Tag Archives: Movie Review

IC-814 The Kandahar Hijack Review: ওটিটিতে পা দিয়েই বাজিমাত অনুভবের, দাগ কেটে গেল বিজয় ভার্মার অভিনয়

১৯৯৯-এর কান্দাহার হাইজ্যাক আজও ভারতের ইতিহাসে অন্যতম অন্ধকারতম অধ্যায়। নতুন শতাব্দীর আগমনের অপেক্ষায় প্রহর গুণছে গোটা বিশ্ব। বড়দিনের ঠিক আগে ২৪ ডিসেম্বর ১৭৫ জন যাত্রীকে নিয়ে কাঠমাণ্ডু থেকে দিল্লির উদ্দেশ্যে রওনা দেয় ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্সের আইসি ৮১৪ বিমান।

মাঝপথে সেই বিমানকে হাইজ্যাক করে জঙ্গিরা। অমৃতসর, লাহোর, দুবাই ঘুরে অবতরণ করে কান্দাহারে। ঘটনার ৭ দিন পর ভারতীয় কারাগার থেকে জঙ্গি মৌলানা মাসুদ আজহার, মোস্তাক আহমেদ জারগার এবং আহমেদ ওমর সঈদ শেখের মুক্তির বিনিময়ে ছাড়া হয় যাত্রীদের। এই ঘটনা নিয়েই নেটফ্লিক্সে মুক্তি পেল ‘আইসি ৮১৪: দ্য কান্দাহার হাইজ্যাক’ ওয়েব সিরিজ।

আরও পড়ুন: বজ্রবিদ্যুৎ-সহ বৃষ্টির সম্ভাবনা! আগামী ৭ দিন কেমন থাকবে উত্তরের আবহাওয়া?

আইসি ৮১৪ বিমানের পাইলট ‘ফ্লাইট ইন টু ফিয়ার’ বইকেই পর্দায় হাজির করেছেন পরিচালক অনুভব সিনহা। যাত্রীদের আতঙ্ক, তাঁদের পরিবারের ক্ষোভ থেকে শুরু করে পাইলট এবং কেবিন ক্রুদের মানসিক পরিস্থিতি, মিডিয়ার অবস্থান, জঙ্গি হাইজ্যাকার এবং ভারত সরকারের মধ্যে কথা চালাচালি ইত্যাদি বিভিন্ন দিক বিস্তারিতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।

কান্দাহার হাইজ্যাক নিয়ে বহু প্রশ্নের উত্তর আজও অজানা। এত বড় ষড়যন্ত্রের কথা নিরাপত্তা সংস্থা আঁচ করতে পারল না কেন? অমৃতসরে অপারেশনের জন্য প্রস্তুত ছিল সেনাবাহিনী। কিন্তু তারপরেও জঙ্গিরা কীভাবে বিমান লাহোরে নিয়ে গেল? কান্দাহারে নিয়ে যাওয়ার পিছনে তালিবানদের ভূমিকা কী ছিল? এই সব প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছেন অনুভব।

আরও পড়ুন: বাড়িতে টিকটিকির ডিম দেখা কীসের সঙ্কেত? ফেলে দেওয়া উচিত শুভ নাকি অশুভ? জানালেন জ‍্যোতিষী

কেন্দ্রে তখন অটল বিহারি বাজপেয়ীর জোট সরকার। সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে সবার সম্মতি নিতে হত। দ্বিতীয়ত পোখরানে পরমানু পরীক্ষা এবং কারগিল যুদ্ধের কারণে আন্তর্জাতিক দুনিয়ায় সঙ্গে ভারতের সমীকরণো বদলে গিয়েছিল অনেকখানি। অনুভব এই দিকগুলোকে সফলভাবে বুনেছেন গল্পে।

