শান্তিপুর: আজও ডগর বাজনা এবং নহবত, সানাই সহযোগে পুজো হয়ে আসছে শান্তিপুরের বহু প্রাচীন এবং জাগ্রত চাঁদুনী মায়ের। আগেকার দিনে বিশেষ করে বিবাহ অনুষ্ঠানে মেয়ের বাড়িতে ঢোল সানাই সহযোগে নহবত বসানো হত। তবে সেই নহবত ছিল স্বপ্নের মতো রাজ রাজা কিংবা জমিদার ছাড়া সামর্থ্য ছিল না নহবাত বসানোর অনেকেরই। এরপর মধ্যবিত্ত পরিবারেও উনবিংশ ও বিংশ শতাব্দীতে দেখা যেত নহবতের আসর। তবে একবিংশ শতাব্দীতে এসে ধীরে ধীরে কমতে লাগলো নহবতের করিশমা। তবে শান্তিপুরের চাঁদুনী মায়ের পুজোয় নহবতের পরম্পরা বজায় রয়েছে আজও। মূল ফটকের উপরে সকল পুণ্যার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এই বনেদিয়ানা।
২০০০ সালের আগে থেকে মুর্শিদাবাদের কাঁদি থেকে নহবতের আসর জমাতে কালী পুজোয় চাঁদুনী মায়ের কাছে ডাক পড়ে মহেশ্বর বিদ্যানের। তার বাবা ঠাকুর দাদার আমলের এই পেশা এখন শিখছে তার নিজের ছেলেও। এবছর নহবত নিয়ে তারা মুর্শিদাবাদ থেকে তিনজন এসেছেন। তিনি জানান মাঝে কিছুটা ভাটা পড়লেও ইদানিং কালে নহবতের ডাক বেশ ভালই পাওয়া যায়। পারিশ্রমিকও আগের থেকে অনেকখানি বেড়ে গেছে চাহিদার কারণে। পূজোর মরশুম ছাড়া বিয়ের মরশুমেও এখন আগের মতই ডাক পাচ্ছেন তারা। আর সেই কারণে তার পাশাপাশি তার ছেলেও এই পেশায় আসতে আগ্রহী।
যদিও পুজোর সময় শ্যামা সংগীত গান বাজালেও বিয়ের আসরে মূলত ক্লাসিক্যাল গানই বাজাতে হয় মানুষকে মনোরঞ্জন দেওয়ার জন্য। আর এই সমস্ত গান প্রতিনিয়ত বাড়িতে রেওয়াজের মাধ্যমে হয়ে ওঠে আরও দৃঢ়।
উল্লেখ্য কথিত আছে ১৪৮৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি আনুমানিক সাড়ে পাঁচশো বছর আগে চাঁদুনীমা প্রথম পূজিতা হন কাশীনাথ সার্বভৌমের হাত ধরে। কাশীনাথ ছিলেন শ্রীচৈতন্যদেবের গৃহ শিক্ষক। কথিত আছে বালক কাশিনাথ তার মায়ের কাছে আবদার করেন কালী মূর্তি গড়ে দেওয়ার জন্য। মা সাধ্যমতো মূর্তি করে দেওয়ার পর কাশিনাথ পুজো করেন। সেই ধারা এখনও বজায় রয়েছে এই পুজোয়। চাঁদুনী বাড়ির জ্যেষ্ঠ গৃহবধুর হাত দিয়ে বিজয় দশমীর দিন পাটে মাটি দেওয়া হয়, যা গায়ে মাটি বলে পরিচিত। এরপর মৃৎশিল্পী এসে মূর্তি গড়েন এবং বাড়ির কোনও সন্তানের হাত দিয়েই চাঁদুনী মায়ের পুজো সম্পন্ন হয়।
Mainak Debnath