কলকাতা: ট্যাংরা হাউজিং এস্টেট৷ এ থেকে জেড বিশালাকার জমির মাঝে দাঁড়িয়ে একাধিক অট্টালিকা৷ তখন অবশ্য কমপ্লেক্স বলার সময় আসেনি৷ রাজ্য আবাসন দফতরের হাউজিং এস্টেট। সেখানেই নানা পেশার, নানা রাজনৈতিক দলের নানা মহলের মানুষ থাকতেন।
এই হাইজিং এস্টেটের E বিল্ডিংয়ের ৬ ফ্ল্যাটে থাকতেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। বাবা-মায়ের সঙ্গেই থাকতেন বুদ্ধবাবু৷ ততদিনে তিনি ডিওয়াইএফআইয়ের অন্যতম নেতা৷ আবার তিনি দমদমের একটি স্কুলেই শিক্ষকতা করতেন। তবে রাজনীতির পাঠকে দূরে সরিয়ে রেখেই তিনি ছিলেন ট্যাংরা হাউজিং এস্টেটে।
E ব্লকের ৬ নম্বর ফ্ল্যাটে অবশ্য অন্য পরিবার থাকে এখন৷ তবে ৫ নম্বর ফ্ল্যাটে যাঁরা থাকতেন তাঁরা এখনও আছেন। পেশায় পূর্ত দফতরের ঠিকাদার সোমনাথ সাহা বলছেন, “ওঁর নাম যে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য আমরা তাই জানতাম না। খুব একটা মেলামেশা করতেন না। একদিন ওঁর মা’কে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার ছেলে কী করেন? তাতে ওঁর মা আমাকে নিয়ে গেলেন ওনাদের ঘরে। গিয়ে দেখি মেঝে ভর্তি ছড়ানো বই, খাতা। সেই আলাপ। এর পরেও যে প্রতিদিন কথা হত এমন নয়। তবে দেখা হলেই স্মিত হাসি দিয়ে জানতে চাইতেন ভাল আছি কিনা।”
স্মৃতি কথায় উঠে এল, প্রথমবার ভোটে যখন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য লড়াই করছেন কাশীপুর আসন থেকে সেইসময়। তখন তিনি এই বাড়িতেই থাকতেন৷ সোমনাথ বাবু বলছেন, “সকালে ভোটের রেজাল্ট বেরনোর দিন আমরা তো টিভি দেখে অবাক৷ আমাদের দেখা সেই ছেলে ভোটে জিতে গিয়েছে। রাজ্য মন্ত্রীসভায় প্রথম যখন তিনি সদস্য হন, তখনও সেই ফ্ল্যাট নম্বর ছয়। এরপর অবশ্য লোকজনের আনাগোনা বাড়ল৷ বাড়ল মন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর ব্যস্ততা। ট্যাংরা হাউজিং এস্টেটের দুই কামরার ছোট্ট ফ্ল্যাট ছেড়ে এন্টালি হয়ে রাজভবন৷ সেখান থেকে পাম অ্যাভিনিউয়ে চলে যান বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তাঁর মায়ের আমন্ত্রণে গিয়ে অবশ্য দেখা করার সুযোগ হয়েছে সোমনাথ বাবুর। এমনকি মীরা ভট্টাচার্য খোঁজ রাখতেন এই এস্টেটের। এদিন স্মৃতি কথা ভিড় করে আসছে এই সরকারি আবাসনে।
এখানেই থাকেন সুলতা সমাজদার। পানিহাটি পুরসভার বাম কাউন্সিলর ছিলেন দীর্ঘ পনেরো বছর। সুলতা দেবী ‘বুদ্ধদার’ স্মৃতিশক্তির গল্প করছিলেন। তিনি বলেন, “খড়দহ ফুলমেলার এক অনুষ্ঠানে গিয়েছেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখন তিনি রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠান শেষে মঞ্চ থেকে নামছেন। কিছুটা এগিয়েই আবার পিছন ফিরে তাকিয়ে ডেকে উঠলেন, “বুড়ি তুই? এখানে কি করছিস? ওহ তুই তো আমাদের কাউন্সিলর। ভাল থাকিস।” সুলতাদেবীর চোখের কোণে জল। পলেস্তারা খসে পড়া। শ্যাওলা জমা আবাসনের দেওয়াল জুড়ে নানা গল্প ঘুরে বেড়াচ্ছে শিক্ষক থেকে মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওঠা বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যর।