মূল্যস্ফীতি দিনে দিনে তার উগ্র মূর্তি বিস্তার করছে। বাজারে সবজির দাম যেন আগুন! কিন্তু সব কৃষক যে সেই আগুন দাম থেকে লাভ করেন, এমনটা নয়। থাকে মধ্যস্বত্বভোগী এবং আরও নানা কারণ। ফলে, আয় নিয়ে চিন্তা বছরভর লেগেই থাকে!
সেকারণেই এই মূল্যস্ফীতির যুগে জেলার কৃষকরা ঐতিহ্যবাহী কৃষিকাজ থেকে সরে এসে তাঁদের ক্ষেত থেকে ন্যূনতম খরচে ভাল আয় করতে পারে এমন ফসল ফলিয়ে আয় বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। এই চিন্তা থেকেই ফরুখাবাদের এক কৃষক, যিনি গত ৫০ বছর ধরে চাষ করছেন, তিনি তাঁর ক্ষেতে চিনাবাদাম চাষ করছেন। তিনি লোকাল 18-কে বলেন, সাধারণত বর্ষায় চাষ শুরু হওয়া এই ফসল ৬০ থেকে ৭০ দিনের মধ্যে তৈরি হয়ে যায়। এতে কম পরিশ্রম ও কম খরচে ভাল মুনাফা পাওয়া যায়।
লোকাল ১৮-এর সঙ্গে কথোপকথনের সময়ে রুনি গ্রামের রাম নরেশ জানান, তিনি প্রতি বছর চার বিঘা জমিতে চিনাবাদাম চাষ করেন। তাঁর বয়সে বেশি পরিশ্রম সম্ভব নয়, তাই চিনাবাদাম তাঁর পক্ষে চাষের উপযোগী। চিনাবাদাম বপনের জন্য এক বিঘায় ১৬ কেজি বীজ প্রয়োজন, যা প্রতি কেজি ৬০ থেকে ৮০ টাকা দরে পাওয়া যায়। মাত্র ৬০-৭০ দিনে প্রস্তুত হওয়া এই ফসল এক বিঘায় ৪-৫ কুইন্টাল পর্যন্ত ফলন দেয়।
চিনাবাদাম চাষের একটি বিশেষত্ব হল পথ ভুলে ক্ষেতে চলে আসা গবাদিপশু এর কম ক্ষতি করে। এরা এটা খেতে পছন্দ করে না, তাছাড়া চিনাবাদাম মাটির নিচে থাকে, যা তাদের পক্ষে এটা খাওয়া আরও কঠিন করে তোলে। তাই চিনাবাদাম অন্যান্য ফসলের তুলনায় ক্ষতির হাত থেকে বেশি নিরাপদ, যার কারণে কৃষকদের বাড়তি চিন্তা করতে হয় না। এই বিষয়টিও চিনাবাদাম চাষকে আরও আকর্ষণীয় করে তোলে।
ছোটবেলা থেকেই কৃষিকাজের দায়িত্ব নিলেও দারিদ্র্যের কারণে লেখাপড়া করতে পারেননি এই কৃষক। কিন্তু তাঁর মনে নতুন কিছু করার ইচ্ছা ছিল। তিনি এক বিঘা জমিতে কম খরচে ও সময়ে তাই উপযোগী ফসল ফলাতে শুরু করেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তিনি জৈব সার ব্যবহার করে ফসল ফলাতে শুরু করে। মাত্র ২০০ টাকার বীজ কিনে এখন তিনি হাজার হাজার টাকা আয় করছেন।
চিনাবাদাম এক অর্থকরী ফসল, ফলে একজন কৃষক চিনাবাদাম চাষ থেকে অন্য ফসলের তুলনায় থেকে দ্বিগুণ মুনাফা পান। এই ফসলে রোগবালাই কম হয় এবং এটি চাষে ক্ষেতের শক্তিও বৃদ্ধি পায়, ফলে জমি উর্বর থাকে। ফসল তৈরি হয়ে গেলে বাজারে পাঠানোর চিন্তা নেই, কারণ ওই এলাকায় প্রচুর পরিমাণে চিনাবাদাম বিক্রি হয়। এতে কৃষক তাঁর ফসলের ভাল দাম পান এবং তাঁর আর্থিক অবস্থা মজবুত হয়।