মেচা সন্দেশ

Bengal Sweets: ঠিক যেন টুপি পরা লাড্ডু, খেয়ে ফিদা হয়েছিলেন খোদ রাজা, সেই থেকে পথ-চলা শুরু বাঁকুড়ার মেচা সন্দেশের

বাঁকুড়া: চিনির মোড়কে মোড়া অপূর্ব সুস্বাদু মিষ্টি বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড় -এর প্রসিদ্ধ মেচা সন্দেশ।  এই সন্দেশের নেপথ্যে রয়েছে শত শত বছরের ইতিহাস। জড়িয়ে রয়েছে বিষ্ণুপুরের মল্লরাজ পরিবার। তৎকালীন সময়ে প্রথম যে মিষ্টির দোকানে মেচা সন্দেশ তৈরি শুরু হয়েছিল, সেই দোকানে ২০২৪ সালে প্রায় ছয় পুরুষ পরেও চলছে মেচা তৈরি। বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়-এর এই মিষ্টি অন্যান্য আর পাঁচটা মিষ্টির মত নয়। ই মিষ্টির রয়েছে একটি দুর্দান্ত সিক্রেট, যার জন্য সপ্তাহর পর সপ্তাহ রেখে দিয়ে খাওয়া যায় এই সন্দেশ।

বাঁকুড়ার দুর্গাপুর রাজ্য সড়কের ছোট্ট জনপদ বেলিয়াতোড়। বেলিয়াতোড়েই জন্ম হয়েছিল জগত বিখ্যাত ভাস্কর এবং শিল্পী যামিনী রায়-্এর। এছাড়াও বেলিয়াতোড়ের অন্য একটি পরিচয় রয়েছে, এই বেলাইতোড়েই জন্ম মেচা সন্দেশের। এখানেই প্রায় কুড়িটি পরিবার এই মেচা সন্দেশ তৈরির কাজে ব্যস্ত থাকেন সারা বছর। যেমনভাবে বিখ্যাত কলকাতার রসগোল্লা, জয়নগরের মোয়া, জনাই-এর মনোহরা, তেমনভাবেই বিখ্যাত বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়-এর মেচা।

মেচা তৈরি করার একটি বিশেষ পদ্ধতি রয়েছে। মেচা সন্দেশ প্রস্তুতকারক ভগবান দাস মোদক জানান, ” ছোলার ডাল মেশিনে পিশে নিয়ে বেসন তৈরি করা হয়। বেসনের থেকে গাঠিয়া তৈরি করা হয় যাকে আঞ্চলিক ভাষায় চোনা বলে। গাঠিয়া গুঁড়ো করে তাতে দুধের ক্ষীর, চিনি, গাওয়া ঘি এবং এলাচ পরিমাণ মত মিশিয়ে একটি মন্ড তৈরি করা হয়। এবার সেই মণ্ডকে গোল গোল লাড্ডুর মত পাকিয়ে ছাড়া হয় চিনির রসে। মেচা সন্দেশ অনেকটা দেখতে টুপি পরা লাড্ডুর মত।”

বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়-এর প্রসিদ্ধ মেচা সন্দেশের রয়েছে লম্বা ইতিহাস।বেলিয়াতোড় উচ্চ বিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক উজ্জ্বল দত্ত জানালেন, তৎকালীন সময়ে পাওয়া যেত না রসগোল্লার মত রসের মিষ্টি। তাছাড়া রসের মিষ্টি নষ্ট হয়ে যায় খুব তাড়াতাড়ি। তাই বানানো হত এই মেচা সন্দেশ। একবার বিষ্ণুপুরের মল্লরাজা বেলিয়াতোড় এসে মেচা সন্দেশ খেয়ে প্রেমে পড়ে যান এবং তখন থেকেই আদি শ্রীদাম মোদকের মিষ্টির দোকানে শুরু হয় মেচা তৈরি। বেলিয়াতোড় থেকে বিষ্ণুপুরের রাজারা নিয়ে যেতেন সেই মিষ্টি।  এই মিষ্টির ইতিহাস।

চিনির মোড়কে মোড়া মেচা সন্দেশ ১৫ থেকে ২০ দিন ফ্রিজ ছাড়াই ভাল থাকে । বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়-এর মেচা সন্দেশের সবচেয়ে পুরানো এবং প্রথম দোকান ‘রিদম মোদক’। এই দোকানের ষষ্ঠ পুরুষ রোহন দে মোদক জানান, “কাঠের উপরে যে-রকম বার্নিস থাকে, ঠিক সেই রকমই নরম সন্দেশের উপরে চিনির মোড়ক একটি ‘প্রোটেকটিভ লেয়ার’- এর কাজ করছে। সন্দেশের ভিতর আদ্রতা ঢুকতে পারে না, তাই এই মিষ্টি সপ্তাহের পর সপ্তাহ ভাল থাকে।” বাঁকুড়ার এই প্রসিদ্ধ মিষ্টি লড়াই করছে জিআই তকমার জন্য, এই লড়াই প্রায় শেষের মুখে পৌঁছে গিয়েছে। সব ধাপ পেরিয়ে শেষ ধাপে এখন অগ্নিপরীক্ষা চলছে মেচা সন্দেশের। এই ধাপ পার করলেই সরকারিভাবে ‘জিওগ্রাফিক্যাল আইডেন্টিটি’-র তকমা পাবে মেচা সন্দেশ।

নীলাঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়