বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ ছবি- এক্স হ্যান্ডল থেকে

Sheikh Hasina on Boycott India: ‘বউদের ভারতীয় শাড়িগুলো পোড়ান দেখি!’ বাংলাদেশে ভারতীয় পণ্য বয়কটের হুজুগ, গর্জে উঠলেন হাসিনা

ঢাকা: বিরোধী দল বিএনপির যে নেতারা ভারতীয় পণ্য বয়কট করার হুজুগ তুলেছেন, তাঁদের এবার একহাত নিলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বিরোধী পক্ষের ওই নেতাদের কটাক্ষ করেই হাসিনার চ্যালেঞ্জ, আগে নিজেদের স্ত্রীদের ভারতীয় শাড়ি পুড়িয়ে তার পর ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক দিন৷

সম্প্রতি বাংলাদেশ জুড়েই ভারতীয় পণ্য বয়কটের ডাক জোরাল হচ্ছে৷ বাংলাদেশের জনমানসের একাংশও ভারতীয় পণ্য বয়কটের এই দাবিকে প্রবল ভাবে সমর্থন করছেন৷ ফেসবুকের মতো সমাজমাধ্যমেও ভারতীয় পণ্য বিরোধী প্রচার চলছে৷

আরও পড়ুন: ‘ননদ- বৌদিরও তো ঝগড়া হয়!’ তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব নিয়ে প্রশ্ন, কী জবাব রচনার?

অথচ পেঁয়াজ থেকে শুরু করে নিত্য প্রয়োজনীয় বহু সামগ্রীর জন্যই বাংলাদেশ ভারতের উপরে নির্ভরশীল৷ বহু ভারতীয় সংস্থা বাংলাদেশে নিজেদের পণ্য উৎপাদনও করে৷ সাবান থেকে শুরু করে খাদ্য দ্রব্য এমন কি, দু চাকা, চার চাকার গাড়ি, তালিকাটা দীর্ঘ৷ এই সব ভারতীয় সংস্থা এবং পণ্যের বিরুদ্ধেও একই ধরনের প্রচার চলছে৷

অভিযোগ, ভারত বিরোধী এই প্রচারে উস্কানি দিচ্ছে বাংলাদেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি৷ কিছুদিন আগেই টানা চতুর্থবারের জন্য ক্ষমতায় ফিরেছেন শেখ হাসিনা৷ বিএনপি নেতাদের অভিযোগ, হাসিনার ক্ষমতায় ফেরার পিছনে রয়েছে ভারতের কারসাজি৷ আর এই অভিযোগকে সম্বল করেই ভারত বিরোধী প্রচারে নেমেছে তারা৷ বিএনপি নেতারা অভিযোগ করছেন, ভারত আসল সাধারণ বাংলাদেশীদের ভাল চায় না, শেখ হাসিনাকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখতে চায়৷

এবার এই বিতর্কে মুখ খুলেছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী স্বয়ং৷ ভারত বিরোধী প্রচারে উস্কানি দেওয়া বিরোধী নেতাদের চাঁচাছোলা ভাষায় আক্রমণ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘চাদর কিনে এনে পুড়িয়ে বলছে ভারতীয় পণ্য বয়কট করুন৷ আমার প্রশ্ন, যে নেতারা বলছেন ভারতীয় পণ্য বর্জন করুন তাঁদের বউদের কটা ভারতীয় শাড়ি আছে? বউদের থেকে সেই শাড়িগুলি নিয়ে এসে কেন পোড়াচ্ছেন না? আপনারা ওই নেতাদের এই প্রশ্নটা করুন৷ যে বিএনপি নেতারা এসব বলছেন, তাঁদের বউরা যেন কোনও ভারতীয় শাড়ি না পরেন৷ আলমারিতে থাকা বউদের সব ভারতীয় শাড়ি এনে পোড়াবেন, সেদিন বুঝব সত্যি আপনারা ভারতীয় পণ্য বর্জন করছেন৷ আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে, ভারত থেকে আমরা পেঁয়াজ আমদানি করছি৷ এ ছাড়াও গরম মশলা, আদা, রসুন ভারত থেকে আসছে৷ যাঁরা বলছেন ভারতীয় পণ্য বয়কট করুন, তাঁদের বাড়ির রান্নাঘরেও যেন এসব মশলা দেখা না যায়৷ এ সব ভারতীয় মশলা ছাড়াই রান্না করে খান আগে৷’

বাংলাদেশের আগে একই ধরনের ভারত বিরোধী অবস্থান নিয়েছিল মলদ্বীপ৷ তার জেরে তাদের পর্যটন ব্যবসা এতটাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় যে মলদ্বীপেই অর্থনীতিতেই বড়সড় প্রভাব পড়তে শুরু করে৷ ভারত বিরোধী এই মনোভাবকে প্রশয় দিলে অচিরেই বাংলাদেশের অবস্থাও যে মলদ্বীপের মতো হতে পারে, পোড় খাওয়া রাজনীতিবিদ হাসিনার তা বুঝতে দেরি হয়নি৷

নিজের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে শেখ হাসিনা আরও দাবি করেন, বিরোধী দল বিএনপির নেতাদের মধ্যে অনেকের স্ত্রী একসঙ্গে কলকাতায় এসে কয়েক বাক্স ভর্তি শাড়ি নিয়ে বাংলাদেশে ফেরেন৷ হাসিনা বলেন, ‘আমি নিজে দেখেছি বিমানে চার পাঁচজন করে নেতার স্ত্রী কলকাতায় যাচ্ছেন৷ পরে কলকাতা বিমানবন্দর সূত্রেই জানতে পেরেছি ফেরার সময় এক একজন সাত আটটি স্যুটকেস ভর্তি শাড়ি নিয়ে ফিরেছেন৷’

ভারত বরাবরই বিভিন্ন কঠিন সময়ে বাংলাদেশের পাশে দাঁড়িয়েছে৷ বাংলাদেশীদের মধ্যে বহু মানুষই ভারত বিরোধী এই অবস্থানের পক্ষে নন৷ দেশের প্রধানমন্ত্রী সরব হওয়ায় বাংলাদেশে ভারত বিরোধী এই প্রচারে রাশ টানা যায় কি না, সেটাই এখন দেখার৷