‘তুলোধোনা’ করা যাচ্ছে না! বাহারী ম্যাট্রেস, কম্বলের দাপটে ধুঁকছে লেপ

Jalpaiguri News: ‘তুলোধোনা’ করা যাচ্ছে না! বাহারী ম্যাট্রেস, কম্বলের দাপটে ধুঁকছে লেপ

জলপাইগুড়ি: নরম তুলতুলে পশমের আধুনিক ব্ল্যাঙ্কেটের চাপে ব্যাকফুটে তুলোর লেপ। এখন চোখে পড়ে না ওদেরও। এভাবেই হয়তো পেশা হারাতে বসেছে তুলোর লেপের তৈরির কারিগরেবা। ভাবছেন কাদের কথা বলা হচ্ছে? বেশ কিছু বছর আগেও শীতের দুপুরের নীরবতা ভেঙে যেত একটানা ধুনুরির শব্দে।

পুজোর মরশুম শেষ হলেই পাড়ায় পাড়ায় দেখা মিলত ওদের। হাতে তুলোর ‘ধোনাই যন্ত্র’। ডগার দিকে ক্রমশ ছুঁচলো হয়ে যাওয়া বাঁশের চকচকে একটা লাঠি থেকে ঝুলন্ত লাল কাপড়ের পুঁটলি। তার মধ্যে পাট করে সাজানো লেপ তৈরির হালকা কার্পাস কিংবা বালিশ তৈরির শিমুল তুলো। সঙ্গে নানা ধরনের লাল ‘শালু’, ‘বাঁদিপোতার’ সস্তা খোপকাটা কাপড়। হেমন্তের সকালে বাড়ির ছাদে বা উঠোনে স্তূপাকার তুলো ধুনে সুরেলা শব্দে মিহি রোঁয়া উড়লেই বোঝা যেত শীত আসছে।

আরও পড়ুন: গভীর থেকে অতি গভীর হবে নিম্নচাপ! সাগরে ঘূর্ণাবর্ত…বৃষ্টির আশঙ্কা উত্তরের কোন কোন জেলায়? ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব পড়বে কী?

এদের মধ্যেই জলপাইগুড়িতে দেখা মিলছে ভিন রাজ্য থেকে আসা ক’জন ধুনুরির। তবে এখন হতাশার সুর তাদের গলায়। এখন তাদেরও খুব একটা দেখা মেলে না বললেই চলে। বর্তমানে, শীত আসলেই খোঁজ পড়ে ব্ল্যাঙ্কেটের। আর এখানেই ভবিষ্যতে অস্তিত্বের প্রশ্ন চিহ্ন নিয়ে উঁকি দেয় লেপ। যতই নিত্য নতুন ব্ল্যাঙ্কেট বাজারে আসুক না কেনবাঙালির কনকনে শীতে তুলোর গরম লেপ মুড়ে না শুলে শীতের আমেজটাই আসে না!

এমনটা এখনও মনে করেন, যারা শীতকে আসলেই ভালোবাসেন, পছন্দ করেন শীতের আমেজ। তাই হাতে গোনা কিছু এমন মানুষের জন্যেই হাতে গোনা ক’জন ধুনুরি বিহার থেকে চলে আসেন সোজা বাংলায়। বিভিন্ন জেলায় লেপ বানানোর বিভিন্ন সরঞ্জাম নিয়ে পৌঁছে যায় লেপ বানানোর কাজ খুঁজতে। এখন ধুনুরিদের কথায়,আধুনিক কম্বলের দাপটে হারিয়ে যাচ্ছে এই লেপ সেলাইয়ের কাজ ।

আরও পড়ুন: ডিপ ফ্রিজে জমে বরফের পাহাড়! বারবার কেন হয় এই সমস‍্যা? ৫ মিনিটে গলবে কীভাবে? জেনে নিন সহজ টোটকা

অনেকেই ৪০- ৪৫ বছর ধরে এই বাংলায় লেপ সেলাই করছে বিভিন্ন বাড়িতে গিয়ে। আগে তিন-চারটে লেপ তৈরি করত একজন ধুনুরি। শীতের সিজনে সেই লেপ তৈরি করে মোটা অংকের যা টাকা মিল তো তা দিয়ে চলত সারা বছর। কিন্তু এখন কেউ আর লেপ বানাতে চায় না মূল্য বৃদ্ধির সঙ্গে পাল্লা দিয়ে লেপ সেলাই করতে খরচ পরে হাজার থেকে বারোশো টাকা। আর খানিক খরচ করলেই বাজারে রেডিমেড পাওয়া যায় রঙ বেরঙের রকমারি তুলতুলে নরম কম্বল।

তাই এখন কদর কমেছে তুলোর লেপের। কিন্তু যেমন কথায় আছে পুরনো চাল ভাতে বাড়ে, তেমনই লেপ পুরনো হলেও তার কোন ক্ষয় হয় না। সহজে নষ্ট হয় না তুললে। অন্যদিকে বাজারজাত কম্বল কয়েক বছরের মধ্যেই পাতলা হয়ে নষ্ট হয়ে যায়। তাতে কী! দেখনদারি জোড়েই লেপকে ব্রাত্য করে বাজার দখল করেছে কম্বল।

সুরজিৎ দে