তবে শুরুর দিকে গল্প এগিয়েছে ধীর গতিতে। রোমাঞ্চ তেমন নেই। মাসুদ আজহারের সঙ্গে ভারতীয় অফিসারের বিরিয়ানি খাওয়ার দৃশ্য রীতিমতো চোখে লাগে। এতবড় ঘটনার পর ভারত সরকারের গা ছাড়া মনোভাব দেখে ক্ষোভ হতে বাধ্য। গল্প যত এগিয়েছে সিরিজের গতিও বেড়েছে পাল্লা দিয়ে।

সিরিজের প্রাপ্তি অভিনয়। ক্যাপ্টেন শরণ দেবের ভূমিকায় বিজয় ভার্মা অসাধারণ বললে কম বলা হয়। কোনও বীরত্ব দেখানোর চেষ্টা করেননি। ক্যাপ্টেনের অসহায় অবস্থা, সাহসিকতা আর প্রজ্ঞা ফুটিয়ে তুলেছেন নিখুঁত দক্ষতায়। এয়ার হোস্টেসের ভূমিকায় মন জয় করে নিয়েছেন পত্রলেখা এবং অদিতি।

ভারতীয় অফিসারদের ভূমিকায় নাসিরুদ্দিন শাহ, পঙ্কজ কাপুর, আদিত্য শ্রীবাস্তব, দিব্যেন্দু ভট্টাচার্যরা সীমিত ভূমিকায় যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছেন। একই সঙ্গে অরবিন্দ স্বামী, কুমুদ মিশ্র, মনোজ পাহওয়াও চমৎকার। সাংবাদিক হিসাবে অমৃতা পুরীর অভিনয় অনেক দিন মনে থাকবে দর্শকদের। খুব কম সময়েও নিজস্ব ছাপ রেখে গিয়েছেন দিয়া মির্জাও।

Khel Khel Mein Review: পাঁচ বছর পরে কমেডিতে ফিরলেন অক্ষয় কুমার, নিজের সেরাটা দিলেন তাপসী; কেমন হল ‘খেল খেল মেঁ’?

মুম্বই: স্বাধীনতা দিবসে মুক্তি পাচ্ছে মুদস্সর আজিজ পরিচালিত ‘খেল খেল মেঁ’। যেখানে প্রতিফলিত হবে সম্পর্কের জটিলতা-ঝঞ্ঝাট এবং সূক্ষ্মতাও। মূলত ২০১৬ সালের ইতালিয়ান কমেডি-ড্রামা ‘পারফেক্ট স্ট্রেঞ্জার্স’-এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়েছে ছবিটি। মজার বিষয় হল, ২৮ বার রিমেক হয়েছে ছবিটির। যা একটা রেকর্ডও বটে। তবে এই প্রয়াসের জন্য প্রশংসা প্রাপ্য পরিচালকের।

‘খেল খেল মেঁ’ ছবির শুরুতেই দেখা যায়, তাড়াহুড়ো করে জয়পুরের উড়ান ধরতে যাচ্ছে ঋষভ নামে এক প্লাস্টিক সার্জন। বিমানবন্দরে তাঁর দেখা হয় সুন্দরী কাদম্বরীর সঙ্গে। এরপর ঋষভ জানতে পারেন যে, উড়ানটিতে আর কোনও সিট বাকি নেই। ফলে বিমানবন্দরের এক কর্মী মিথ্যা বলেন তিনি। জানান যে, মৃত্যুশয্যায় রয়েছে তাঁর কুকুর। ফলে পোষ্যকে শেষ দেখা দেখতেই যাচ্ছেন তিনি।

আরও পড়ুন: করলার ‘ছোট ভাই’ কিন্তু অনেক বেশি উপকারী! মাত্র ১৫ দিনের জন্য পাওয়া যায় এই সবজি, অনেকেই জানেন না!

