পুলিশের চোখ এড়িয়ে পালিয়েছিল আসামি, ধরল পাশের জেলার সিভিক ভলেন্টিয়ার 

বর্ধমান: হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া কুখ্যাত আসামী আবার পাকড়াও হল সিভিক ভলেন্টিয়ার ও পুলিশের তৎপরতায়। ফের গ্রেফতার হওয়া দুস্কৃতীর নাম রবীন মণ্ডল। সে পূর্ব বর্ধমানের মঙ্গলকোটের যজ্ঞেশ্বরডিহির আদি বাসিন্দা।

জেলা পুলিশ সুপার আমনদীপ জানান,  বর্তমানে সে বীরভুমের নানুরে থাকত। নানুর থানারই একটি বড় মামলায় অভিযুক্ত সে। মঙ্গলবার  দুপুরে বোলপুর মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করাতে তাকে আনা হয়েছিল। সে সময়েই পুলিশের চোখে ধুলো দিয়ে পালিয়ে যায় ওই আসামী।

সঙ্গে সঙ্গেই বীরভুম ও লাগোয়া বর্ধমানের থানাগুলিকে অ্যালার্ট করা হয়। ছোঁড়া ফাঁড়িতেও ছবি পাঠিয়ে খবর দেওয়া হয়। এদিকে, পূর্ব বর্ধমানের ভেদিয়ার কাছে বাগবাটি মোড়ে  একজন সিভিক ভলেন্টিয়ার যানবাহন সামলাচ্ছিল। তাঁকে নিয়ে আসামী ধরতে অভিযান শুরু করে পুলিশ সাতলা গ্রামে।

আরও পড়ুন- ৭ মাসের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় অলিম্পিক্সে ! মিশরের ফেন্সার নাদা হাফেজকে কুর্নিশ

জানা যায়, মোবাইলে থাকা ছবি মিলিয়ে সন্দেহ বাড়ায়  আসামীকে চেজ করা হয়। এদিকে, পুলিশ দেখেই ছুটতে শুরু করে আসামী। ওই সময়   সিভিক  ভলেন্টিয়ার সুধাংশু জোয়ারদার তাকে ছুটে গিয়ে ধরে ফেলে।

এর পর ছোড়া ফাঁড়ি এবং নানুর থানার যৌথ অভিযানে সে আবার পুলিশের হাতে ধরা পড়ে। সিভিক ভলেন্টিয়ার সুধাংশু জোয়ারদারের তৎপরতা এই আসামীকে ধরিয়ে দিল।

এই রবীন মণ্ডল একটি চাঞ্চল্যকর মামলার আসামী। জানা গিয়েছে, বীরভূমের নানুরের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে স্ত্রীকে খুন ও নাবালিকা যুবতীকে ধর্ষণ করার মামলায় অভিযুক্ত সে।

স্থানীয় ও পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামের বাসিন্দা কণিকা দাসের দীর্ঘ কয়েক বছর আগে  মঙ্গলকোট থানা যোগেশ্বরডিহির বিকাশ দাসের সঙ্গে বিয়ে হয়। তাঁদের একটি কন্যা সন্তান হয়।

তাদের সাংসারিক বিবাদ শুরু হয় বিবাহ বিচ্ছেদ হয়। ২০১৫ সালে যোগেশ্বরডিহি  গ্রামের বাসিন্দা রবীন মণ্ডলের সঙ্গে দ্বিতীয়বার বিয়ে হয়। কনিকা দাস প্রথম পক্ষের কন্যাকে নিয়ে দ্বিতীয় পক্ষের স্বামীর সাথে নানুরের শ্রীকৃষ্ণপুর গ্রামে বসবাস করতেন।

বিয়ের পর থেকে প্রায় দিন চলত ঝামেলা অশান্তি। তার পর ৮ জুলাই স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া চরমে পৌছায়। ৯ জুলাই কনিকা দাসের বাড়ির লোকজন জানতে পারে সে নিখোঁজ রয়েছে। তার পর খোঁজাখুঁজি করে পাওয়া না গেলে ১১  জুলাই নানুর থানায় নিখোঁজ বলে লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয়।

১২ জুলাই সকাল ৭ টা নাগাদ গ্রামের পাশে অজয় নদী থেকে কনিকা দাসের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে নামে নানুর থানার পুলিশ। পরিবারের লোকজন ও পুলিশ কনিকা দাসের বছর ১৩ নাবালিকা কন্যাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে জানতে পারে, ৮  জুলাই গভীর রাতে রবিন মণ্ডল স্ত্রীকে মেরে গ্রামের পাশে অজয় নদীতে ফেলে দিয়েছে।

আরও জানা যায়, প্রথম পক্ষের ১৩ বছর বয়সী নাবালিকা যুবতীকে নিয়ে একসঙ্গে থাকার কারণে দীর্ঘ দু’বছর ধরে রবিন মন্ডল নাবালিকা যুবতীর সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতো। একাধিকবার শারীরিক সম্পর্কের বাধা দেওয়ার কারণে মা ও মেয়েকে মারধর ও এই ঘটনা প্রকাশ করলে মা ও মেয়েকে প্রাণে মেরে দেওয়ার হুমকি দিয়ে বারবার শারীরিক সম্পর্ক করতো নাবালিকা যুবতীর সঙ্গে।

এমনকী, যে রাত্রে রবিন মণ্ডল কনিকা দাস কে প্রাণে মারে, সেই রাত্রেও নাবালিকা যুবতীর সঙ্গে একাধিকবার শারীরিক সম্পর্ক করে প্রাণে মেরে ফেলার ভয় দেখিয়ে।  এই অভিযোগে রবীন মণ্ডলের বিরুদ্ধে ১৩ জুলাই নানুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করা হয় মেয়ের বাপের বাড়ির তরফে। তারপর নানুর থানার পুলিশ রবীন মন্ডলকে গ্রেপ্তার করে।

 তারপর, আদালত তাকে জেল হেফাজতের নির্দেশ দেয়। জেল হেফাজতে থাকাকালীন মঙ্গলবার  বোলপুর মহকুমা  হাসপাতালে মেডিকেল করাতে নিয়ে আসা হয়  রবীন মণ্ডলকে। আর সেই সুযোগে মেডিকেল করার সময় অভিযুক্ত রবীন মন্ডল পুলিশদের চোখে ফাঁকি দিয়ে পালিয়ে যায়।