টেনিস খেলোয়াড় কন্যার জন্য কাতর আর্জি এক অসহায় বাবার; অথচ তাতেও মন গলল না বিমান সংস্থার

টেনিস খেলোয়াড় কন্যার জন্য কাতর আর্জি এক অসহায় বাবার; অথচ তাতেও মন গলল না বিমান সংস্থার

নয়াদিল্লি: সন্তানের ভবিষ্যৎ তৈরির জন্য প্রায় তিন দিন ধরে কাতর অনুরোধ করছিলেন এক অসহায় বাবা। কিন্তু তাঁর সেই কাতর আর্তিতে কর্ণপাত করল না বিমান সংস্থা। এখানেই শেষ নয়, অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া এবং রতন টাটার কাছেও অনুনয়-বিনয় করেছিলেন ওই বাবা। কিন্তু তাতেও চিঁড়ে ভেজেনি। এই বিষয়টা আসলে কী?

এই ঘটনাটি আবর্তিত হয়েছে নভজ্যোতি বৈশ্য এবং তাঁর টেনিস খেলায়াড় কন্যাকে ঘিরে। গত ২৮ জানুয়ারি দাম্মাম থেকে নভজ্যোতির কন্যা তাঁর মাকে নিয়ে দিল্লির আইজিআই বিমানবন্দরের উদ্দেশ্যে রওনা হয়েছিলেন। তার জন্য তাঁরা চেপে বসেছিলেন এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই-৯১৪-য়। আসলে হরিয়ানার সোনিপতে এআইটিএ টেনিস টুর্নামেন্ট চলছে। সেখানেই যোগ দেওয়ার কথা ছিল নভজ্যোতির কন্যার।

আরও পড়ুন– রাশিফল ৪ ফেব্রুয়ারি; দেখে নিন আপনার আজকের দিন নিয়ে কী জানাচ্ছেন জ্যোতিষী চিরাগ

বিমানবন্দর সূত্রে খবর, গত ২৮ জানুয়ারি দুপুরবেলা আইজিআই বিমানবন্দরে পৌঁছেছিলেন মা-মেয়ে। কিন্তু বিমান সংস্থার ভুলের কারণে তাঁদের সঙ্গে থাকা ব্যাগপত্র দাম্মাম বিমানবন্দরেই রয়ে গিয়েছিল। আর সেই কিট ছাড়া নভজ্যোতির কন্যা টুর্নামেন্টে যোগ দিতে পারত না। ব্যাগপত্র না পৌঁছনোয় দিল্লি বিমানবন্দরে এয়ার ইন্ডিয়ার কাছে একটি অভিযোগ দায়ের করেন মা-মেয়ে। এমনকী এয়ার ইন্ডিয়া প্রতিশ্রুতি দেয় যে, সোনিপতে সঠিক সময়ে তাঁদের কাছে ব্যাগপত্র পৌঁছে যাবে। কিন্তু সেই কথা তারা রাখেনি। এরপর মেয়ের ভবিষ্যতের কথা ভেবে উদ্বিগ্ন হয়ে মেসেজের মাধ্যমে এয়ারলাইন্সের সঙ্গে যোগাযোগ করেন নভজ্যোতি।

আরও পড়ুন– ভারত-পাকিস্তান বর্ডারের নাম সীমা হায়দার! রাজস্থানি ছাত্রের রাষ্ট্রবিজ্ঞান পরীক্ষার উত্তর পড়ে মাথায় হাত শিক্ষকের

২৮ জানুয়ারি সকাল ১১টা ৪৫ মিনিট নাগাদ নভোজ্যোতি লেখেন, এয়ার ইন্ডিয়ার বিমান এআই ৯১৪-র ব্যাগপত্র দাম্মামেই রয়ে গিয়েছে। যার কারণে তাঁর কন্যা সোনিপতে এআইটিএ টেনিস টুর্নামেন্টে যোগ দিতে পারবে না। যার জেরে তার এই সফর ব্যাহত হবে। তাই ব্যাগপত্র রাতের মধ্যেই পাঠিয়ে সাহায্য করার আর্জিও জানান তিনি।

নভজ্যোতির এই মেসেজের জবাবে এয়ার ইন্ডিয়া লেখে যে, “আপনাদের অসুবিধার জন্য আমরা দুঃখিত। অনুগ্রহ করে আপনাদের মোবাইল নম্বর, ব্যাগ ট্যাগ নম্বর এবং পিআইআর কপি দিয়ে রাখুন। যাতে ব্যাগপত্র খুঁজতে সুবিধা হয়।”

