ইউটিউবার মনুজ কাঠুরিয়া

Delhi Coaching Centre Flood: দিল্লির IAS কোচিং সেন্টারে পড়ুয়াদের মৃত্যুতে ধৃত ইউটিউবার মনুজ কাঠুরিয়া, কিন্তু কী কারণে এই গ্রেফতারি?

নয়াদিল্লি: ব্যবসায়ী মনুজ কাঠুরিয়ার জন্য শনিবারটা অন্যান্য দিনের মতোই শুরু হয়েছিল। রাজধানী দিল্লিতে প্রবল বর্ষণ চলাকালীন স্ত্রী এবং বৃদ্ধ মা-বাবাকে নিয়ে গাড়ি চালিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তিনি। ঘণ্টা প্রতি ১৫ কিলোমিটার বেগে ছুটছিল তাঁর গাড়িটি। ওই গতিবেগেই জলমগ্ন রাজিন্দর নগরের বড় বাজার রোডের রাউস আইএএস স্টাডি সার্কেল পেরিয়েছিলেন মনুজ। সেখান থেকে তাঁর বাড়ি অবশ্য প্রায় এক কিলোমিটার দূরে স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের কাছে।

তবে মনুজ তখনও জানতেন না, তিনি কী কাণ্ড ঘটিয়ে এসেছেন! কারণ জলমগ্ন রাস্তা গাড়ি চালিয়ে পেরোনোর সময় রাউস আইএএস স্টাডি সার্কেলের গেট ভেঙে ফেলেছিলেন মনুজ। যেখানে বেসমেন্ট জলমগ্ন হয়ে প্রাণ হারিয়েছিলেন ৩ আইএএস পড়ুয়া। আসলে ওই বেসমেন্টেই ছিল স্টাডি সেন্টারের লাইব্রেরি। ভারতীয় ন্যায় সংহিতা (বিএনএস)-এর ১০৫ ধারার আওতায় গ্রেফতার করা হয়েছে মনুজ কাঠুরিয়া।

আরও পড়ুন: ১৪ দিন চিনি না খেলে শরীরে কী হয় জানেন? বিশেষজ্ঞের টিপস শুনলে চমকে যাবেন!

মনুজের আইনজীবী রাকেশ মালহোত্রা News18-কে জানান যে, তাঁর মক্কেল যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন, সেই রাস্তায় ঘণ্টা প্রতি ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে ট্রাফিক মুভমেন্টের অনুমতি ছিল। ফলে তাঁর মক্কেল অনুমোদিত সীমার মধ্যেই গাড়ি চালাচ্ছিলেন। আসলে মনুজ যে লেনে গাড়ি চালাচ্ছিলেন, সেখানেই ছিল ওই বিল্ডিং। জলমগ্ন অবস্থায় ছিল রাস্তাঘাট। আর প্লাবিত রাস্তায় মনুজ গাড়ি চালানোর সময় ঢেউয়ের সৃষ্টি হয়, যা গিয়ে ধাক্কা মারে ওই বিল্ডিংয়ে। গেটটি ভেঙে যায় এবং ভিতরে জল ঢুকে যায়। যেখানে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে যায় আর মৃত্যু হয় ৩ পড়ুয়ার।

আরও পড়ুন: অলকা ৩৫ বছর স্বামীর থেকে আলাদা, কখনও শানু-কখনও উদিত! গায়িকার প্রেমজীবন চরম গোপনে রাখা

এখানেই শেষ নয়, মনুজের পক্ষে সওয়াল করে রাকেশ মালহোত্রা বলেন যে, “যাতায়াতের জন্য রাস্তাটা খোলা ছিল। ফলে সেখান দিয়ে শুধুমাত্র মনুজ কাঠুরিয়ার গাড়ি যায়নি। তাঁর আগে এবং পরে অন্যান্য গাড়িও সেই রাস্তা দিয়ে গিয়েছে।” আইনজীবীর কথায়, “রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় বিল্ডিংয়ের ভিতরে কী চলছে, সেটা জানা সম্ভব নয়। আশপাশে থাকা সমস্ত বিল্ডিংয়ে জলোচ্ছ্বাস ধাক্কা মেরেছে। আসলে ওই বিল্ডিংয়ের মালিক নিজের জায়গার অপব্যবহার করছেন এবং পৌর সংস্থার তরফে কোনও পদক্ষেপ করা হচ্ছে না। গাড়ির গতিবিধি নিয়ন্ত্রণের জন্য ওই এলাকায় কোনও ট্রাফিক কিংবা স্থানীয় পুলিশ অফিসার ছিলেন না। একজন ব্যক্তি সেই রাস্তা দিয়ে গিয়েছেন, যেটি খোলা ছিল। তাহলে এতে তার ভুলটা কোথায়?”

