শুক্র থেকে দেশে ভোট

BJP-Congress: ২৭৬ আসনে মুখোমুখি লড়াই! রেকর্ড কম প্রার্থী কংগ্রেসের, বিজেপি-র লড়াই ‘ইন্ডিয়া’র সঙ্গে!

নয়াদিল্লি: লোকসভা নির্বাচনে এখনও পর্যন্ত ২০টি তালিকায় ২৮২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে কংগ্রেস। সেখানে বুধবার পর্যন্ত বিজেপি ১২টি তালিকায় ঘোষণা করেছে ৪৩২ প্রার্থীর নাম। সমস্ত পরিসংখ্যান বিশ্লেষণ করে নিউজ ১৮ দেখছে, কংগ্রেসের এখনও পর্যন্ত ৪৫টি আসনে প্রার্থী দেওয়া বাকি। অন্য দিকে, বিজেপি ১০টি অতিরিক্ত নাম প্রকাশ করবে বলে অনুমান করা হচ্ছে।

দেখা যাচ্ছে, বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হচ্ছে ২৭৬টি আসনে। আঞ্চলিক দলগুলিও ভোটের ময়দানে থাকছে। তবে এই আসনগুলির মধ্যে বেশ কিছু এমন নির্বাচনী এলাকাও রয়েছে যেখানে দুটি দলের কেউই এখনও পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করতে পারেনি।

যে রাজ্যগুলিতে কংগ্রেস এখনও পর্যন্ত প্রার্থী দিতে পারেনি, তার মধ্যে সবার আগে রয়েছে হরিয়ানা। এখানে বিজেপি ১০ প্রার্থীর নাম ঘোষণা করলেও কংগ্রেস একজন প্রার্থীকেও এখনও পর্যন্ত দাঁড় করাতে পারেনি। এছাড়া অন্ধ্র প্রদেশ (১২), পাঞ্জাব (৭), তেলেঙ্গানা (৩), ওড়িশা (২), উত্তর প্রদেশ (২), বিহার (৬) এবং হিমাচল প্রদেশে (২) কংগ্রেসের প্রার্থী ঘোষণা বাকি রয়েছে। বিজেপির জম্মু ও কাশ্মীর (৩), পঞ্জাব (৪) এবং উত্তর প্রদেশে (২) প্রার্থীর নাম ঘোষণা বাকি। কোনও দলই লাদাখের একমাত্র আসনের জন্য এখনও প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেনি।

আরও পড়ুন: অধীর চৌধুরীর গলায় CPIM-এর উত্তরীয়! সঙ্গে সেলিম, মুর্শিদাবাদ দেখল ‘জোটের’ জোর

যদিও চূড়ান্ত পর্যায়ের মনোনয়নে কংগ্রেসের মোট প্রার্থীর সংখ্যা ৩৩০-এ পৌঁছতে পারে বলে অনুমান করা হচ্ছে। লোকসভা নির্বাচনের ইতিহাসে কখনও গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি ৪০০ আসনের নিচে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেনি। ২০০৪ সালে ৪১৭ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছিল কংগ্রেস। এখনও পর্যন্ত এটাই সর্বনিম্ন। ১৯৯১-৯২ সালের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি সবচেয়ে বেশি ৪৪৭ জন প্রার্থী দিয়েছিল।

এবার জোটের দলগুলিকে জায়গা ছেড়ে দিয়ে সবচেয়ে কম আসনে লড়ছে কংগ্রেস। বিভিন্ন রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে, গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াইয়ে আসন ভাগাভাগির ভিত্তিতে আঞ্চলিক দলগুলির সঙ্গে হাত মিলিয়েছে।

তামিলনাড়ু: প্রথম দফায় সবচেয়ে বড় রাজ্য হিসেবে তামিলনাড়ুতে নির্বাচন হতে চলেছে। একদিনে ৩৯টি আসনেই ভোট হবে। ৯টি আসনে লড়ছে কংগ্রেস। বিজেপি ২৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ২০১৯-এর ভোটে কংগ্রেস ৮টি জিতেছিল। বিজেপি পেয়েছিল শূন্য। সবচেয়ে বেশি অর্থাৎ ২৪টি আসনে জিতেছিল ডিএমকে।

তামিলনাড়ুতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে সাতটি আসনে জোর লড়াই হতে চলেছে। সেগুলি হল – কৃষ্ণগিরি, তিরুভাল্লুর, করুর, বিরুধুনগর, শিবগঙ্গা, তিরুনেলভেলি এবং কন্যাকুমারী। এই আসনগুলোতে দুই জাতীয় দলের সঙ্গে লড়াই করছে এআইএডিএমকে এবং ডিএমডিকে-ও। পুদুচেরির একমাত্র লোকসভা আসনেও এআইএডিএমকে, বিজেপি এবং কংগ্রেস লড়ছে। এই আসনে বিএসপি-ও প্রার্থী দিয়েছে।

