হাওড়া: গরু ছাগল সামলে সংসারের কাজ করতেই সময় শেষ, তার পরেও উচ্চমাধ্যমিকে ভাল নম্বর! উচ্চ শিক্ষায় ইংরেজি নিয়ে পড়ে স্বপ্ন দেখছে দরিদ্র পরিবারের মেয়ে পুপু। অভাব অনটন অর্থনৈতিক সমস্যা নিত্যদিনের সঙ্গী হলেও হার না মানা লড়াইয়ে সফল পুপু। বাবা- মা’র সঙ্গে সংসারের হাল ধরতে লেখা পড়ার পাশাপাশি নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে সংসারের একাধিক দায়িত্ব।
সংসারে কর্মব্যস্ততা মধ্যে থেকেও উচ্চমাধ্যমিকে ৪৩৫ নম্বর পেয়ে চমকে দিয়েছে করাতবেড়িয়া হাই স্কুলের ছাত্রী, উলুবেড়িয়া করাতবেড়িয়া কাজিরচড়া গ্রামের মেয়ে পুপু কাঁড়ার। প্রতিদিন ভোর পাঁচ টায় উঠে ২৯ টি ছাগল দেখাশোনা, তাদের খাবার দেওয়া শেষ হলে, ৩ টি গরুকে খাবার দেওয়া। এরপর সকালে সংসারের কাজে সাহায্য করে টিউশন। যেদিন টিউশন না থেকে সকালে কাজ সেরে রান্নার কাজে লেগে পড়া। রান্না শেষে স্নান খাওয়া মিশিয়ে বিশ্রাম। এর পাশাপাশি পান বরোজে আগাছা পরিষ্কার জল দেওয়া।
সংসারের কাজ রান্না-বান্না, ছাগল গরু সামাল দিয়ে সারা দিন পড়ার মতো সময়ই পেত না পুপু, পড়ার জন্য সময় ছিল সন্ধায় পর। দুপুরে কোনও দিন সময় পেলে বইয়ে চোখ বুলিয়ে নেওয়া। আবার বিকেলে গরু-ছাগল গোয়ালে তুলে, তাদের খেতে দিয়ে সংসারের কাজ সামলে পড়তে বসা। এই ছিল পুপু’র প্রতিদিনের রুটিন।
এ প্রসঙ্গে মা মধুশ্রী কাঁড়ার জানান, ‘‘সংসারের অভাব অনটন, আমরা ওর বাবা-মা সারাদিন ব্যস্ত মাঠে ধান এবং পান বরোজ ছাগল গরুর খাবার যোগাড় করতে। বেশিরভাগ সময়টা সংসার সামাল দিয়েছে মেয়ে। এমনকি পরীক্ষার দিনেও নিজেই রান্না করে খেয়ে পরীক্ষা দিতে গিয়েছে। এই অভাবের সংসারে আমরা যতটা পেরেছি মেয়েকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি। ওর স্বপ্ন আরও লেখাপড়া করে শিক্ষিকা হবে। চাকরি পেয়ে বাবার কষ্ট কম করবে।’’
এ প্রসঙ্গে টিউশন শিক্ষক তরুণ ধাড়া জানান, লেখা পড়ার প্রতি ভীষণ মনোযোগী পুুপু। পরিবারে অর্থনৈতিক সমস্যা থাকলেও কখনও হার মানেনি। নিজে কঠোর পরিশ্রম করে লেখাপড়ার প্রতি মন রেখেছে। চেষ্টা করেছি, লেখাপড়ার সামগ্রী দিয়ে যতটা সম্ভব সাহায্য করার। আগামী দিনেও আমরা পাশে আছি। লড়াই করে উচ্চমাধ্যমিকে ৪৩৫, প্রথম থেকে ১০ নম্বর স্থানে না হলেও পুপু’র লড়াই বাংলা জুড়ে নজিরবিহীন। এবার লড়াই তার স্বপ্ন পূরণের ইংরেজি উচ্চ শিক্ষিত হয়ে শিক্ষিকা হতে চায় পুপু।
রাকেশ মাইতি