এতে আবেগপ্রবণ হয়ে বিমানবন্দরের কর্মী ঋষভ এবং কাদম্বরীকে টিকিট দিয়ে দেন। এরপর উড়ানে দুজনে বাক্যালাপে ব্যস্ত হয়ে পড়েন। ঋষভ জানান, জয়পুর আসলে শ্যালিকার বিয়েতে যোগ দিতে যাচ্ছেন তিনি। অক্ষয় কুমার এবং চিত্রাঙ্গদা সিংয়ের এই দৃশ্য ভক্তদের নস্ট্যালজিয়ার সামনে দাঁড় করাবে। ব্যাকগ্রাউন্ডে বেজে উঠবে দেশি বয়েজ ছবির থিম মিউজিক।

ঋষভ আসলে মিথ্যা বলায় পটু। আর প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখে পড়ে মিথ্যা বলে তা কাটিয়ে উঠতে পারে বলে সে গর্বিতও বটে! এরপর দেখা যায় ঋষভের লেখিকা স্ত্রী বর্তিকাকে। সেই সঙ্গে সামনে আসেন আরও দুই দম্পতি – সমর ও নয়না আর হরপ্রীত ও হরপ্রীত। তবে ঋষভের সঙ্গে বর্তিকার বৈবাহিক সম্পর্ক খুব একটা ভাল নয়। এদিকে ঋষভের প্রথম পক্ষের কন্যার সঙ্গেও বর্তিকার সম্পর্ক ভাল নয়। বর্তমানে নিজেদের বৈবাহিক সম্পর্ককে আরও একটা সুযোগ দিচ্ছে ঋষভ-বর্তিকা।

এদিকে নয়নার বাবার ফার্মের কর্মচারী সমর। ধনীঘরের কন্যা নয়না বিলাসব্যসনেই জীবন কাটায়। আর অন্যদিকে পঞ্জাবি দম্পতি হরপ্রীত আর হরপ্রীত। দেখেশুনে বিয়ে হলেও তাঁদের সম্পর্কও খুব একটা ভাল না। স্ত্রীকে খাটো করতে একবারও ভাবেন না স্বামীটি। এদিকে স্ত্রী সব সময় স্বামীকে তুষ্ট রাখতে চায়। সকলে মিলিত হয় জয়পুরের বিয়েবাড়িতে। এদিকে যোগ দেয় এই গ্রুপের আরও এক সদস্য তথা ক্রিকেট কোচ কবীর।
বিয়েবাড়িতে বর্তিকা মোবাইল নিয়ে সকলের সঙ্গে একটি গেম খেলতে শুরু করে। যা খেলতে সম্মত হয় প্রত্যেক স্ত্রী-ই। অথচ স্বামীরা এই গেম খেলতে চায়নি। তবে পরে সম্মত হলে শুরু হয় খেলা। ফলে ধীরে ধীরে বেরিয়ে আসতে থাকে গভীর অন্ধকারাচ্ছন্ন সত্য। ছবির প্রথম ভাগে প্রচুর মজাদার মুহূর্ত দেখা যাবে। তবে দ্বিতীয় ভাগেই দেখা যায় আসল ম্যাজিক।

তবে এই ছবিতে সবথেকে বড় কৃতিত্ব প্রাপ্য তাপসী পান্নুর। ছবির সেরা বিষয়টা তিনিই এটা বলা যেতে পারে। ফারদিনের চরিত্রটাও এখানে বেশ গুরুত্বপূর্ণ। ফলে সব মিলিয়ে বলতে গেলে দেখা যেতেই পারে ‘খেল খেল মেঁ’। কারণ আবার কমেডি অবতারে অক্ষয় কুমার। কারণ ‘হাউজফুল ৪’-এর পাঁচ বছর পরে কমেডি ধারায় কামব্যাক করলেন তিনি।

Auro Mein Kahan Dam Tha Review: নীরজ পাণ্ডের ব্যতিক্রমী ভালবাসার ছবি… সাদামাটা প্রেমের গল্পে অজয়-তাবুর অভিনয়ই প্রাপ্তি

আমাদের জীবনে যা ঘটে চলেছে তার সিদ্ধান্ত আমরাই নিয়েছি। অজয় দেবগণ-টাবু অভিনীত ‘অরোঁ মে কাহাঁ দম থা’ ছবিতে এই কথাই বলা হল ভিন্ন আঙ্গিকে। সাধারণ প্রেমের গল্প। ছবি শুরু হয় সেপিয়া রঙে। ফ্রেম ধরে আরব সাগরের বান্দ্রা-ওরলি সি লিঙ্কে মুখোমুখি পাথরের উপর বসে আছেন কৃষ্ণ এবং বসুধা।

