রাহী হালদার, হুগলি: একদিকে দক্ষিণেশ্বরে রয়েছেন মা ভবতারিণী। ঠিক তার উল্টোদিকে গঙ্গার এপারে রয়েছেন জগৎনগরে মা আনন্দময়ী। দক্ষিণেশ্বরের আদলে এই মায়ের মন্দিরে বিরাজ করছেন মা আনন্দময়ী কালী। হাওড়া-বর্ধমান কর্ড লাইন শাখায় মির্জাপুর-বাঁকিপুর স্টেশনে নেমে দশ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ ধরে আসলেই জগৎনগর গ্রাম। রয়েছে মা আনন্দময়ীর এই কালীমন্দির। সারা বছর ধরে চলে মায়ের পুজো। কালীপুজোর দিন চার প্রহরে বিশেষ পুজো হয়। জেলা-সহ বাইরে থেকে প্রচুর ভক্ত উপস্থিত হয় এই কালীপুজোর দিনে।
ইতিহাস বলে প্রায় ৩৫০ বছর আগে এই মাকে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন এক তান্ত্রিক সাধক। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে ভক্তদের দানের টাকায় তৈরি হয়েছে ক্রংক্রিটের দক্ষিনেশ্বরের আদলে এই মন্দির। স্থানীয় বাসিন্দাদের কথায় , আগে এই গ্রাম ছিল জঙ্গলে ভরা নির্জন এলাকা। পাশেই ছিল কানা নদী। এই জঙ্গলে মৃতদেহ সৎকার করতে সকলে শবদেহ নিয়ে আসত শ্মশানে। পূর্বে ঐ সাধক এই শ্মশানে ডালপালা ও গাছের পাতা দিয়ে ঘর বানিয়ে মায়ের ঘট স্হাপন করে পুজো শুরু করেছিলেন।
এরপর বাংলার ১২৯৪ সালে গ্রামের ব্যবসায়ী কৈলাস দত্ত মায়ের একটা ছোট মন্দির প্রতিষ্ঠা করে বেনারস থেকে অষ্টধাতুর মূর্তি এনে প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। মন্দির প্রতিষ্ঠার জন্য চন্দননগরের জমিদার ‘সরকার’ রা জমি দান করেছিলেন। মায়ের নিত্যপুজো করার জন্য উত্তরপ্রদেশের কাশী থেকে দ্বিগম্বর চক্রবর্তী নামে এক পুরোহিতকে আনা হয়।
আরও পড়ুন : সাগরের ধসপাড়ার প্রাচীন কালীপুজোয় প্রচুর ভক্ত ও পুণ্য়ার্থী সমাগম
পরবর্তীকালে দিগম্বর চক্রবর্তীর মৃত্যুর পর তাঁর বংশধরেরা এই মন্দিরে মায়ের পুজোর দ্বায়িত্ব সামলে আসছেন আদি অনন্তকাল। বাংলার ১৪১২ (ইং ২০০৬) সালে ভক্তদের দানে ৬৫ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ৬৫ ফুট উচ্চতার এই মন্দির তৈরি করা হয়। মন্দিরে মোট নয়টি চূড়া রয়েছে।মন্দিরের সেবায়েত সুখদেব চক্রবর্তী বলেন, প্রাচীন রীতি মেনে মন্দিরের গর্ভগৃহে তাঁদের বংশধররা ছাড়া অপর কেউ প্রবেশ করতে পারেন না। কালীপুজোর দিনে চার প্রহরের পুজো হয়। লুচি, খিচুড়ি, পায়েস ছাড়াও ফল দিয়ে মায়ের ভোগের নৈবেদ্য দেওয়া হয়। আগে প্রথা মেনে আগে ছাগবলি হতো। কিন্তু বর্তমানে বলিদান বন্ধ রয়েছে। তবে পুজোর দিন ফল বলি দেওয়া। মা আনন্দময়ী খুব জাগ্রত বলে কালীপুজোর দিন ছাড়াও অনান্য দিনে বহু ভক্তরা এসে ভিড় জমান এই মন্দিরে। মাঘ মাসের ২৭,২৮,২৯ তারিখে হয় বাৎসরিক অনুষ্ঠান।