কলকাতা: অধীররঞ্জন চৌধুরী অথবা প্রদেশ কংগ্রেস নেতারা যতই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরোধিতা করুন না কেন, কংগ্রেস হাইকম্যান্ড যে সেই বিরোধিতাকে একেবারেই গুরুত্ব দিচ্ছে না, তা স্পষ্ট করে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে৷ এমন কি, ইন্ডিয়া জোট সরকার গঠন করলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সমর্থন গ্রহণ করা হবে কি না, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধীর কেউ নন বলেও চাঁচাছোলা ভাষায় জানিয়ে দিলেন কংগ্রেস সভাপতি৷
মল্লিকার্জুন খাড়গের এই মন্তব্যে স্বভাবতই দলের মধ্যে আরও কোণঠাসা হলেন অধীররঞ্জন চৌধুরী৷ খাড়গের কড়া অবস্থানের পর অধীর বলেছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে নীতিগত বিরোধিতার কথা বলেছিলেন তিনি৷
ঘটনার সূত্রপাত কয়েকদিন আগে৷ চুঁচুড়ায় ভোট প্রচারে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ইন্ডিয়া জোট ক্ষমতায় এলে বাইরে থেকে নতুন সরকারকে সমর্থন করবে তৃণমূল কংগ্রেস৷ এই মন্তব্য নিয়ে জোর চর্চা শুরু হওয়ার পর হলদিয়ার সভা থেকে দলের অবস্থান স্পষ্ট করে তৃণমূলনেত্রী বলেন, ‘সর্বভারতীয় স্তরে অনেকে আমাকে ভুল বুঝেছেন৷ ওই জোট দিয়ে আমরা সরকার তৈরি করব, জোটে থাকব আমরা৷ ইন্ডিয়া জোটটা আমি তৈরি করেছিলাম, সেই জোটে থাকব৷’
আরও পড়ুন: মেট্রোর কামরায় অর্থমন্ত্রী নির্মলা, মহিলা যাত্রী যা করলেন, দেখে তাজ্জব সবাই!
তৃণমূলনেত্রীর এই মন্তব্যের পরই অধীররঞ্জন চৌধুরী প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে দাবি করেছিলেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অবস্থানকে বিশ্বাস করা যায় না৷ ভবিষ্যতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবস্থান বদলে বিজেপি-কেও সমর্থন করতে পারেন বলেও দাবি করেন অধীর৷
অধীরের এই মন্তব্যে অবশ্য কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন কংগ্রেস সভাপতি মল্লিকার্জুন খাড়গে৷ এই মন্তব্যের প্রতিক্রিয়া দিতে গিয়ে খাড়গে বলেন, ‘২০০৪ সালে তো বামেরাও বাইরে থেকে ইউপিএ সরকারকে সমর্থন করেছিল৷ এরকম অনেকেই তো বাইরে থেকে সরকারকে সমর্থন করে৷ মমতাজি প্রথমে বলেছিলেন উনি বাইরে থেকে সমর্থন করবেন৷ পরে উনি আবার বলেছেন যে ইন্ডিয়া জোটের সরকার গঠন হলে উনি তাতে অংশ নেবেন৷ উনি জোটের সঙ্গে আছে, তা স্পষ্ট৷ অধীররঞ্জন চৌধুরী এই সিদ্ধান্ত নেবেন না৷ সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য আমরা আছি, কংগ্রেসের হাইকম্যান্ড আছে৷ আমরা যে সিদ্ধান্ত নেব, সেটাই চূড়ান্ত হবে৷ কারও যদি দলের এই অবস্থানে আপত্তি থাকে, তাহলে তাঁকে বাইরে যেতে হবে৷’
কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব যে অধীরের এই মন্তব্যকে একেবারেই ভাল ভাবে নেয়নি, মল্লিকার্জুন খাড়গের মন্তব্যেই তা স্পষ্ট হয়ে যায়৷ স্বভাবতই দলের মধ্যেই চাপে পড়ে যান প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি৷ খাড়গের মন্তব্যের জবাব দিতে গিয়ে অধীর বলেন, ‘আমার বিরোধিতা নৈতিক বিরোধিতা৷ কংগ্রেসকে যে খতম করবে আমি তাঁকে খাতির করব, তা তো হতে পারে না৷ আমার কোনও ব্যক্তিগত বিদ্বেষ নেই৷ পশ্চিমবঙ্গে আমার দলকে রক্ষা করার লড়াই আমি থামাতে পারি না৷’
প্রসঙ্গত, বাংলায় ইন্ডিয়া জোট না হওয়ার জন্য নির্বাচনী প্রচারে বার বারই অধীররঞ্জন চৌধুরীকেই দায়ী করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়রা৷ ভোট প্রচার পর্বেও বার বারই অধীর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সহ তৃণমূল নেতৃত্বকে তীব্র আক্রমণ করেছেন৷ যদিও কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব বার বারই বুঝিয়ে দিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমর্থন তাঁদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ৷ হাইকম্যান্ডের এই বার্তার পর অধীরের অবস্থান বদলায় কি না, সেটাই এখন দেখার৷