মনুজের আইনজীবী আরও বলেন যে, “দিন কয়েক আগেই ওই এলাকা জলমগ্ন হওয়ার অভিযোগ দায়ের করেছিলেন এক ব্যক্তি। তিনি নিজের অভিযোগে জানিয়েছিলেন, যে পরিমাণ জল ওই রাস্তায় জমছে, তাতে যে কোনও মুহূর্তে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। দিল্লির মিউনিসিপ্যাল কর্পোরেশন (এমসিডি) এই বিষয়ে কোনও পদক্ষেপ গ্রহণ করছে না। এখন আন্দোলনরত পড়ুয়াদের শান্ত করতে এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হল। আসল অপরাধীকে না ধরে এই গ্রেফতারি চলছে। আসলে এত অভিযুক্ত তৈরি করা হচ্ছে, যাতে আসল অপরাধী ছাড়া পেয়ে যায়।” মঙ্গলবার অবশ্য মনুজের জামিনের কথা ছিল। কিন্তু সোমবার স্থানীয় আদালত নির্দেশ দিয়েছে যে, আগামী ১২ অগাস্ট পর্যন্ত বিচারবিভাগীয় হেফাজতে রাখতে হবে তাঁকে।

এদিকে News18-এর কাছে মনুজের স্ত্রী সীমা বলন, “রবিবার সন্ধ্যায় বাড়িতে পুলিশ আসে এবং আমার স্বামীকে ঘটনার বিষয়ে জিজ্ঞাসা করেন। তারা জানায় যে, ওই প্রতিষ্ঠানের পাশ দিয়ে যখন আমার স্বামী গাড়ি চালিয়ে আসছিলেন, তখনই এই ঘটনাটি ঘটেছে। ফলে এই সংক্রান্ত বিষয়ে তারা আমার স্বামীকে জেরা করতে চান। আর এমনিতে বাড়িতে পুলিশ এলে তো উদ্বেগ-আতঙ্ক হবেই। কিন্তু তারা আমাদের আশ্বস্ত করে জানায় যে, এতে অপরাধমূলক দায় থাকবে না। ওই একই গাড়িতে তাঁকে যেতে বলা হয়। আর জেরা শেষে সেই গাড়িতেই তিনি দ্রুত ফিরে আসবেন বলেও আমাদের আশ্বাস দেওয়া হয়।”

সীমা বলে চলেন, “এর মিনিট কুড়ির মধ্যেই তাঁর শ্বশুরের কাছে একটি ফোন আসে। তাতে পুলিশ জানায় যে, মনুজকে গ্রেফতার করা হচ্ছে। সীমার কথায়, আমরা স্বাভাবিক ভাবেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ি। কারণ তখনও অভিযোগের ধারাগুলি জানতাম না। এরপরেই জানতে পারলাম যে, সবথেকে ভয়ঙ্কর ১০৫ ধারায় অভিযোগ আনা হচ্ছে। যা জামিনঅযোগ্য। পরের দিন আমাদের আইনজীবী এফআইআর কপি পাওয়ার জন্য বারবার অনুরোধ করেন। কিন্তু সংবেদনশীল ঘটনা বলে বিষয়টি এড়িয়ে যায় তারা। তারপর শুনানির সময় বিচারকের সামনে আমাদের হাতে এফআইআর-এর কপি তুলে দেওয়া হয়। যাতে প্রস্তুতির জন্য আইনজীবীর কাছে কোনও সুযোগই না থাকে।”

মনুজ কাঠুরিয়ার স্ত্রীর বক্তব্য, “ব্রেক লাইট অন ছিল। যে পরিস্থিতিতে জল গাড়ির বনেটে উঠে আসে, সেই পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা তো সকলেই করেন। তাই তিনি অবিরাম ব্রেকিং করছিলেন। কিন্তু যখন উনি বুঝেছিলেন যে, জল বনেটের উপর উঠে আসছে, ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। গাড়ি ঘোরানো সম্ভব ছিল না। তাই তাঁকে বাধ্য হয়েই জলমগ্ন রাস্তা পেরিয়ে নিরাপদ স্থানে যেতে হয়েছে।” তবে এসবের মধ্যেও অবশ্য ভারতীয় বিচারব্যবস্থার উপর আস্থা হারাচ্ছেন না সীমা।

বরং তাঁর দৃঢ় বিশ্বাস যে, যেহেতু মনুজ কোনও অন্যায় করেননি, তাই খুব শীঘ্রই মুক্তি পাবেন তিনি। প্রসঙ্গত, মনুজ কাঠুরিয়া সেদিন ২০২১ মডেলের Force Gurkha – 4×4 চালাচ্ছিলেন। এই গাড়িটি ২০২১ সালের নভেম্বর মাসে হিমাচল প্রদেশের সোলানে রেজিস্টার করানো হয়েছিল। নিজের গাড়ি নিয়ে তাঁর একটি ইউটিউব চ্যানেলও ছিল। যার নাম ‘ইন্ডিয়ান ওভারল্যান্ডার’। এই চ্যানেলের সাবস্ক্রাইবারের সংখ্যা ৮.২১ হাজার। এখনও পর্যন্ত পোস্ট করা হয়েছে ৪৯টি ভিডিও।