কলকাতা: ঘূর্ণিঝড় দানার জেরে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে চিংড়ি চাষের।
এমনই আশঙ্কা করছেন চিংড়ি চাষের সঙ্গে যুক্ত ব্যবসায়ীরা। ফলে এই রাজ্যের চিংড়ি শুধু দেশে নয়, বিদেশেও রফতানির ক্ষেত্রে তৈরি হয়েছে অনিশ্চয়তা।
অন্যদিকে, ভাগ্যক্রমে ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা পেয়েছে চিংড়ির চারা উৎপাদন কেন্দ্রগুলি। তবে চাষিরাই যেহেতু ক্ষতিগ্রস্ত। তাই বিপুল পরিমাণ চিংড়ির চারা কিনবে কে তা নিয়ে সংশয় রয়েছে। তবে হ্যাচারির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা বলছেন তাঁরা মানুষের পাশে আছেন। প্রয়োজনে এখন সব লাভ-ক্ষতি ভুলে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চান তাঁরা। সাহায্য করতে চান রাজ্যের মৎস্য দফতরকে।
আরও পড়ুন: ‘দানা’-র ঘূর্ণি সবচেয়ে বেশি ঝড় তুলল বাংলার কোন জেলায়? কোথায় ক্ষয়ক্ষতি কত? রিপোর্ট এল নবান্নে
ভেনামি প্রজাতির চিংড়ি আগামী মাসেই ভেড়ি থেকে তুলে বিদেশে বিক্রি করার কথা ছিল। এছাড়া দেশের বিভিন্ন রাজ্যেও রফতানি হয় এই সব চিংড়ি। এর আগেও ঘূর্ণিঝড় ইয়াসের প্রভাবে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছিল পূর্ব মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগণার বিস্তীর্ণ অংশে। প্রভাব পড়েছে উত্তর ২৪ পরগণাতেও। এবারেও ভারী বৃষ্টির কারণে দক্ষিণ ২৪ পরগণা ও পূর্ব মেদিনীপুর জুড়ে বিঘের পর বিঘে চিংড়ি চাষের ভেড়ির ক্ষতি হয়েছে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলায় ১৯টি ব্লকে সমুদ্র তীরবর্তী ভেড়িতে চিংড়ির চাষ হয়। সমুদ্র লাগোয়া ভেড়িতে বিভিন্ন খালের মাধ্যমে নোনা জল ঢোকে।
আরও পড়ুন: বাকি আর ২ ঘণ্টা, ঘূর্ণিঝড় ‘দানা’-র লেজের অংশ পুরোপুরি স্থলে ঢুকলেই বাড়বে বৃষ্টি! বড় আপডেট
এই জল চিংড়ি চাষে আদর্শ। চিংড়ির ওজন ২০ গ্রাম হলেই জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে তা তুলে বিক্রি করে দেওয়া হয়। মৎস্য ব্যবসায়ীরা যা হিসেব দিয়েছেন তা শুধু পূর্ব মেদিনীপুর জেলাতেই চিংড়ি চাষে ক্ষতি হতে পারে প্রায় ১ হাজার কোটি টাকার। ঘূর্ণিঝড় দানার কারণে সব ভেড়িতেই বৃষ্টির মিষ্টি জল ও সমুদের নোনা জল এমনভাবে ঢুকেছে যে সব চিংড়ি নষ্ট হয়ে যেতে পারে। অন্যদিকে এই রাজ্যে মাত্র তিনটি জায়গাতেই চিংড়ির হ্যাচারি আছে। দুটি আছে নিউ দীঘায়, একটি আছে তাজপুরে।
সাধারণত এই রাজ্য চিংড়ির চারা উৎপাদনের আদর্শ নয়। কারণ সমুদ্র দিঘা থেকে শঙ্করপুর অবধি মেলে চিংড়ির চারার জন্যে। দানার প্রভাবে তাদের উৎপাদনে ব্যাঘাত না ঘটলেও সমস্যা হয়েছে চারা আদৌ বিক্রি হবে তো? কারণ যারা চারা কিনবেন তাদের আর্থিক অবস্থা খারাপ। এরকমই এক হ্যাচারির মালিক জানাচ্ছেন, “আমরা এখন সরকারের পাশে দাঁড়াতে চাই। প্রয়োজনে ক্ষতিগ্রস্ত চাষীদের আমরা বিনামূল্যে চারা দেব। সরকার সাহায্য করুক।”
বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সমুদ্রের জল হ্যাচারিতে নিয়ে আসা হয়৷ তারপর সেই জল ফিল্টার করে লার্ভা থেকে চারা করা হয়। সেই চারা বড় করার জন্যে রয়েছে ল্যাবরেটরি ও একাধিক প্রক্রিয়া৷ কিছু জায়গায় দেখা গিয়েছে হ্যাচারির শেড উড়ে গেলেও তাকে গুরুত্ব দিতে নারাজ হ্যাচারির মালিকরা। তারা এই সময় মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাইছেন।
আবীর ঘোষাল