vবর্তমান যুগে গোটা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়েছে ডায়াবেটিস। এই মারাত্মক রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন কোটি কোটি মানুষ। ভারতে ১০ কোটিরও বেশি মানুষ ডায়াবেটিসে ভুগছে, যেখানে দেশের ১৫ কোটি মানুষ এটির সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছেন।এককথায় ডায়াবেটিস একটি বিপজ্জনক রোগ হিসেবে ক্রমশ ভয়াবহ আকার নিচ্ছে। এই রোগে ব্যক্তির রক্তে শর্করার মাত্রা অনিয়ন্ত্রিত হয়ে পরে। যা শরীরের সমস্ত অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের ক্ষতি করতে শুরু করে। শুধুমাত্র সঠিক চিকিৎসার মাধ্যমেই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। একবার ডায়াবেটিস হলে তা আর ফেরানো যায় না।নিউ দিল্লির স্যার গঙ্গারাম হাসপাতালের প্রিভেনটিভ হেলথ অ্যান্ড ওয়েলনেস ডিপার্টমেন্টের ডিরেক্টর ড সোনিয়া রাওয়াত নিউজ 18 কে জানিয়েছেন, ডায়াবেটিস প্রধানত দুই প্রকার। প্রথম টাইপ 1 ডায়াবেটিস এবং দ্বিতীয় টাইপ 2 ডায়াবেটিস।এখন প্রশ্ন হল এই দুই ডায়াবেটিসে পার্থক্য কী? কোনটি বেশি ক্ষতিকর? বস্তুত এই উভয় অবস্থাতেই মানুষের রক্তে শর্করা অনিয়ন্ত্রিত হতে শুরু করে এবং সুগারের মাত্রা ঠিক রাখতে সারা জীবন ওষুধ বা ইনসুলিনের সাহায্য নিতে হয়।এই রোগ শরীরকে অত্যন্ত দুর্বল করে তোলে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি তৈরি করতে পারে। টাইপ 1 এবং টাইপ 2 ডায়াবেটিসের কারণগুলি আলাদা এবং তাদের চিকিত্সার ক্ষেত্রেও রয়েছে সামান্য পার্থক্য।টাইপ 1 ডায়াবেটিস কী? ডাক্তার সোনিয়া রাওয়াত জানান, টাইপ 1 ডায়াবেটিস একটি অটোইমিউন রোগ। জেনেটিক কারণে এই রোগ হতে পারে। টাইপ 1 ডায়াবেটিস রোগীদের শরীরে খুব কম বা কোনওরকম ইনসুলিন উৎপন্ন হয় না।এমন অবস্থায় রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়। আসলে ইনসুলিন একটি হরমোন, যা আমাদের শরীরের রক্তে শর্করাকে নিয়ন্ত্রণ করে। শরীরে এর ঘাটতি হলে শর্করার মাত্রা বাড়তে থাকে।এই রোগটি প্রায়ই তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা দেয় এবং এটি নিয়ন্ত্রণ করতে ইনসুলিনের ডোজ নিতে হয়। এই ডায়াবেটিস জন্মগতও হতে পারে।টাইপ 2 ডায়াবেটিস কী? স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, লাইফস্টাইল এবং অন্যান্য কারণে টাইপ 2 ডায়াবেটিস হয়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণে ইনসুলিন তৈরি হয়, কিন্তু প্রতিরোধ ক্ষমতার কারণে ইনসুলিন ঠিকমতো কাজ করতে পারে না।এমতাবস্থায় ইনসুলিন উৎপাদন হলেও রক্তে শর্করা বেড়ে যায় এবং তা নিয়ন্ত্রণে ওষুধ খেতে হয়। ৩০ বছরের বেশি বয়সি ব্যক্তিদের টাইপ 2 ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।স্থূলতা, অস্বাস্থ্যকর জীবনযাপন, শারীরিক পরিশ্রম ছাড়া জীবনশৈলীগত তারতম্য এই রোগের কারণ হয়ে উঠতে পারে। এর জন্য অনেক ওষুধ রয়েছে। তবে তার বাইরে নানা ঘরোয়া প্রতিকারও ব্যবহার করা যেতে পারে সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখতে।উভয় ধরনের ডায়াবেটিসের চিকিৎসা কী? ড সোনিয়া রাওয়াত বলেন, টাইপ 1 ডায়াবেটিস রোগীদের শারীরিক অবস্থা অনুযায়ী ইনসুলিনের ডোজ দেওয়া হয় এবং স্বাস্থ্যকর খাওয়া এবং নিয়মিত ব্যায়াম করার পরামর্শ দেওয়া হয়।অন্যদিকে, টাইপ 2 ডায়াবেটিস রোগীদের রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণের জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। ওষুধ খেয়েও যখন সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে না, তখন এই অবস্থায় T2D রোগীদেরও ইনসুলিনের ডোজ দেওয়া হয়।টাইপ 2 ডায়াবেটিস প্রতিরোধ করা যেতে পারে। কিন্তু তা টাইপ ওয়ানের ক্ষেত্রে সম্ভব নয়। উভয় ধরনের ডায়াবেটিস শনাক্ত করতে মানুষের রক্ত পরীক্ষা করতে হয়। সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে উভয় ক্ষেত্রেই নিয়মিত টেস্ট জরুরি।শর্তত্যাগ: শুধুমাত্র আপনাদের সচেতনতার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিবেদনটি লেখা হয়েছে। আমরা এই লেখায় সাধারণ জ্ঞান ও দৈনন্দিন জীবনের কিছু সাধারণ তথ্য শেয়ার করেছি মাত্র। আপনি যদি কোথাও আপনার স্বাস্থ্য ও বিজ্ঞানের যোগ সম্পর্কিত কিছু পড়েন তবে তা গ্রহণ করার আগে অবশ্যই একজন ডাক্তারের পরামর্শ নিন।
