মহিলা অফিসারকে শাসালেন মন্ত্রী অখিল গিরি৷

Akhil Giri: ‘আপনি আমাদের কর্মচারী, মাথা নিচু করে থাকুন!’ মহিলা অফিসারকে শাসালেন মন্ত্রী অখিল

তাজপুর: ফের বিতর্কে রাজ্যের কারামন্ত্রী অখিল গিরি৷ এবার পূর্ব মেদিনীপুরের তাজপুরে সমুদ্র সৈকতে বন দফতরের জায়গা জবরদখল মুক্ত করতে যাওয়া বন দফতরের মহিলা রেঞ্জারকে রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে শাসালেন রাজ্যের কারামন্ত্রী এবং স্থানীয় বিধায়ক অখিল গিরি৷ রীতিমতো হুমকির সুরে মহিলা অফিসারকে মন্ত্রী বলেন, ‘আপনার আয়ু আর বেশি দিন নেই৷ আপনি আমাদের কর্মচারী, মাথা নিচু করে থাকবেন৷ শুধু তাই নয়, ওই মহিলা রেঞ্জারকে বেয়াদপ, জানোয়ার বলেও মন্তব্য করেন মন্ত্রী৷ মন্ত্রী এই রূপ দেখে তাঁর সঙ্গে থাকা স্থানীয় বাসিন্দারাও ওই মহিলা রেঞ্জারকে উদ্দেশ্য করে শাসানি দিতে থাকেন৷’

যদিও এই ঘটনায় যথেষ্টই ক্ষুব্ধ বন দফতর৷ সূত্রের খবর, সিসিএফ এবং ডিএফও-র থেকে রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছে বন দফতর৷ ওই রিপোর্ট এলেই ঘটনার ভিডিও ক্লিপ সহ তা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো হবে৷ রাজ্যের শাসক দলও মন্ত্রী অখিল গিরির এই আচরণকে সমর্থন করেনি৷

বন দফতর সূত্রে খবর, তাজপুর সমুদ্র সৈকতে বন দফতরের জায়গা জবরদখল করে অবৈধ ভাবে দোকান এবং ঘর তৈরি করা হয়৷ কিন্তু কিছুদিন আগে জলোচ্ছ্বাসের জেরে ওই সমস্ত বেআইনি নির্মাণ সমুদ্রে তলিয়ে যায়৷ অভিযোগ, গতকাল রাতে ফের ওই জায়গায় দোকান এবং ঘর তৈরি করতে শুরু করেন স্থানীয় বাসিন্দারা৷ এ দিন সকালে বন দফতরের নিরাপত্তা বাহিনীকে নিয়ে সেই বেআইনি নির্মাণ আটকাতে যান ওই মহিলা ফরেস্ট অফিসার৷ তখনই ঘটনাস্থলে হাজির হয়ে ওই মহিলা আধিকারিককে ধমকাতে শুরু করেন মন্ত্রী এবং রামনগরের বিধায়ক অখিল গিরি৷ ওই মহিলা অফিসারের অভিযোগ, মন্ত্রী নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অবৈধ নির্মাণ করান৷ বাধা দিতে গেলেই মহিলা অফিসারের সঙ্গে বচসায় জড়ান তিনি৷

ভাইরাল ভিডিওতে দেখা গিয়েছে, ওই মহিলা অফিসারের দিকে রীতিমতো আঙুল উঁচিয়ে মন্ত্রী বলছেন, ‘আপনি কত বড় অফিসার আমি দেখে নেব৷ আপনার আয়ু আর বেশি দিন নেই৷ খুব বড় জোর আট থেকে দশ দিন৷’
ওই মহিলা অফিসার তখন বলেন, ‘স্যর আমি ডিউটি করছি বলে আপনি আমাকে সরিয়ে দেবেন? আপনি বলেছিলেন যে দোকান বসবে না৷’

এর পরেও ওই মহিলা অফিসারের সঙ্গে মন্ত্রী এবং তাঁর অনুগামীদের তর্কাতর্কি চলতে থাকে৷ তখন মন্ত্রীকে বলতে শোনা যায়, ‘শুনুন ম্যাডাম, সবাইকে নিয়ে চলুন৷ বেশি দিন থাকতে পারবেন না৷ কে বিট অফিসার আমি জানি, বন দফতরে কী দুর্নীতি হয় আমি জানি৷ সব বিধানসভায় ফাঁস করে দেব৷ আপনি এখানে থাকবেন না৷ এরা সারা বছর থাকবে৷ আপনার কি রাষ্ট্রপতির মতো ক্ষমতা? কারও কথা শুনতে চান না৷ পঁচিশ ফুট আমরা নিলাম৷ এর ভিতরে আপনি আসলে ফিরে যেতে পারবেন না বলে দিলাম৷ আপনি আমাদের কর্মচারী, মাথা নিচু করে থাকবেন৷ বেশি কথা বলবেন না৷ এত বড় বেয়াদপ, জানোয়ার রেঞ্জার এর আগে আসেনি৷’

যদিও মন্ত্রী অখিল গিরির এই মন্তব্য ভাল ভাবে নেয়নি তাঁর দল তৃণমূল কংগ্রেসও৷ তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘অখিল গিরি যে ভাবে কথা বলেছেন তা দল অনুমোদন করে না। মুখের ভাষা, শব্দ চয়ন, শরীরী ভাষার তীব্র নিন্দা করছি। এই আচরণ করে ঠিক করেননি। এগুলো আপত্তিকর। বন দফতরের জমিতে দোকান বা কাঠামো ছিল। বন দফতর বলার পরেও সরাননি। আবার নতুন করে শুরু করায় বন দফতর আপত্তি জানায়। তারপর অখিল গিরি কারামন্ত্রী যা আচরণ করেন তা নিন্দনীয়। তার প্রয়োজন হলে বীরবাহা হাঁসদা বনমন্ত্রীকে জানাতে পারতেন। কারামন্ত্রীর উচিত ছিল বনমন্ত্রীর সাথে কথা বলা। অখিল গিরির উচিত ক্ষমা চাওয়া, কারামন্ত্রী সমর্থন যোগ্য কাজ করেননি। বন দফতর অফিসার নিজের কাজ করতে গিয়েছিলেন। এই আচরণের জন্য বিরুপ প্রভাব পড়ে। দল বিড়ম্বনায় পড়েন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও অভিষেক বন্দোপাধ্যায়ের নজর রাখছেন। দল যোগাযোগ করছে।’

যদিও এই ঘটনায় নিজের জায়গাতেই অনড় রয়েছেন কারামন্ত্রী৷ নিজের আচরণের পক্ষে সাফাই দিয়ে তাঁর দাবি, ‘আমরা দু মাসের জন্য ওই জায়গা চেয়েছিলাম, কিন্তু ওই মহিলা অফিসার কোনও কথা শুনতে চাননি৷ বাধ্য হয়ে আমি ওই কথাগুলি বলতে বাধ্য হয়েছি৷’ প্রসঙ্গত এর আগে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু সম্পর্কেও কুকথা বলেছিলেন অখিল গিরি৷ সেক্ষেত্রেও বিতর্কের পর ক্ষমা চেয়ে নিতে বাধ্য হয়েছিলেন কারামন্ত্রী৷