কলকাতা: মমতা বললেন, ‘কোনও নেতা নেই। কেউ কেউকেটা নয়। কর্মীরাই সম্পদ’৷ আর অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বললেন, ‘যাঁরা মানুষ কে বোঝাতে পারেননি তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’ মোদ্দা কথা হল, দলীয় কর্মীদের নরমে গরমে বার্তা দিলেন নেত্রী থেকে সেনাপতি৷ বসে থাকলে হবে না, নিজেকে কেউকেটা ভাবলেও হবে না, আবার কেউ যদি ভাবেন নিজেরটা বুঝে নিলেই হবে, দলেরটা দল বুঝবে, সেটা হলেও চলবে না৷ ‘আত্মতুষ্টি’র কোনও জায়গা নেই৷ এখন থেকেই শুরু করে দিতে হবে ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনের প্রস্তুতি৷
গুরু পূর্ণিমার শুভেচ্ছা দেওয়া থেকে শুরু করে বাংলাদেশ৷ মমতার একুশের বক্তৃতায় উঠে এসেছে নানা প্রসঙ্গ৷ তার মধ্যে কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে আক্রমণ, নিজের দলের সাফল্যের খতিয়ান এবং অতিথি অখিলেশকে অভ্যর্থনা সবই ছিল৷ ছিল বিজেপি-কে জোরাল আক্রমণ৷ কিন্তু, এই সবের মাঝখানে দলীয় শৃঙ্খলা বিষয়ক বার্তা দিতেও ভোলেননি মমতা৷
এদিনের মঞ্চ থেকে দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে মমতাকে বলতে শোনা যায়, ‘‘সব পুরসভা, পঞ্চায়েতকে বলব। কারও বিরুদ্ধে দল যদি অভিযোগ পায়, তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব। বিধায়ক, সাংসদদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেবে। অন্যায় করবেন না। অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেবে দল৷ কোনও নেতা নেই। কেউ কেউকেটা নয়। কর্মীরাই সম্পদ৷’’
মমতার কথায়, ‘‘অন্যায় করলে আমি কাউকে ছাড়ি না। অন্যায় করলে আমি তৃণমূল কংগ্রেসের কাউকে ছাড়ি না। অন্যায় করবেন না। মহিলাদের সন্মান দেবেন।’’ দলীয় কর্মীদের কাছে তাঁর স্পষ্ট বার্তা, ‘‘তৃণমূল কংগ্রেস মানুষের সামাজিক বন্ধু হোক। আমি বিত্তবান চাই না। আমি মানুষ চাই। পঞ্চায়েত, মিউনিসিপালিটিগুলোকে বলব এখন থেকে যাতে কোনও অভিযোগ না আসে, না হলে আমি পদক্ষেপ নেব।’’
মমতার আগেই একুশের মঞ্চে বক্তৃতা সেরে গিয়েছিলেন অভিষেক৷ তাঁর কণ্ঠেও প্রতিধ্বনিত হয়েছিল এই একই রকম বার্তা৷ ২০২৬-এর জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে, কর্মীদের কথা ভাবতে হবে। পুরসভা দেখতে হবে। সবই স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছিলেন অভিষেক৷ বলেছিলেন, ‘‘আপনি যত বড় নেতা হন দল ব্যবস্থা নেবে। আপনি পুরসভায় জিতবেন আর বিধানসভায় নয়। ভাববেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এসে একটা মিটিং করব আর জিতবেন। সেটা হবে না৷ দল ব্যবস্থা নেব।’’
এর পাশাপাশি, আত্মতুষ্টি পরিত্যাগ করার বার্তাও দেন অভিষেক৷ বলেন, ‘‘যদি ভেবে থাকি আগামীর লড়াই জিতব। আমরা জিতব। কিন্তু আত্মতুষ্টির জায়গা নেই। আমাদের ২০১৬ থেকে বেশি ভোটে জিতব। নতুন তৃণমূলে যারা এসেছেন তাদের সংগ্রাম, ইতিহাস জানতে হবে। প্রবীণদের সাথে নিয়ে কাজ করতে হবে। নবীন আর প্রবীণ একই বৃন্তে দুটি কুসুম। আপনাদের শৃঙ্খলাপরায়ণ হতে হবে। সংযত হতে হবে।’’
সবশেষে তিনি বলেন, ‘‘আপনারা দলকে জয় এনে দিয়েছেন। লক্ষ লক্ষ মানুষকে বিজেপি কিনতে পারবে না। আপনারা বুথ সুনিশ্চিত করেছেন। যাঁরা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, যাঁরা মানুষকে বোঝাতে পারেননি তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব।’’