কী করবেন অধীর?

Adhir Ranjan Chowdhury: ‘এই রাজনীতি আমার জন্য নয়!’ তৃণমূলের সঙ্গে আপোসে নারাজ, অধীরের ফেসবুক পোস্টে জল্পনা

: প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতির পদ থেকে তাঁকে সরিয়ে দেওয়ার পর গতকালই কংগ্রেস হাইকম্যান্ডের বিরুদ্ধে নিজের ক্ষোভ প্রকাশ্যে এনেছিলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী৷ এবার ফেসবুক পোস্ট করেও পরোক্ষে দলের শীর্ষ নেতৃত্বকেই নিশানা করলেন অধীর৷ যে তৃণমূল রাজ্যে কংগ্রেস কর্মীদের নানা ভাবে হেনস্থা, অত্যাচার করছে, তাদের সঙ্গে দিল্লিতে জোট নিয়েও প্রশ্ন তুলে দিয়েছেন প্রাক্তন প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি৷ তৃণমূলের সঙ্গে তিনি যে কোনওভাবেই আপোস করতে রাজি নন, তাও স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীর৷ অধীরের এই ফেসবুক পোস্টের পর তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়েই নতুন জল্পনা তৈরি হয়েছে৷

ফেসবুক পোস্টে অধীর স্পষ্ট লিখেছেন, যে কর্মীরা রাতদিন লড়াই করছে, দলের পতাকা নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছে তারা দিল্লিতে ডাক পায় না! এই যদি রাজনীতি হয় তবে সে রাজনীতি আমার জন্য নয়, আমি আমার সহকর্মীদের সাথে রাস্তায় থাকব, আন্দোলনের পথে।

জাতীয় স্তরে কংগ্রেস এবং তৃণমূল ইন্ডিয়া জোটে শামিল হলেও বাংলায় দু দলের আসন রফা হয়নি৷ বরাবরই তৃণমূলের সঙ্গে কোনওরকম জোট বা আসন সমঝোতার বিরোধিতা করে এসেছেন অধীর৷ শেষ পর্যন্ত তৃণমূলের ইউসুফ পাঠানের কাছেই বহরমপুর থেকে পরাজিত হতে হয় তাঁকে৷ গত সোমবার দিল্লিতে প্রদেশ নেতাদের নিয়ে বৈঠক ডাকে কংগ্রেস হাইকম্যান্ড৷

সেই বৈঠক থেকে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়, প্রদেশ সভাপতির পদ থেকে অধীরকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে৷ যদিও অধীর অভিযোগ করেছেন, তাঁকে এ বিষয়ে আগে থেকে দলের সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে সহ কোনও নেতাই কিছু জানাননি৷ ওই বৈঠকেই প্রদেশ কংগ্রেসের অন্যান্য কয়েকজন নেতার থেকে তাঁদের মতামত জানতে চান কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক কে সি বেণুগোপাল৷ ফেসবুক পোস্টে এই বিষয়টি নিয়েও সরব হয়েছেন অধীর৷

আরও পড়ুন: শুধু ইলিশ আর ইলিশ! নামখানায় মৎস্যজীবীদের মুখে হাসি, দাম কি কমবে?

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় করা ওই ফেসবুক পোস্টে অধীর লিখেছেন, ‘যে কর্মীরা রাতদিন তৃণমূলের হাতে মার খেলো, খাচ্ছে, তাঁদের জন্য আমরা বলব না তো কে বলবে?শাসক তৃণমূল আমাদের দল ভাঙছে প্রতিদিন! ওরা তো ইন্ডিয়া জোটে শামিল হয়ে আমাদের উপরে অত্যাচার বন্ধ করেনি! তৃণমূল তো এ রাজ্যের শাসক দল, তারা কি আমাদের কংগ্রেস কর্মীদের কোনও রকম রেহাই দিয়েছে? আজও জেলে বন্দি আমাদের কর্মী, মিথ্যা মামলায় জর্জরিত, আমাদের পার্টি অফিস দখল করেছে, করছে, বিরাম নেই তো ! তাহলে সেই তৃণমূলের বিরুদ্ধে কী করে চুপ করব, করলে আমার সেই সহকর্মীদের প্রতি অবিচার অন্যায় করা হবে! আমি পারব না।’

দলের নেতৃত্বের উদ্দেশ্যেই অধীর সরাসরি লিখেছেন, ‘যে কর্মীরা রাতদিন লড়াই করছে, দলের পতাকা নিয়ে রাস্তায় আন্দোলন করছে, তাদের সঙ্গেও দিল্লি কথা বলুক, তাদের মতামতও জানা দরকার। তাঁদেরকেও দিল্লিতে ডাকা দরকার। আমি আমার সেই সকল সহকর্মীদের সঙ্গে রাস্তায় থাকব, আন্দোলনের পথে, অন্যায়ের সঙ্গে আপোস করতে শিখিনি, করবও না।’

লোকসভা নির্বাচন চলাকালীন অধীর বার বার তৃণমূলের বিরোধিতায় সরব হলেও তাঁর মতামতকে সেভাবে গুরুত্বই দেয়নি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব৷ বরং তাঁর এই অবস্থানের জন্য প্রকাশ্যেই অধীরকে কড়া বার্তা দিয়েছিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে৷ বহরমপুরে নিজের হার এবং বাংলায় লোকসভা নির্বাচনে কংগ্রেসের বিপর্য়য়ের পর দলে আরওই কোণঠাসা হয়ে পড়েন অধীর৷ তৃণমূলের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার যে নীতি কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব নিয়েছেন, তিনি যে তা মানবেন না, তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন অধীর৷ ফলে রাজনৈতিক ভাবে নিজেকে প্রাসঙ্গিক রাখতে অধীর এবার কোন পথে হাঁটেন, সেটাই এখন দেখার৷