কেরলে ১৬ জন করে প্রার্থী: কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়ই কেরলে ১৬ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। দ্বিতীয় দফার ভোটে রাজ্যের ১৩ টি আসনে বিজেপি ও কংগ্রেসের মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে। ওয়ানাড থেকে কংগ্রেসের প্রার্থী হয়েছেন রাহুল গান্ধি। তাঁর বিপরীতে রয়েছেন বাম প্রার্থী অ্যানি রাজা এবং বিজেপির কেরল ইউনিটের সভাপতি কে সুরেন্দ্রন। আটিংগালে, বিজেপির ভি মুরালীধরন কংগ্রেসের বর্তমান সাংসদ অদুর প্রকাশকে চ্যালেঞ্জ করছেন। তিরুবনন্তপুরমে কংগ্রেসের শশী থারুর এবং বিজেপির রাজীব চন্দ্রশেখরের মধ্যে লড়াই হচ্ছে। আলাপুঝায় কংগ্রেস নেতা কেসি ভেনুগোপাল বিজেপির শোভা সুরেন্দ্রনের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

বাকি কাসারগোড, কান্নুর, ভাটাকারা, কোঝিকোড়, পালাক্কাদ, আলাথুর, ত্রিশুর, এরনাকুলাম এবং পাথানামথিট্টা আসনে বিজেপির সঙ্গে সম্মুখসমরে নামছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালে কেরলের ২০ টি আসনের মধ্যে কংগ্রেস ১৫টি আসনে জিতেছিল। কংগ্রেস নেতৃত্বাধীন জোট ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের ঝুলিতে যায় মোট ১৯টি আসন। একটা পায় সিপিআই(এম)।

১০ রাজ্য/কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে বিজেপি-কংগ্রেস সব আসনে লড়ছে: ২৭টি লোকসভা আসন সহ ১০টি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে দুটি দল সরাসরি লড়াই করছে। এর মধ্যে রয়েছে একক আসনের পুদুচেরি, সিকিম, আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ, চণ্ডীগড় এবং মিজোরাম।

উত্তরাখণ্ডের পাঁচটি আসনেও দুই দল একে অপরের বিরুদ্ধে মুখোমুখি হবে। একইভাবে, অরুণাচল প্রদেশ, গোয়া, দাদরা এবং নগর হাভেলির দুটি করে আসন এবং দমন ও দিউতে দুটি দলের মধ্যে মুখোমুখি লড়াই হবে।

যে রাজ্যে বিজেপি এবং কংগ্রেস সব আসনে একে অপরের বিরুদ্ধে লড়াই করবে সেটা হল ছত্তিশগড়। ১১টি আসনে কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে লড়াই হতে চলেছে।

গুজরাত, কর্নাটক, মধ্যপ্রদেশ এবং রাজস্থানের প্রায় সব আসনেই মুখোমুখি লড়াই: জোটের জন্য ছেড়ে দেওয়া কয়েকটি আসন বাদে এই চার রাজ্যে সরাসরি লড়াইয়ে নামছে কংগ্রেস এবং বিজেপি।

গুজরাতে বিজেপি ২৬টি আসনে লড়ছে, কংগ্রেস মাত্র ২৪টি আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। ২০১৯ সালে রাজ্যের সবকটা আসনে জিতেছিল বিজেপি।

কর্ণাটকে, কংগ্রেস ২৮টি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিজেপি জনতা দল (সেকুলার)-এর সঙ্গে হাত মিলিয়ে তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে।এই রাজ্যের অন্তত ২৫টি আসনে, কংগ্রেস ও বিজেপির মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে। ২০১৯ সালে বিজেপি ২৫টি আসন জিতেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল ১টা আসন।

মধ্যপ্রদেশে ২৯টি আসনের মধ্যে ২৮টি আসনে দুই দল একে অপরের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। বিজেপি সবকটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। কংগ্রেস সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে আসন ভাগাভাগি করছে। রাজ্যের শেষ ভোটে বিজেপি ২৮টি আসন জিতেছিল। কংগ্রেস পেয়েছিল একটি আসন।

একই অবস্থা রাজস্থানেও। ২৫টি লোকসভা আসনের মধ্যে, দুটি দল ২২টি আসনে সরাসরি লড়াই করছে। জোট সঙ্গীদের জন্য তিনটি আসন ছেড়ে দিয়েছে কংগ্রেস। ২০১৯ সালে রাজস্থানে বিজেপি ২৪টি আসন জিতেছিল। কংগ্রেস খাতা খুলতে পারেনি।

উত্তর প্রদেশ, ৮০টি লোকসভা আসন নিয়ে সবচেয়ে বড় রাজ্য: উত্তর প্রদেশে সবচেয়ে বেশি লোকসভা আসন, ৮০টি। প্রায় সব আসনেই প্রস্তুতি চললেও কায়সারগঞ্জ ও রায়বরেলিতে কোনও দলই এখনও পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি।

দুটি আসনেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে বিজেপি। কায়সারগঞ্জে লড়াই হবে সমাজবাদী পার্টির সঙ্গে, রায়বরেলিতে কংগ্রেসের বিরুদ্ধে। আসন্ন লোকসভা ভোটে এসপি ও কংগ্রেস জোট বেঁধে লড়ছে।