সমুদ্র সংযোগের এই ব্যবধান তাঁদের অসমাপ্ত প্রেমের গল্পের প্রতীক। বসুধার বাস্তববুদ্ধি অতটা প্রখর নয়। কৃষ্ণকে বলে, “এটাই পাকা কথা তো? আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না তো?’’ নির্লিপ্ত গলায় কৃষ্ণ জবাব দেয়, “একদম, আমি দেখে নিয়েছি। আমাদের আলাদা করতে পারবে, এমন কেউ এখনও জন্মায়নি।’’ কিন্তু এটাই বিড়ম্বনা, এখান থেকে বয়ে চলে গল্প।

তরুণ এই প্রেমিক প্রেমিকা মুম্বইয়ের একটি বস্তিতে থাকে। জন্মাষ্টমি, হোলির মতো উৎসবে দেখা হয় তাঁদের। রোম্যান্স জমে ওঠে। এভাবেই চলছিল। কিন্তু একদিন হঠাৎই কৃষ্ণ জানায়, তাঁকে ট্রেনিংয়ের জন্য বেঙ্গালুরু যেতে হবে। তারপর দু’বছর কাজ করতে হবে জার্মানিতে।

এর অনেক বছর পর পৌঢ় কৃষ্ণকে দেখতে পায় দর্শক। দু’জনকে খুনের দায়ে ২৫ বছরের জেল হয়েছিল তার। ভাল ব্যবহারের জন্য আড়াই বছর আগে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। কৃষ্ণের জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর শুরু হয় আসল গল্প। বসুধা এখন ব্যবসায়ী। অভিজিতের (জিমি শেরগিল) সঙ্গে বিয়ে হয়েছে তাঁর।

এখন কী কৃষ্ণের সঙ্গে বসুধার দেখা হবে? দু’জনে কী আবার নতুন করে সংসার পাতবে? অভিজিৎ তাঁর প্রেমিকা, যাঁকে বিয়ে করার কথা ছিল, তাঁর কাছে ফিরে যাবে? এই সব প্রশ্নেরই উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে এই ছবি। তবে সব প্রশ্নের উত্তর নাও মিলতে পারে।

১৪৫ মিনিটের সিনেমা। কিন্তু অনেক সময় গল্পকে অহেতুক টানা হয়েছে বলে মনে হতে পারে। প্রথমার্ধ অত্যধিক ধীর। দ্বিতীয়ার্ধে কিছুটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন দর্শকরা। সব মিলিয়ে পরিচালক নীরজ পাণ্ডে নামের প্রতি সুবিচার করতে পারেননি। পরিচালক আগে বলেছিলেন, “কখনও কখনও এর কোনও শেষ নেই। অনেকটা প্রেমের মতো।’’ এই ছবি দেখতে দেখতে এরকম মনে হতেই পারে দর্শকদের।

Chamkila Amar Singh Review: শুদ্ধবাদী আর সাংস্কৃতিক মৌলবাদী দর্শক ইমতিয়াজের কড়া ডোজ হজম করতে পারলে হয়!

বিচিত্র এ দেশ, বিচিত্র তাঁর সংস্কৃতি! দেশের পশ্চিমপ্রান্তের পঞ্জাব প্রদেশ৷ বলিউডের গল্পদাদুর আতুরঘর৷ সেখানে কত সুপারহিট, ব্লকবাস্টারের জন্ম, একরাতে গুণে বোধহয় শেষ করা যাবে না৷ কিন্ত ইমতিয়াজ আলি পরিচালিত ‘অমর সিং চমকিলা’ বোধহয় ভাঙা সাইকেলে স্কুলে আসা অঙ্কের সেই মাস্টারমশাইয়ের মতো, যাকে দেখে বোঝা যায় না, তিনি চাইলে আরামসে বিজ্ঞানী হতে পারতেন, নিদেনপক্ষে সরকারি রাশিবিজ্ঞানের বিশেষজ্ঞ তো হতে পারতেনই৷ বাইরে থেকে বোঝার উপায় নেই, আপাত নিরীহ লুকের এই ছবি আসলে কোনও সিনেমাটিক জাগলারি দেখানোর জন্য তৈরি করা হয়নি, তৈরি হয়েছে ইতিহাসের এক বিশ্লেষণের তাগিদ থেকে৷

শিল্পের ভাষা কেমন হবে? যে র‍্যাপ গায়ক বিক্ষুব্ধ কাশ্মীর বা ধ্বংসপ্রাপ্ত প্যালেস্তাইনের বস্তি থেকে উঠে এসেছেন, দিনরাত ধর্ষণ দেখেছেন, দেখেছেন মাথা কেটে রাস্তায় ছড়িয়ে দেওয়া বা বিনা দোষে তল্লাশির নামে ধর্ষণ কিম্বা হত্যা, তাঁর ক্ষোভ কোথায় লুকিয়ে থাকবে? শিল্পে নয়? যে ছোটবেলা থেকে সমাজ নির্ধারিত ‘অপশব্দ’ শুনেছে, সে সন্মোধনের প্রামাণ্য ভাষা হিসাবে জেনেছে চারঅক্ষর বা দু’অক্ষর, সে কী ভাষায় কথা বলবে শিল্পের সঙ্গে, বঙ্কিমী বাংলায়?

শিল্প উত্তীর্ণ কখন হয় কোনও সৃষ্টি? এর আদত কোনও গ্রন্থগ্রাহ্য সংজ্ঞা আছে? নেই৷ কিন্তু শিল্পের উৎকর্ষের সঙ্গে জনপ্রিয়তার একটা ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কের কথা মেনে নেওয়া চলে৷ বিরোধিতা থাকলেও আপাতত এই জনপ্রিয়তা ও উৎকর্ষের সূত্র এই লেখার স্বার্থে মেনে নিন। তাহলে কি জনপ্রিয় মাত্রই নিম্নমানের? ৯৯ শতাংশ ক্ষেত্রে তাই। রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দ, মৃণাল সেন, ঋত্বিক ঘটক, চিত্তপ্রসাদ বা যামিনী রায়, বাঙালি জীবনে নাম বটে, সব শ্রেণির মানুষের কাছে শ্রদ্ধেয় বটে, কিন্তু জনপ্রিয় নন, কোনওদিন হবেনও না। জনপ্রিয় টুনির মা, জনপ্রিয় বেদের মেয়ে জ্যোস্না। অসংখ্য রাজনৈতিক গলদ নিয়েও এগুলি জনপ্রিয়, কারণ গণমানস কখনই শিল্পবোধের ধারক নয়,বরং তাদের কাছে শিল্প মানে অবসর এবং এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট, এন্টারটেনমেন্ট। জনপ্রিয় তাই মূল ধারা, আদিতেও ছিল, হাজার বছর পরেও থাকবে।

সেই জনপ্রিয়তার ধারা থেকেই পাঞ্জাবি দলিত পরিবারে জন্ম নেওয়া এক শিল্পীর গল্প চমকিলা। দলিত, পঞ্জাবি এক সন্তান, যে ভাবে, শিল্পী হবে, সে ছোটবেলা থেকে জানে, আখড়ায় চটুল গান গেয়ে হাততালি আর পয়সা কমানোর নামই সংগীতশিল্প। ছোটবেলায় জুতোর বাড়ি খেয়েও তাই গান গাওয়ার স্বপ্ন সে ছাড়তে পারে না। তার পর কয়েক বছরের মধ্যে উল্কার মতো উত্থান, তার পর, ফসল ভরা মাঠের পাশে গুলি খেয়ে পড়ে থাকা। ৮-৯ বছরের জীবন ফিনিশ পঞ্জাবের জনপ্রিয়তম শিল্পীর। এই হল সিনেমার গল্প। ছবিতে প্রশ্নাতীত সাফল্যে সঙ্গীতের কাজ করেছেন এআর রহমান৷ অসম্ভব সুন্দর মোহিত চৌহান আর অরিজিৎ সিংয়ের গান দু’টি! দিলিজত দোশাঞ্জকে পাগড়ি ছাড়া দেখতে পাওয়ার প্রথম ঝটকা কাটিয়ে উঠলে বোঝা যায়, প্রায় অসাধ্য সাধন করেছেন তিনি৷ পরিণীতা চোপড়াকেও মানানাসই লেগেছে৷ আসলে এগুলো সাধারণ, গল্পের শক্তি এইসবকে সাধারণ করেছে৷ এঁরা দু’জনেই অভিনয় করেছেন, গানও গেয়েছেন৷

ছবির প্রচারে, পিটিআই-এর ছবি
ছবির প্রচারে, পিটিআই-এর ছবি

কিন্তু কেন এই সিনেমা গুরুত্বপূর্ণ? ইমতিয়াজ আলি এর থেকে ঢের শক্তিশালী সিনেমা আগে বানিয়ে ফেলেছেন৷ ইমোশনের দিক থেকে, মেকিংয়ের দিক থেকে অনেক, অনেক শক্তিশালী ছবি তাঁর লেন্সে ধরা দিয়েছে৷ তাই সিনেমার বিচারে এটাকে দেখলে হবে না, বরং এটাকে দেখতে হবে অন্যভাবে৷ দেখতে হবে বায়োগ্রাফির মতো করে৷ উল্লেখযোগ্য ভাবে, ইমতিয়াজ এই ছবিতে কোনও ভাবে অমর সিংকে বাস্তবের মাটি থেকে তুলে আইফেল টাওয়ারে বসাননি৷ বরং তিনি তাঁকে মাটিতেই রেখেছেন৷ খ্যতির চূড়ান্ত ধাপেও, রেখেছেন একেবারে মাটিতেই৷ কারণ, অতিরিক্ত স্লো-মোশন, বিরক্তিকর মোমেন্ট তৈরি করে ইমোশনাল সুড়সুড়ি দিয়ে এ দেশের বীরাপ্পানকেও নায়ক বানাতে পারে একমাত্র সিনেমাই, কিন্তু এক্ষেত্রে সেই চেষ্টাই করেননি ইমতিয়াজ৷ শুধু একটা লিনিয়ার ন্যারেটিভ তৈরি করতে চেয়েছেন, বাকিটা ছেড়ে দিয়েছেন দর্শকদের উপরে৷

আরও পড়ুন – কেন কুড়ি ফুট নিচে পড়ল বাস? ঠিক তখন কী করছিল চালক? জানলে শিউরে উঠবেন

পঞ্জাবের আকাশে মেঘ করে এলে, সেই মেঘে কোথাও একফোঁটা চমকিলা মেশানো থাকে কি না, সম্প্রতি একটি কমেডি শোয়ে এই ছবির প্রমোশনের উদ্দেশ্যে আগত তারকাদের সঙ্গে কথা বলতে বলতে বুঝিয়ে দিয়েছিলেন সেই শোয়ের উপস্থাপক কপিল শর্মা৷ তিনি বলেছেন, আমরা সকলেই ছোটবেলা থেকে চমকিলার কথা শুনেছি৷ একেবারে বাচ্চা থেকে বুড়ো, সকলেই চমকিলাকে চেনে, চমকিলার গান শোনে, চমকিলার কথায় নাচে, আর এগুলো তে মিথ্যে হয়ে যায় না৷ এখানেই বোধহয় তাঁর সাফল্য৷ সে কাউকে আক্রমণ করেনি, কাউকে ক্যানসেল করেনি, শুধু নিজের পথে চলেছে, লোকে শুনেছে, কেউ ভাল বলেছে, কেউ মন্দ বলেছে, শেষে কেউ মেরে দিয়েছে৷ আর এই মেরে দেওয়ার বিষয়েই যে আপত্তি, তাতেই উঠছে মৌলবাদের মৌলিক প্রশ্ন, যার রক্তের দাগ আমাদেরও কম নেই৷

বাঙালির একটা আদত সমস্যা আছে৷ সে কিছুতেই এখনও উনিশ শতকীয় আভিজাত্যের সামন্ততান্ত্রিক চিন্তন থেকে বার হতে পারেনি৷ সে মনে করে, উমমম করে গোঁফ পাকিয়ে, বা গম্ভীর হয়ে হাত চিবুকে ঠেকিয়ে ঈশান কোনে তাকিয়ে থাকা শিল্পীরাই একমাত্র শিল্পী, বাকিরা খেলো, ছ্যা-ছ্যা করে তাদের উঠোনের বাইরে বার দেওয়াই রীতি৷ পঞ্জাবে চমকিলার বিরুদ্ধ মতের গোড়ায় হয়ত ধর্মের উগ্রতা ছিল, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের ক্ষেত্রেও এই গল্পটা মিলে যায় সাংস্কৃতিক মৌলবাদে৷ সেই কারণেই খটকা লাগে, মনে হয়, ওই ‘দাদা’ বা ‘অমুক বাবুর’ কথা! আর ইদানিংকালের পলিটিক্যাল কারেক্টনেসের ফাঁকা আস্তরণে আঘাত লাগে৷

তা হলে কী ফ্যাতাড়ু এবার ‘হায়, তাতঃ’ বলে বাক্য আরম্ভ না করলে নবারুণকেও ক্যানসেল করবেন আপনারা? দেখুন তো, একবার ভেবে! আপনাদের পলিটিক্যাল কারেক্টনেস কী বলে?

Maidaan Review: ফিরল ‘চক দে’-র স্মৃতি, অজয়-গজরাজের যুগলবন্দিতে ‘ময়দান’ যেন কিংবদন্তির ঘামরক্তে ভেজা

মুম্বই: শাহরুখ খানের ‘চক দে! ইন্ডিয়া’ ছবির কথা নিশ্চয়ই মনে আছে! সেবার প্রেক্ষাগৃহগুলি মুখর হয়েছিল ইন্ডিয়া ইন্ডিয়া রবে। আর প্রায় ১৭ বছর পরেও বলিউডের স্পোর্টস ফিল্মের ধারার বেঞ্চমার্ক হয়ে রয়েছে। এবার প্রেক্ষাগৃহে সেই উন্মাদনাই চোখে পড়ছে। সৌজন্যে ‘ময়দান’! অজয় দেবগনের এই ছবিতে আবার এসআরকে-র ছবির তুলনায় আলাদাই গতিপথ দেখা গিয়েছে। তবে দু’টি ছবির মধ্যে একটা সাধারণ জিনিস রয়েছে। আর সেটা হল, দু’টি ছবিই দুর্দান্ত সিনেম্যাটিক অভিজ্ঞতা প্রদান করবে।

অমিত শর্মা পরিচালিত ‘ময়দান’ ছবির মুখ্য ভূমিকায় রয়েছেন অজয় দেবগন। ফুটবল কোচ সৈয়দ আব্দুল রহিমের জীবনের গল্পের উপর ভিত্তি করেই তৈরি হয়েছে ছবিটি। ওই ফুটবল কোচের নেতৃত্বেই ১৯৬২ সালের এশিয়ান গেমসে জয়লাভ করে ভারত। অজয়ের পাশাপাশি ছবিতে রয়েছেন গজরাজ রাও এবং প্রিয়া মণি। গজরাজকে একজন সাংবাদিকের ভূমিকায় আর প্রিয়াকে অজয়ের স্ত্রীর ভূমিকায় দেখা যাবে। এছাড়া কিছু নতুন মুখও দেখা যাবে এই ছবিতে। এঁদের মধ্যে রয়েছেন চৈতন্য শর্মা ওরফে স্লোচিতা এবং ‘স্লামডগ মিলিওনেয়ার’-এর মধুর মিত্তল।

আরও পড়ুন: বাজারে কমে আসছে সবজির পরিমাণ! এদিকে দাম বাড়ছে হুহু করে! ভয়ঙ্কর দিনের আশঙ্কা, কারণ শুনে আঁতকে উঠবেন!

