শুরু হয়েছে মাছের নিলাম

Fish: পমফ্রেট, ভোলা, লটে, ফিতে, কাগজার ছড়াছড়ি দিঘা মোহনায়…! রুপোলি ‘ইলিশ’ মিলবে কবে? বড় খবর দিলেন মৎস্যজীবীরা

দিঘা: শ্মশানের নিস্তব্ধতা কাটিয়ে, আবারও প্রাণচঞ্চলতা ফিরে পেল দিঘা মোহনা মৎস নিলাম কেন্দ্র। সমুদ্র সন্তানদের ছোঁয়ায় প্রাণ ফিরে পেল উপকূলবর্তী জনজীবন। সমুদ্রে পাড়ি দিয়েছে মৎস্যজীবীদের ট্রলার, নৌকো, লঞ্চ। শুরু হয়েছে দিঘা মৎস্য নিলাম কেন্দ্রে মাছের যোগান।

চলতি মরশুমে আবারও চঞ্চল হয়ে উঠেছে উপকূল। পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘা, শঙ্করপুর, জলধা, শৌলা, পেটুয়া, জুনপুট, খেজুরি, সুতাহাটা, নন্দীগ্রাম-সহ জেলার বিস্তীর্ণ সমুদ্র উপকূলের জনজীবন সমুদ্র নির্ভর। মৎস্য শিকারের উপর জীবিকা নির্বাহ হয়ে থাকে লক্ষাধিক মানুষের।

১৫ এপ্রিল থেকে ১৪ জুন, এই দুই মাস দুঃসহ জীবনযাপন করেন মৎস্যজীবীরা। নিষ্কর্মা দিন কাটে তাঁদের। সেই সমুদ্রসন্তানদের প্রাণের ছোঁয়ায় ফের উজ্জীবিত উপকূলের জনজীবন। ৬১ দিনের ব্যান পিরিয়ডে কার্যত স্থবির হয়ে পরেছিল দিঘা মোহনা। শুক্রবার রাত ১২ টার পর থেকে জাল ফেলা শুরু হয়েছে সাগরে। তারই সঙ্গে শনিবার থেকে খুলে গিয়েছে পূর্ব ভারতের বৃহত্তম দিঘা মোহনার সামুদ্রিক মৎস্য নিলাম কেন্দ্রও।

রবিবার থেকে সামুদ্রিক মাছের আনাগোনা শুরু হয়েছে মৎস্য নিলাম কেন্দ্রে। সামুদ্রিক মাছের মরশুম শুরু মানেই মৎস্যজীবী থেকে সাধারণ মাছপ্রেমী বাঙালির নজর থাকে, মাছের রাজা ইলিশের দিকে। সমুদ্রের এই চকচকে রুপালি শস্য হাসি ফোটায় মৎস্যজীবীদের মুখে। তাই মরশুমের শুরুতে ইলিশ উঠে এল কি না সেই খবর সবাই জানতে চায়।

দিঘা মোহনা তীরে গিয়ে দেখা গেলে, কর্মব্যস্ত জীবন। মৎস্যজীবীদের হাঁকডাক। জল থেকে জাল তুলে মাছ বাছাইয়ে ব্যস্ত একদল লোক। আর একদল ব্যস্ত ক্রেট ও ঝুড়িতে মাছ তুলে তারপর কাঁধে চাপিয়ে আড়তে নিয়ে যাওয়ার জন্য। এদিকে তাজা মাছ পাথরের স্ল্যাবের ওপরে ঢেলে বিক্রি করছেন আড়ৎদার। পমফ্রেট, ভোলা, লটে, ফিতে, কাগজা (সামুদ্রিক মৌরালা)-র মতো সস্তা-দামি সমস্ত মূল্যের মাছ। চিংড়ি, কাঁকড়াও আছে। চলছে মাছের নিলাম। মাছের দাম ডাকাডাকিতে একে- অন্যকে ছাঁড়িয়ে যাচ্ছেন পাইকাররা।

মৎস নিলাম কেন্দ্র খুলে যেতে খুলে গেছে আশপাশের দোকানপাট। পর্যটকরাও আসতে শুরু করেছেন। জাগছে প্রাণ জাগছে জীবনের গান। সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী কাঁথি সমুদ্রে উপকূলে অনুমদিত লঞ্চ- ট্রলারের সংখ্যা প্রায় ২ হাজার। তার মধ্যে প্রায় দেড় হাজার লঞ্চ- ট্রলার নিয়ে সমুদ্রে মৎস্য শিকারে গিয়েছেন মৎস্যজীবীরা। দিন পাঁচেকের মধ্যে ফের মোহনামুখী হবেন তাঁরা। তার পরই জমে উঠবে মাছ নিলাম কেন্দ্র। তার আগে অবশ্য এদিন মূলত ৮-১০ টি ভুটভুটির জালে জড়ানো কুচোকাচাদের নিয়েই শুরু হয় নিলাম কেন্দ্রের বিক্রিবাট্টা। ইলিশ নেই, ৪৫০- ৫০০ তে বিক্রি হয়েছে পমফ্রেট।

অন্যান্য মাছের কেনাবেচা হলেও ইলিশ সেভাবে ওঠেনি। আসলে ইলিশ মাছ ওঠার উপকূল পরিস্থিতি তৈরি হয়নি। কারণ মাত্রা অতিরিক্ত গরম বৃষ্টির দেখা নেই। দিঘা ফিশারমেন অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান নবকুমার পয়ড়্যা বলেন, ‘বৃষ্টির উপযোগী আবহাওয়া তৈরি হয়েছে। বৃষ্টি নামলেই মাছ ভালই উঠবে জালে। ইলিশও মিলবে। বৃষ্টির অপেক্ষায় মৎস্যজীবী থেকে মৎস্য ব্যবসায়ীরা।’ মৎস্যজীবীরা আশা করছেন চলতি বছর দিঘায় ভালো পরিমান ইলিশ উঠবে। তবে মরশুমের শুরুটা ইলিশ দিয়ে হবে কিনা তা নিশ্চিতভাবে বলতে পারছে না মৎস্যজীবীরা।

সৈকত শী