বর্ধমান: পুজোর পরদিনই বিসর্জন। এনিয়মের কোনও নড়চড় নেই বর্ধমানের মেমারির কালীগ্রামে। একশোরও বেশি কালীপুজো হয় গ্রামে। তাই কালী গ্রাম’ নামেই পরিচিত পূর্ব বর্ধমানের মেমারির আমাদপুর। বর্ধমানের এই গ্রামে কালী ঠাকুরেরা চার বোন। চারশো বছরেরও বেশি সময় ধরে বড়মা, মেজমা, সেজমা, ছোটমা নামে দেবীর পুজো হয়ে আসছে। তবে বিসর্জন হয় পুজোর পরদিনই। সন্ধের পর থেকে শুরু হয় বিসর্জনের শোভাযাত্রা। তবে বড় কালী, মেজ কালীদের বের করা হয় গভীর রাতে।
গ্রামে ঢুকলে প্রথমেই প্রায় ২০ ফুট উচ্চতার বড় মা-র দর্শন পাওয়া যায়। আরও কিছুটা এগোলেই রয়েছেন প্রায় সম উচ্চতার মেজ মা। তার আশপাশে রয়েছে সেজ মা ও ছোট মা-এর মন্দির। গ্রামের বাড়িতে বাড়িতে পুজিত হন দেবী কালী। ১০০ টিরও বেশি কালীপুজো হয়ে গ্রাম জুড়ে। সিদ্ধেশ্বরী, বুড়িমা, ডাকাত কালী, ক্ষ্যাপা মা, আনন্দময়ী মা ইত্যাদি ভিন্ন নামে মা কালী এখানে পূজিত হন। এই জন্য এই গ্রাম মানুষের কাছে ‘কালী গ্রাম’ নামেই পরিচিত।
তাই দুর্গাপুজো নয়,কালীপুজোকেই কেন্দ্র করে উৎসবের আনন্দে মেতে উঠে গোটা গ্রাম। বাড়িতে বাড়িতে আসেন আত্মীয় পরিজন। শুধু কালীই নয়, কালী পুজোর দিন এখানে ভৈরবের পুজোও হয়। বাংলার এই গ্রামে দুর্গা নয়, কালীপুজোই আসল। দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ কালীপুজোর দিনে হাজির হন এই গ্রামে।
পুজো ঘিরে শোনা যায় নানা কাহিনি। মেমারির আমাদপুর এক প্রাচীন জনপদ। কথিত আছে, আগে এখান দিয়েই প্রবাহিত ছিল বেহুলা নদী। বর্তমানে তা মজে গিয়ে খালের আকার নিয়েছে। এক সময়ে বাণিজ্য তরী যাতায়াত করত এখান দিয়ে। সেই সময়ে বণিকদের দস্যুদের কবলে পড়ে সর্বস্ব খোয়াতে হত। সেই সময়ে আমাদপুরে বেহুলা নদীর ধারে ছিল মহাশ্মশান। সেখানে এক সাধু থাকতেন। সেই সাধু শ্মশানে কালী সাধনা করতেন। বণিকরা দস্যুদের হাত থেকে বাঁচতে এই শ্মশানে কালী মায়ের পুজো দিতেন। শোনা যায়, এর পর থেকেই তাঁরা দস্যুদের হাত থেকে রক্ষা পেতে শুরু করেন। তখন থেকেই এই দেবীর প্রতি বিশ্বাস জন্মায়। মাহাত্ম্য ছড়িয়ে পরে দিকে দিকে।
বিসর্জনের সময়ে বড়, মেজ, সেজ আর ছোটমাকে চতুর্দোলায় করে শোভাযাত্রা বের হয়। সারা রাত গোটা গ্রাম ঘোরানোর পরে ভোর বেলায় বিসর্জন হয়। এই দেবীরা ছাড়াও আরও গ্রামে যত দেবী রয়েছেন, সকলকেই একসঙ্গে চতুর্দোলা করে একটির পর আর একটি— এইভাবে লাইন দিয়ে শোভাযাত্রা বের হয়। আশেপাশের জেলা থেকে মানুষজন সেই শোভাযাত্রা দেখতে ভিড় জমান।