কলকাতা: গত কয়েক বছর ধরেই চোখে ভাল দেখতে পেতেন না। শেষের দিকে তো দৃষ্টিশক্তি একেবারেই হারিয়েছিলেন বলা চলে। নিজে নিজে কিছু পড়া বা লেখা আর সম্ভব হয়ে উঠছিল না। নিজের লেখা শেষ বইটা তাই মুখে মুখে বলেছিলেন, লিখেছিলেন অন্যজন৷ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের সেই চোখের দু’টি কর্নিয়া বর্তমানে দৃষ্টি ফিরিয়ে দিয়েছে দু’টি মানুষের৷ সদ্য প্রয়াত পশ্চিমবঙ্গের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী শুধুমাত্র তাঁর চক্ষুদানই করে যাননি, তাঁর মরণোত্তর দেহ দান করে গিয়েছেন চিকিৎসক ছাত্রছাত্রীদের গবেষণায়৷ দীর্ঘদিন ধরেই ছিলেন অসুস্থ৷ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা বেজে ২০ মিনিটে নিজের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাটেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন তিনি৷
তাঁর চক্ষুদানের নথি দেখে জানা যায় ২০০৬ সালের ৮ মার্চ তাঁর চক্ষু ও দেহ দানের অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য৷ তখন তাঁর বয়স ৬২ বছর৷
অঙ্গীকারপত্রে লেখা ছিল, ‘ আমি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বয়স ৬২ পেশা রাজনীতি মানসিক দিক থেকে সম্পূর্ণ সুস্থ এবং যথার্থ৷ বিচার বিবেচনায় সক্ষম, এতদ্বারা চক্ষু/ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ ও কোষাদিসহ আমার নশ্বর দেহটি চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিকল্পে দান করতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলাম৷
আমি ঘোষণা করছি যে, আমার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গেই আমার চক্ষু/ দেহ চিকিৎসাবিজ্ঞানের এক্তিয়ারভুক্ত হবে৷
আমি আরও ঘোষণা করছি যে, আমি কোনও প্রকার ভীতি প্রদর্শন অথবা প্ররোচনা ছাড়াই স্বতঃপ্রবৃত্ত হয়ে সম্পূর্ণ জ্ঞানে এই প্রতিজ্ঞাপত্র স্বাক্ষর করছি৷
আমাপ নাম বা ঠিকানার কোনও পরিবর্তন হলে তা যথাসময়ে গণদর্পণকে জানিয়ে দেওয়া হবে৷
আমি আজ বুধবার ২০০৬ সালের মার্চ মাসের ৮ তারিখে এই প্রতিজ্ঞাপত্রে স্বাক্ষর করলাম৷’
অঙ্গীকারপত্রে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের ঠিকানা লেখা ছিল ৩১, আলিমুদ্দিন স্ট্রিট, কলকাতা৷ স্বাক্ষরকালীন সাক্ষী হিসাবে অঙ্গীকারপত্রে সই করেছিলেন নিরুপম সেন এবং মদন ঘোষ৷
বৃহস্পতিবার সকাল ৮:২০ মিনিটে ইহলোক ত্যাগ করেন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। দুপুর দুটো নাগাদ বালিগঞ্জের পাম অ্যাভিনিউয়ের ফ্ল্যাট থেকে তাঁর মরদেহ নিয়ে শকট পৌঁছয় পিস ওয়ার্ল্ডে। সেখানেই শায়িত ছিলেন প্রবাদপ্রতিম রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মরদেহ। শুক্রবার শেষযাত্রায় প্রথমেই তাঁর দেহ নিয়ে যাওয়া হয় রাজ্য বিধানসভায়। সেখানেই তাঁকে শ্রদ্ধা জানান বিধায়ক, সাংসদ থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ৷
বিধানসভা ভবনে এক ঘণ্টা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের দেহ শায়িত থাকার পরে, তাঁর দেহ শেষবারের মতো নিয়ে যাওয়া হয় আলিমুদ্দিন স্ট্রিটে৷সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় দীনেশ মজুমদার ভবনে। আলিমুদ্দিনে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে শ্রদ্ধা জানালেন বাম নেতা, কর্মী সমর্থকেরা। শ্রদ্ধা জানালেন বিমান বসু, সূর্যকান্ত মিশ্র-সহ একাধিক নেতারা। বাংলার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রীকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন ত্রিপুরার প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী মানিক সরকার, প্রকাশ কারাত, বৃন্দা কারাত। আলিমুদ্দিনে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হয়েছিলেন প্রচুর মানুষ।
গত বৃহস্পতিবার তাঁর প্রয়ানের চারঘণ্টার মধ্যে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা এসে নিয়ে যান তাঁর কর্নিয়া দ্বয়। জানা গিয়েছে, গতকালই তাঁর কর্নিয়া দু’জনকে দান করা হয়েছে৷