১৯৯৯-এর কান্দাহার হাইজ্যাক আজও ভারতের ইতিহাসে অন্যতম অন্ধকারতম অধ্যায়। নতুন শতাব্দীর আগমনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে গোটা বিশ্ব। বড়দিনের ঠিক আগে ২৪ ডিসেম্বর ১৭৫ জন যাত্রীকে নিয়ে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি ৮১৪ বিমান।
মাঝপথে সেই বিমানকে হাইজ্যাক করে জঙ্গিরা। অমৃতসর, লাহোর, দুবাই ঘুরে অবতরণ করে কান্দাহারে। ঘটনার ৭ দিন পর ভারতীয় কারাগার থেকে জঙ্গি মৌলানা মাসুদ আজহার, মোস্তাক আহমেদ জারগার এবং আহমেদ ওমর সঈদ শেখের মুক্তির বিনিময়ে ছাড়া হয় যাত্রীদের। এই ঘটনা নিয়েই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল ‘আইসি ৮১৪: দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক’ ওয়েব সিরিজ।
আরও পড়ুন: বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা! আগামী ৭ দিন কেমন থাকবে উত্তরের আবহাওয়া?
আইসি ৮১৪ বিমানের পাইলট ‘ফ্লাইট ইন টু ফিয়ার’ বইকেই পর্দায় হাজির করেছেন পরিচালক অনুভব সিনহা। যাত্রীদের আতঙ্ক, তাঁদের পরিবারের ক্ষোভ থেকে শুরু করে পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের মানসিক পরিস্থিতি, মিডিয়ার অবস্থান, জঙ্গি হাইজ্যাকার এবং ভারত সরকারের মধ্যে কথা চালাচালি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।
কান্দাহার হাইজ্যাক নিয়ে বহু প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। এত বড় ষড়যন্ত্রের কথা নিরাপত্তা সংস্থা আঁচ করতে পারল না কেন? অমৃতসরে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত ছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু তারপরেও জঙ্গিরা কীভাবে বিমান লাহোরে নিয়ে গেল? কান্দাহারে নিয়ে যাওয়ার পিছনে তালিবানদের ভূমিকা কী ছিল? এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন অনুভব।
আরও পড়ুন: বাড়িতে টিকটিকির ডিম দেখা কীসের সঙ্কেত? ফেলে দেওয়া উচিত শুভ নাকি অশুভ? জানালেন জ্যোতিষী
কেন্দ্রে তখন অটল বিহারি বাজপেয়ীর জোট সরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সম্মতি নিতে হত। দ্বিতীয়ত পোখরানে পরমানু পরীক্ষা এবং কারগিল যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সঙ্গে ভারতের সমীকরণো বদলে গিয়েছিল অনেকখানি। অনুভব এই দিকগুলোকে সফলভাবে বুনেছেন গল্পে।
তবে শুরুর দিকে গল্প এগিয়েছে ধীর গতিতে। রোমাঞ্চ তেমন নেই। মাসুদ আজহারের সঙ্গে ভারতীয় অফিসারের বিরিয়ানি খাওয়ার দৃশ্য রীতিমতো চোখে লাগে। এতবড় ঘটনার পর ভারত সরকারের গা ছাড়া মনোভাব দেখে ক্ষোভ হতে বাধ্য। গল্প যত এগিয়েছে সিরিজের গতিও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।
সিরিজের প্রাপ্তি অভিনয়। ক্যাপ্টেন শরণ দেবের ভূমিকায় বিজয় ভার্মা অসাধারণ বললে কম বলা হয়। কোনও বীরত্ব দেখানোর চেষ্টা করেননি। ক্যাপ্টেনের অসহায় অবস্থা, সাহসিকতা আর প্রজ্ঞা ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁত দক্ষতায়। এয়ার হোস্টেসের ভূমিকায় মন জয় করে নিয়েছেন পত্রলেখা এবং অদিতি।
ভারতীয় অফিসারদের ভূমিকায় নাসিরুদ্দিন শাহ, পঙ্কজ কাপুর, আদিত্য শ্রীবাস্তব, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যরা সীমিত ভূমিকায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন। একই সঙ্গে অরবিন্দ স্বামী, কুমুদ মিশ্র, মনোজ পাহওয়াও চমৎকার। সাংবাদিক হিসাবে অমৃতা পুরীর অভিনয় অনেক দিন মনে থাকবে দর্শকদের। খুব কম সময়েও নিজস্ব ছাপ রেখে গিয়েছেন দিয়া মির্জাও।