উত্তরপ্রদেশে কংগ্রেস ১৭টি আসনে লড়বে। ১৫ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করে দিয়েছে। রায়বেরেলি এবং আমেঠি এখনও বাকি। অন্য দিকে, বিজেপি ৭৩ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। আপনা দল (সোনেলাল) এবং রাষ্ট্রীয় লোকদল (দুটি আসন) এবং সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টি (একটি আসন)-এর সঙ্গে জোট বেঁধেছে বিজেপি।

যে ১৭ আসনে কংগ্রেস লড়ছে, সেখানে বিজেপির সঙ্গে তাদের সরাসরি লড়াই। ২০১৯-এর নির্বাচনে ৮০টি আসনের মধ্যে ৬২টি আসনে জিতেছিল বিজেপি। তবে সব নজর থাকবে বারাণসীর দিকে। এখানে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বিরুদ্ধে অজয় রাইকে প্রার্থী করেছে কংগ্রেস। মথুরায় পদ্মপ্রতীকে দাঁড়িয়েছেন হেমা মালিনী।

এই আসনগুলি ছাড়াও কানপুর, সাহারানপুর, আমরোহা, গাজিয়াবাদ, বুলন্দশহর, ফতেহপুর সিক্রি, মহারাজগঞ্জ, দেওরিয়া, বাঁশগাঁও, সীতাপুর, ঝাঁসি, এলাহাবাদ, বারাবাঙ্কি, রায়বেরেলি এবং আমেঠিতে দুই দলের মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে।

অন্যান্য রাজ্য, কেন্দ্র শাসিত অঞ্চল: জম্মু ও কাশ্মীরে বিজেপি পাঁচটি আসনেই লড়ছে, যদিও এখনও পর্যন্ত তিনজন প্রার্থীর নাম ঘোষণা বাকি। দুটি আসনে, কংগ্রেস এবং বিজেপির মধ্যে সরাসরি লড়াই হবে। কারণ জম্মু ও কাশ্মীর ন্যাশনাল কনফারেন্সের সঙ্গে জোট বেঁধে তিনটি আসনে লড়ছে কংগ্রেস। এই আসন ভাগাভাগিতে কংগ্রেস লাদাখও পেয়েছে, ২০ মে ভোট।

দিল্লিতে বিজেপির বিরুদ্ধে আপ ও কংগ্রেস হাত মিলিয়েছে। রাজধানীর তিনটি আসনে দুই দলের সরাসরি লড়াই।

অন্ধ্রপ্রদেশে ২৫টি আসন। দুটি দল মাত্র পাঁচটি আসনে সরাসরি লড়াই করছে – আনাকাপল্লি, রাজামুন্দ্রি, নরাসাপুরম, তিরুপতি এবং রাজামপেট। বিজেপি ছয়টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে, তেলেগু দেশম পার্টিকে ১৭টি এবং জনসেনা পার্টিকে দুটি আসন ছেড়ে দিয়েছে।

কংগ্রেস এখন পর্যন্ত ১১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। ১২ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা বাকি। সিপিআই এবং কমিউনিস্ট পার্টি অফ ইন্ডিয়া (মার্কসবাদী)-র জন্য একটি করে আসন ছেড়ে দিয়েছে।

একইভাবে ত্রিপুরায় কংগ্রেস এবং সিপিআইএম হাত মিলিয়ে লড়ছে। একটি করে আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। ত্রিপুরায় একটি আসনে বিজেপি ও কংগ্রেসের সরাসরি লড়াই।

অসমে বিজেপি ১১ জন প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে, সহযোগী অসম গণ পরিষদ (এজিপি) এবং ইউনাইটেড পিপলস পার্টি লিবারেল (ইউপিপিএল)-এর জন্য একটি করে আসন ছেড়ে দিয়েছে। বিজেপি ১০টি আসনে সরাসরি কংগ্রেসের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবে। গ্র্যান্ড ওল্ড পার্টি রাজ্যের ১৪টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে লড়ছে।

বিহারে, বিজেপি ১৭টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে। কংগ্রেস নয়টি আসনে। জোটসঙ্গীদের জন্য বাকি আসন ছেড়ে দিয়েছে। পাঁচটি আসনে দুই দলের সরাসরি লড়াই।

মহারাষ্ট্রে ৪৮টি লোকসভা আসনের মধ্যে বিজেপি ২৫টি এবং কংগ্রেস ১৫টি আসনে প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে৷ যদিও বিজেপি এখনও প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি। দুটি দল কমপক্ষে ১৫টি আসনে একে অপরের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছে৷

২০২৪-এর লোকসভা ভোট দুই দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। পুরনো দিন ফিরে পেতে চাইছে কংগ্রেস। বিজেপির লক্ষ্য তৃতীয়বারের জন্য সরকার গঠন। শেষ হাসি কে হাসবে? জানা যাবে ৪ জুন।