ঝাড়গ্রাম: আজও হারিয়ে যায়নি গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী দেওয়ালি পুতুল। কানে ঠিক মত শুনতে না পেলেও আজও ৭৩ বছর বয়সে দিব্যি তৈরি করে চলেছেন দেওয়ালি পুতুল। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে শাশুড়ির কাছ থেকে শিখেছিলেন দেওয়ালি পুতুল তৈরী। বছরের কেবলমাত্র একটি সময় এই দেওয়ালি পুতুল তৈরি করে থাকেন ৭৩ বছরের বেলা বেরা। বেলা বেরারা হাত ধরেই এখন তার বাড়ির বড় বৌমা মাধবী বেরা ও তার ছোট বৌমার মেয়ে বর্ণালী বেরাও দেওয়ালি পুতুল তৈরি করে।
প্রতিবছর কালী পুজোর সময় এই দেওয়ালি পুতুল বাজারে বিক্রি হতে দেখা যায়। কিন্তু যারা এই দেওয়ালি পুতুল তৈরি করেন তাদের কতজনেই বা চেনে । ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুর এক নম্বর ব্লকের বৈতা গ্রাম পঞ্চায়েতের বৈতা গ্রামে এই বেরা পরিবার বংশপরম্পরায় কালীপুজোর সময় তৈরি করে আসছে দেওয়ালি পুতুল। সাধারণত বাড়ির মহিলারাই এই পুতুল তৈরির কাজ করেন। বাড়ির পুরুষেরা মাটির হাঁড়ি ,কলসি তৈরি করেন।
প্রথমে মাটিকে ভাল করে পাক দেওয়ার পর তৈরি করা হয় পুতুল। যে পুতুল তার দু’হাত এবং মাথায় ধরে রয়েছে পাঁচটি প্রদীপ। মাটির পুতুল তৈরি করার পর রোদের শুকনো করা হয়। তারপর বিভিন্ন রঙে সাজিয়ে তোলা হয় পুতুল গুলিকে। বাজারে ছোট পুতুল ৫০ টাকা এবং বড় পুতুল ১০০ টাকায় বিক্রি হয়। এই বছর কালীপুজোয় প্রায় দেড়শটি পুতুল তৈরি করেছে তারা। বাড়ি থেকেই মহাজনরা এসে পুতুল কিনে নিয়ে চলে যায়।
আরও পড়ুন: আদালতে বিচারকের সঙ্গে হাতাহাতিতে জড়ালেন আইনজীবীরা! আদালতে ভাঙচুর, লাঠিচার্জ পুলিশের
মাধবী বেরা বলেন, “শাশুড়ি মায়ের ৭৩ বছর বয়স হয়েছে কিন্তু তিনি এখনো দেওয়ালি পুতুল তৈরিতে আমাদের সঙ্গে হাত লাগাই। আমি উনার কাছ থেকে দেওয়ালি পুতুল তৈরির কাজ শিখেছি। বছরের কেবলমাত্র একটি সময় আমরা এই পুতুল তৈরি করে থাকি। প্রতিবছর যতগুলি পুতুল তৈরি করি সবই বিক্রি হয়ে যায় বাড়ি থেকেই। এই বছর দেড়শটি পুতুল তৈরি করেছি”। বর্তমান দিনে বিভিন্ন বিদ্যুতের টুনি বাল্ব বাজার দখল করলেও বেলা বেরার মতো মৃৎশিল্পীদের হাতের ছোঁয়ায় আজও জীবিত রয়েছে ঐতিহ্যবাহী দেওয়ালি পুতুল। আর তার হাত ধরেই বংশ পরম্পরায় এগিয়ে যাচ্ছে ঐতিহ্যের দেওয়ালি পুতুল।