Bangladesh Quota Verdict: ছাত্র-যুবদেরই জয়! হাইকোর্টের রায় বাতিল, ঐতিহাসিক রায় বাংলাদেশের সুপ্রিম কোর্টের, চাকরিতে মেধাকেই প্রাধান্য

বাংলাদেশ: অবশেষে এল ঐতিহাসিক রায়৷ যে কোটা সিস্টেম নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে রক্তস্রোত বয়ে গিয়েছে ঢাকার রাজপথে, বাংলাদেশের অলিতে গলিতে, অবশেষে রায় গেল সেই আন্দোলনকারীদের পক্ষেই৷ বাংলাদেশ হাইকোর্টের পূর্ববর্তী রায় খারিজ করে দিয়ে সে দেশের সুপ্রিম কোর্ট জানিয়ে দিল, সরকারি চাকরিতে ৯৩ শতাংশ নিয়োগই হবে মেধার ভিত্তিতে৷ বাকি ৭ শতাংশের মধ্যে ৫ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধাদের আত্মীয়-উত্তরপুরুষের জন্য৷

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে সংরক্ষণ ব্যবস্থা চালু রয়েছে। শুরুতে সরকারি চাকরির ৫৬ শতাংশ আসন সংরক্ষিত ছিল। বাকি ৪৪ শতাংশে নিয়োগ হত মেধার ভিত্তিতে। এই ৫৬ শতাংশের মধ্যে স্বীকৃতিপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের স্বজনদের জন্য ৩০ শতাংশ, নারীদের জন্য ১০ শতাংশ, বিভিন্ন জেলার জন্য ১০ শতাংশ, জনজাতিদের জন্য ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধীদের জন্য ১ শতাংশ সংরক্ষিত পদ ছিল। ২০১৮ সালে এই কোটা ব্যবস্থা বিরোধী বিপুল আন্দোলনের জেরে অবশেষে তা বাতিল করতে বাধ্য হয় হাসিনা সরকার৷

কিন্তু, সংরক্ষণ ব্যবস্থায় যে সংস্কার করেছিল শেখ হাসিনা সরকার, ২০২১ সালে সেই সংস্কারকে অবৈধ দাবি করে হাইকোর্টে মামলা করে ২ মুক্তিযোদ্ধার পরিবার৷ চলতি বছরের গত ৫ জুন সেই মামলায় তাঁদের জয় হয়৷ ২০১৮ সালে হাসিনার কোটা ব্যবস্থার পরিশোধনকে অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। ফলে পূর্ববর্তী কোটা ব্যবস্থাই ফের বহাল হয়৷

আরও পড়ুন: ‘আমরা কারা? রাজাকার!,’ মুক্তিযুদ্ধের এই শব্দ কী ভাবে আগুন ছড়াল বাংলাদেশে? এর অর্থই বা কী?

এরপরেই জনতার বিপুল জনরোষ৷ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়ে যায় ছাত্র আন্দোলন৷ পথে নেমে এসে বিক্ষোভ দেখান সবশ্রেণির মানুষ৷ পুলিশ এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংঘর্ষে অগ্নিগর্ভ হয়ে ওঠে বাংলাদেশ৷  গত এক সপ্তাহে মৃত্যু হয় প্রায় ১৩৩ জনের৷

যদিও এর মধ্যেই হাইকোর্টের নির্দেশকে চ্যালেঞ্জ করে সুপ্রিম কোর্টে গিয়েছিল হাসিনা সরকার। বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে মামলাটি লড়ছিলেন আইনজীবী এ এম আমিনউদ্দিন। এদিন তিনি শুনানির শুরুতেই জানান, কোটা ব্যবস্থা বাতিলের পক্ষেই সওয়াল করবে সরকার৷ সকাল ১০টা থেকে শুরু হয় শুনানি।

বাংলাদেশের সংবাদমাধ্যম সূত্রে জানা গিয়েছে, শীর্ষ আদালতে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে একাধিক যুক্তি দিয়েছে হাসিনা সরকার। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের নেতৃত্বাধীন বেঞ্চের সামনে আইনজীবী আমিনউদ্দিন জানিয়েছেন, সংরক্ষণ নিয়ে জুন মাসে হাইকোর্ট যে রায় দিয়েছে, তাতে স্ববিরোধিতা রয়েছে। সেই কারণেই রায়টি বাতিলের আবেদন জানানো হচ্ছে। সংরক্ষণ নিয়ে সংস্কারের নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছিল হাসিনা সরকার। এই ধরনের সিদ্ধান্তে আদালত আদৌ হস্তক্ষেপ করতে পারে না।

হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে রবিবার হাসিনা সরকারের লিভ টু আপিলের শুনানি হয়। সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে শুনানির পরে দুপুর দেড়টায় রায় দেওয়া হয়।

আরও পড়ুন: বাংলাদেশে জারি ‘শ্যুট অ্যাট সাইট’ অর্ডার! দেশজুড়ে কারফিউ, কোটা নিয়ে আজই নিদান সুপ্রিম কোর্টের

সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার সংস্কার নিয়ে গত কয়েকদিন ধরে বাংলাদেশজুড়ে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। পরিস্থিতি সামলাতে শুক্রবার রাত থেকে কার্ফু জারি ও সেনা মোতায়েন করে বাংলাদেশ সরকার। গত কয়েকদিনে ছাত্র-পুলিশের সংঘর্ষে প্রায় ১৩৩ জনের মৃত্যু হয়েছে বলে জানা গিয়েছে৷

কার্ফুর মধ্যেই রবিবার সকালে সুপ্রিম কোর্টের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চে কোটা নিয়ে শুনানি শুরু হয়। বাংলাদেশের পক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল হাইকোর্টের আদেশ বাতিল চেয়ে আবেদন করেন।

শিক্ষার্থীদের পক্ষে বক্তব্য দেয়ার জন্য পাঁচজন আইনজীবীকে অনুমতি দেয় আদালতও। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে অংশ নেওয়া ন’জন আইনজীবীর মধ্যে আটজনই হাইকোর্টের আদেশ বাতিল করার পক্ষে মত দেন। একজন আইনজীবী কোটা সংস্কারের পক্ষে মতামত দেন।

এর আগে ২০১৮ সালে কোটা নিয়ে আন্দোলনের মুখে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল সরকার। সেই রায়ের বিরুদ্ধে রিট করা হলে চলতি বছরের ৫ জুন ওই পরিপত্র অবৈধ ঘোষণা ও কোটা পুনর্বহাল করে রায় দিয়েছিল হাইকোর্টের একটি বেঞ্চ। এর পরেরদিন থেকে কোটা ব্যবস্থার বাতিল চেয়ে আন্দোলন শুরু করে দেন বাংলাদেশের শিক্ষার্থীরা।