকূলে আছড়ে পড়া দ্বিতীয় ঘূর্ণিঝড়। এর আগে অগাস্টের শেষ দিকে এসেছিল ‘আসনা’। তবে ঘূর্ণিঝড়গুলির নামের বাহার সত্যিই নজর টানে। যেমন তিতলি, বিপর্যয়, নিসর্গ, ফণি ইত্যাদি।
ঝড়ের তীব্রতা: ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের তথ্য অনুযায়ী, উপকূলীয় অঞ্চলে আছড়ে পড়ার সময় ঝড়ের গতিবেগ থাকবে ঘণ্টায় ১০০ থেকে ১১০ কিমি। যা সর্বাধিক ঘণ্টায় ১২০ কিমি পর্যন্ত বাড়তে পারে। ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকালের মধ্যে ঝড় আছড়ে পড়তে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
‘দানা’-র প্রকোপ থেকে পশ্চিমবঙ্গের কিছু অংশ আংশিকভাবে রেহাই পেলেও পূর্ব মেদিনীপুর এবং দক্ষিণ ২৪ পরগণায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। ডাউন টু আর্থ-এর তথ্য থেকে জানা যাচ্ছে, বালেশ্বরের কাছাকাছি বিশেষ করে ধামরা বন্দরের কাছে ‘দানা’ আছড়ে পড়তে পারে।
ঘূর্ণিঝড় আছড়ে পড়ার সম্ভাব্য অঞ্চল থেকে কলকাতা অনেকটাই দূরে। তবে এর প্রভাব তিলোত্তমাতেও পড়বে। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ২৪ অক্টোবর রাত এবং ২৫ অক্টোবর সকালে এই শহরেও ৫০ থেকে ৬০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইতে পারে। সঙ্গে ৭ থেকে ২০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত ভারি থেকে অতিভারি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে।
২২ অক্টোবর রাত সাড়ে ৮টায় ভারতীয় আবহাওয়া দফতরের ন্যাশনাল বুলেটিনে বলা হয়েছে, “পূর্ব-মধ্য বঙ্গোপসাগরের নিম্নচাপ গত ৬ ঘণ্টায় পশ্চিম-উত্তরপশ্চিম দিকে ৭ কিমি প্রতি ঘণ্টা বেগে অগ্রসর হয়ে গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। ২২ অক্টোবর সন্ধ্যা সাড়ে ৫টায় এটি এই অঞ্চলে কেন্দ্রীভূত ছিল… পারাদ্বীপ (ওড়িশা) থেকে প্রায় ৬৯০ কিমি দক্ষিণ-পূর্বে, সাগরদ্বীপ (পশ্চিমবঙ্গ) থেকে ৭৪০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে এবং খেপুপাড়া (বাংলাদেশ) থেকে ৭১০ কিমি দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্বে অবস্থান করছে।”
আরও পড়ুন– প্রভাসকে ভালবেসে আর বিয়েই করলেন না, কোন দুই নায়িকার কথা উঠল নায়কের জন্মদিনে বুঝতে পারছেন?
বুলেটিনে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, “২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে ওড়িশা-পশ্চিমবঙ্গের উপকূলবর্তী এলাকায় ৪০ থেকে ৫০ কিমি বেগে ঝোড়ো হাওয়া বইবে। এই গতিবেগ প্রতি ঘণ্টায় সর্বাধিক ৬০ কিমি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।” এরপর ধীরে ধীরে গতিবেগ বাড়বে, “২৪ অক্টোবর সকালে ৬০ থেকে ৭০ কিমি প্রতি ঘণ্টা থেকে সর্বাধিক ৮০ কিমি প্রতি ঘণ্টা এবং ২৪ অক্টোবর রাত থেকে ২৫ অক্টোবর সকাল পর্যন্ত ১০০ থেকে ১১০ কিমি প্রতি ঘণ্টা থেকে সর্বাধিক ১২০ কিমি প্রতি ঘণ্টায় পৌঁছাবে। এরপর ধীরে ধীরে গতি কমে আসবে।”
পাশাপাশি বলা হয়েছে, “২৩ অক্টোবর সন্ধ্যা থেকে সমুদ্রের আবহাওয়া অশান্ত থেকে অতি অশান্ত হয়ে উঠতে পারে। ২৪ অক্টোবর সকাল থেকে ২৫ অক্টোবর দুপুর পর্যন্ত আবহাওয়া উচ্চ থেকে অতি উচ্চ হতে পারে। এরপর ধীরে ধীরে অবস্থার উন্নতি হবে।” এই সময় মৎস্যজীবীদের সমুদ্রে যেতে নিষেধ করা হয়েছে।
‘দানা’ নামকরণ
WMO-এর ক্রান্তীয় সাইক্লোন নামকরণ পদ্ধতি অনুযায়ী, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-এর নামকরণ করেছে কাতার। আরবিতে ‘দানা’ শব্দের অর্থ উদারতা। অঞ্চলের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী ক্রান্তীয় সাইক্লোনের নামকরণের প্রস্তাব দেওয়া হয়।
ত্রাণ ব্যবস্থা
ইতিমধ্যেই ওড়িশায় ২০টি এবং পশ্চিমবঙ্গে ১৪টি এনডিআরএফ দল মোতায়েন করা হয়েছে। প্রস্তুত রয়েছে নৌবাহিনী এবং কোস্ট গার্ডও। ইতিমধ্যেই পশ্চিমবঙ্গের হলদিয়া এবং ওড়িশার পারাদ্বীপে হেলিকপ্টার এবং দূরবর্তী অপারেটিং স্টেশন তৈরি করেছে ভারতীয় কোস্ট গার্ড। ওড়িশা সরকারের এক কর্তা সংবাদসংস্থা পিটিআই-কে জানিয়েছেন, ২০টি এনডিআরএফ দলের পাশাপাশি ওড়িশা ডিজাস্টার র্যাপিড অ্যাকশন ফোর্স (ওড্রাফ)-এর ৫১টি দল এবং ১৭৮টি অগ্নিনির্বাপক দলও ঝুঁকিপূর্ণ অঞ্চলে মোতায়েন করা হয়েছে।
ওড়িশা সরকার ১৪টি জেলার ৩,০০০ গ্রাম থেকে ১০ লক্ষের বেশি মানুষকে ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করেছে বলে একটি বিবৃতিতে জানানো হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ের কারণে ১৪টি জেলায় বুধবার থেকে শুক্রবার পর্যন্ত সমস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকবে।