হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি হারানো শিক্ষক সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়৷

School teacher job cancel: ‘আবার সেই ভ্যান ঠেলতে হবে না তো?’, চাকরি হারিয়ে আতঙ্কে বর্ধমানের শিক্ষক

কলকাতা: কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে চাকরি হারিয়ে অথৈ জলে পড়েছেন প্রায় ২৬ হাজার শিক্ষক। যাঁদের মধ্যে অধিকাংশেরই দাবি, স্বচ্ছ ভাবে, মেধার জোরে চাকরি পেয়েছিলেন তাঁরা৷ ঠিক যেমন বর্ধমানের বাসিন্দা সুদীপ্ত চট্টোপাধ্যায়৷

রাষ্ট্রবিজ্ঞানের শিক্ষক সুদীপ্তর বাবা একসময় ভ্যানে মাল টানতেন৷ বাবার সঙ্গে সেই কাজ করতে হয়েছে সুদীপ্তকেও৷ তার সঙ্গে চলেছে পড়াশোনা করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার লড়াই৷  সেই লড়াইয়ে জয়ী হয়েই সরকারি স্কুলে শিক্ষকতার চাকরি পেয়েছিলেন বলে দাবি সুদীপ্তর৷ আজও বিশ্বাস করতে পারছেন না যে, যোগ্য মেধা নিয়ে শিক্ষকতা করতে গিয়ে,তার চাকরি চলে গিয়েছে।

সুদীপ্তর বাবা বাবুলাল চট্টোপাধ্যায় (৭৭)।তিনি সাইকেল ভ্যান চালিয়ে সুদীপ্তকে মানুষ করেছেন।পূর্ব বর্ধমানের কাঞ্চন নগরের বাড়িতে থেকেই সুদীপ্ত পড়াশোনা করেছেন।ছোট বেলা থেকেই পড়াশোনায় মেধাবী ছিলেন সুদীপ্ত।আর্থিক অনটনের সঙ্গে যুঝতে বাবার সঙ্গে মাল বোঝাই  ভ্যান ঠেলে বাবাকে সাহায্যও করতে হয়েছে তাঁকে।

পশ্চিম বঙ্গ স্কুল সার্ভিসে সুযোগ পাওয়ার আগে একটি কলেজে পড়াতেন সুদীপ।তারপর মাদ্রাসাতেও চাকরি পেয়েছিলেন। ২০১৬ চাকরি পান বর্ধমানের কেতুগ্রাম (১) ব্লকের আমগড়িয়া গোপাল পুর আরজিএম ইনস্টিটিউশনে। বাড়িতে বাবা বাবুলাল চট্টোপাধ্যায় ছাড়াও,মা ঝর্না চট্টোপাধ্যায় রয়েছেন(৬৬)। দু জনেই অসুস্থ।ঝরনা হৃদরোগে আক্রান্ত। সুদীপের এক ছেলে(৭) ও এক মেয়ে(১৩)।তারা ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ে।

আরও পড়ুন: রাজ্যে বৃষ্টির আশা মাত্র দুই জেলায়, চরম তাপপ্রবাহ কোথায় কোথায়? রইল সর্বশেষ আপডেট

বাবা মায়ের ওষুধের পিছনেই মাস গেলে ছয় হাজার টাকা মতো খরচ বলে জানিয়েছেন চাকরি হারানো শিক্ষক। ছেলে মেয়ের পড়াশোনায় মাসে ১০-১২ হাজার টাকা খরচ হয়।তারপর সংসার চালিয়ে যতটুকু বাঁচে,সেটুকুই সঞ্চয়। উপরন্তু কো অপারেটিভের লোন রয়েছে।  হঠাৎ চাকরি চলে যাওয়ায় নিজের ডিগ্রি নিয়ে রীতিমতো দিশেহারা তিনি। চাকরি কি ফিরে পাবেন?এই প্রশ্ন বারে বারে করছেন সুদীপ্ত। কথা বলতে গিয়ে কন্ঠস্বর জড়িয়ে আসছে তাঁর, দু চোখে জল।

সুদীপ্ত বারবার ধরে বলছিলেন, ‘শিক্ষকতার চাকরি পেয়ে ভেবেছিলাম বাবা মায়ের চিকিৎসা করাতে পারব। ছেলেমেয়েকে উচ্চ শিক্ষিত করব। এখন ব্যাঙ্কের জমানো টাকা তুলছি। ছেলে – মেয়েকে সরকারি স্কুলে নিয়ে চলে আসব। ভাবতে পারছি না মন দিয়ে পড়াশোনা করে যোগ্যতা দেখিয়ে ,চাকরি পেয়ে লাভ কী হল! আবার বোধহয় ভ্যান ঠেলতে হবে!’