এই ছবিতে ফুটে উঠেছে কোচ সৈয়দ আব্দুল রহিমের লড়াইয়ের কাহিনি। যিনি আবার এসএ রহিম নামে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। তাঁর লড়াইয়ের লক্ষ্য ছিল, একটা বজ্র-কঠিন দল তৈরি করা। এখানেই শেষ নয়, দুর্নীতিগ্রস্ত ফুটবল ফেডারেশন, এক প্রতিশোধপরায়ণ সাংবাদিক এমনকী প্রতিবাদকারীদের সঙ্গেও ছিল তাঁর লড়াই। সর্বোপরি ফুটবলের হাত ধরে ভারত যাতে বিশ্ব মানচিত্রে জায়গা করে নিতে পারে, সেটাই ছিল তাঁর অন্যতম প্রধান লক্ষ্য। এই ছবিটিতে ওই কোচের জীবনের একাধিক বিষয় ফুটিয়ে তুলেছেন পরিচালক। যথা – তাঁর ব্যক্তিগত লড়াই, টিমের সমস্যা, রাজনৈতিক আবহাওয়া।

এই ছবিতে অজয় দেবগনের অভিনয় নিয়ে আলাদা করে কিছু বলার অপেক্ষা রাখে না। তবে ‘চক দে! ইন্ডিয়া’-র শাহরুখ খানের থেকে ‘ময়দান’-এর অজয় কিন্তু আলাদা। কারণ শাহরুখ এমন একজন কোচ ছিলেন, যিনি নিজের অভিব্যক্তি প্রকাশ করতেন। এখানেই ভিন্ন অজয় অভিনীত রহিম চরিত্রটি। কারণ রহিম চোখের ভাষা দিয়েই বেশিরভাগ বিষয়টা ব্যক্ত করেছেন।

অজয়ের পাশাপাশি গজরাজ রাও-ও নিজের জায়গায় দুর্দান্ত। যে সাংবাদিকের চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন, সেই চরিত্রটিকে দেখলে রীতিমতো রাগে গা রি-রি করে উঠবে। বহুদিন বাদে এহেন চরিত্রে গজরাজের দুর্ধর্ষ অভিনয় নজর কাড়বে। আর দক্ষিণী অভিনেত্রী প্রিয়া মণির কথা কী-ই বা বলার! পর্দায় তো তিনি যেন জাদু ছড়িয়ে দিয়েছেন! বিপরীতে যে তারকাই থাকুন না কেন, তাঁর সঙ্গে প্রিয়ার রসায়ন জাস্ট জমে ক্ষীর হয়ে যায়। আর ‘ময়দান’-এও তার প্রতিফলন দেখা গিয়েছে।

এবার আসা যাক অন্যান্য প্রসঙ্গে। সিজিআই এবং ভিএফএক্স-এর সহযোগিতায় সিনেম্যাটোগ্রাফার তুষার কান্তি রায় এবং ফিয়োডর লিয়াস খেলাধূলার বিষয়টাকে আরও প্রাণবন্ত করে তুলেছিলেন। যদিও এমন কিছু কিছু শট রয়েছে বিশেষ করে ছবির দ্বিতীয়ার্ধ্বে, যা ‘চক দে! ইন্ডিয়া’-র কথা স্মরণ করিয়ে দেবে। আর এআর রহমানের কথা আলাদা করে তো বলার অপেক্ষা লাগে না। ব্যাকগ্রাউন্ড মিউজিকও অসাধারণ।

সব মিলিয়ে এটাই বলা যেতে পারে যে, ‘ময়দান’ ছবিটি অবশ্যই দেখা উচিত। যা ‘চক দে! ইন্ডিয়া’-র কথা মনে করাবেই। সর্বোপরি একটা ভাল লাগা নিয়েই প্রেক্ষাগৃহ থেকে বেরোতে পারবেন দর্শকরা।