নভজ্যোতির মেসেজের ৬ মিনিটের মধ্যে এই জবাব আসে এয়ার ইন্ডিয়ার তরফে। ফলে আত্মবিশ্বাস জাগে নভজ্যোতির মনে। তিনি ভাবেন, তাঁর মেয়ে সঠিক সময়ে টেনিস কিট পেয়ে যাবে। ফলে অনেক আশা নিয়ে বিমান সংস্থা যা যা তথ্য চেয়েছিল, সেগুলি সমস্ত দিয়ে দেন তিনি। কিন্তু তার পর ২৪ ঘণ্টা কেটে গেলেও নভজ্যোতির কন্যার কাছে প্রয়োজনীয় উপকরণ পৌঁছয়নি। এর পরের দিন অর্থাৎ ২৯ জানুয়ারি পিআইআর-এ দেওয়া নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন নভজ্যোতি। অথচ ফোন বেজে যেতে থাকে। কেউ ফোন ধরেননি। ফলে কোনও জায়গা থেকেই সাহায্য পাওয়ার আশা একেবারে শেষ হয়ে যায়। এবার প্রচণ্ড আতঙ্ক-আশঙ্কা মনে নিয়ে দাম্মাম বিমানবন্দরে পৌঁছন ওই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত পিতা।

তবে সৌভাগ্যবশত দাম্মাম বিমানবন্দরের এয়ারলাইন্স কর্মী নভোজ্যোতির কথা শোনেন। তাঁর কন্যা এবং স্ত্রীর ব্যাগপত্রের সন্ধান করে সেটা গালফ এয়ার ফ্লাইট জিএফ১৩০-এ চাপিয়ে দিল্লি বিমানবন্দরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। ফের তিনি পিআইআর নম্বরে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেন। কিন্তু এবারও কেউ ফোন তোলে না। চরম হতাশায় আরও একবার বিমান সংস্থার কাছে মেসেজ পাঠান। জানান যে, গালফ এয়ার ফ্লাইটে তাঁদের ব্যাগপত্র পাঠানো হয়েছে। অনুগ্রহ করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওই মালপত্র তাঁদের কাছে পৌঁছে দেওয়া হোক। কারণ তাঁর কন্যা টেনিস কিট না পাওয়া পর্যন্ত টুর্নামেন্ট খেলতে নামতে পারছে না।

আরও পড়ুন– পরপর মেয়ে হওয়ায় ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ, বিহারের রাজকুমারের মেয়েদের সাফল্য দেখে সবাই ভগবানের কাছে এমন সন্তানই চাইছে

নভোজ্যোতির এই মেসেজের জবাবে এয়ার ইন্ডিয়া জানায় যে, “আমরা আপনার হতাশার কারণ বুঝতে পারছি। আমরা ইতিমধ্যেই গুরুত্ব সহকারে আপনার সমস্ত তথ্য সঠিক টিমের সঙ্গে শেয়ার করেছি। কোনও আপডেট আসামাত্রই আমরা আপনাকে জানাচ্ছি।” অথচ এর পর সময় কেটে যায়, কিন্তু এয়ার লাইন্সের তরফে আর কোনও জবাব আসেনি। আর কোনও উপায় না দেখে এবার নভজ্যোতি লেখেন, তাঁর স্ত্রী এবং কন্যা যে পোশাক পরে বাড়ি থেকে বেরিয়েছিলেন, গত তিন দিন ধরে সেই পোশাকেই রয়েছেন। ওই দিনই মেয়ের টেনিস টুর্নামেন্ট ম্যাচ। আর সে তার টেনিস কিটের জন্য অপেক্ষা করছে। তাঁদের জিনিসপত্র কোথায় রয়েছে, তার আপডেট দেওয়া হোক।

সমস্ত রকম প্রয়াসের পরেও বিমান সংস্থার তরফে কোনও ইতিবাচক সাড়া মেলেনি। অবশেষে গোটা বিষয়টা ট্যুইট করে জানান নভজ্যোতি। সেখানে তিনি ট্যাগ করেছেন অসামরিক বিমান পরিবহণ মন্ত্রী জ্যোতিরাদিত্য সিন্ধিয়া, ডিজিসিএ, এয়ার ইন্ডিয়া, রতন টাটা এবং টাটা গোষ্ঠীকেও।