Piyush Goyal to News18: উত্তর মুম্বই হবে ‘উত্তম মুম্বই’, ভোট বাড়বে মোদিজির জন্য; একান্ত সাক্ষাৎকারে আত্মবিশ্বাসী পীযূষ গোয়েল

আগামী ২০ মে তাঁর ভোট। তার আগে নেটওয়ার্ক 18 গ্রুপের প্রধান সম্পাদক রাহল জোশীর মুখোমুখি কেন্দ্রীয় বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল। আসন সমীক্ষা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির প্রতি দেশের আস্থা থেকে শুরু করে বিরোধীদের নিয়ে বিবৃতি, একান্ত সাক্ষাৎকারে ধরা দিলেন রীতিমতো আত্মবিশ্বাসী পীযূষ গোয়েল।

রাহুল জোশী: পীযূষজি, News18-এর বিশেষ শোয়ে আপনাকে স্বাগত। আমাদের স্টুডিওয় আসার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। নির্বাচন তো চলছে জোরকদমে। ইতিমধ্যেই তিনটি পর্যায়ের ভোট শেষও হয়েছে। আপনার ভোট তো আগামী ২০ মে। আর আপনি তো প্রথমবারের জন্য ভোটে লড়ছেন। কেমন লাগছে?

পীযূষ গোয়েল: আমি খুবই খুশি। আমি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির কাছে কৃতজ্ঞ যে, প্রায় ৪০ বছর ধরে রাজনীতির ময়দানে কাজ করার পরে আমি জনসাধারণের দরবারে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছি। একেবারে মাটির কাছাকাছি গিয়ে তাঁদের আনন্দ এবং দুঃখ পরিমাপ করার সুযোগ পেয়েছি।
বিগত প্রায় ৪০ বছর ধরে আমি প্রচুর নির্বাচন দেখেছি। একাধিক বার ভোটের জন্য কৌশল রচনা করেছি, আর বহু বার ভোটে অন্যদের জন্য কাজও করেছি। এমনকী আমি লালকৃষ্ণ আডবাণীজির প্রথম নির্বাচন দেখেছিলাম। ১৯৮৯ সালে প্রথমবারের জন্য লোকসভা নির্বাচনে লড়াই করেছিলেন তিনি। এর আগে অবশ্য কোনও ভোটে লড়াই করেননি। আমারও এখন তাঁর ওই সময়ের মতোই বয়স। সেই সময় তাঁর বয়স ছিল ৬২ বছর।

কিন্তু যখন একজন ব্যক্তি প্রার্থী হন, এটি একটি ভিন্ন প্রস্তাব। কিছুটা তো উত্তেজনা রয়েছেই, সর্বোপরি একটা পরিপক্কতাও তৈরি হয়েছে। আপনি মানুষের কাছে যাবেন এবং তাঁদের দৈনন্দিন জীবনের অংশ হয়ে তাঁদের সঙ্গে আলাপচারিতা করার সুযোগ পাবেন।

রাহুল জোশী: আমরা মহারাষ্ট্রের দিকে ফিরে আসব এবং আপনার নির্বাচনী কেন্দ্রের বিষয়ে কথা বলব। কিন্তু আজ আপনি আমাদের সঙ্গে রয়েছেন, আপনি তো একজন জাতীয় নেতা। বহু মন্ত্রক আপনি সামলেছেন। আমার মনে হয়, একই সময়ে আপনি সরকারের একাধিক সংখ্যক পোর্টফোলিও সামলেছেন। তাই প্রথমে আপনার সঙ্গে কয়েকটি বড় বিষয় নিয়ে আলোচনা করে নেওয়া যাক। আমি সম্প্রতি আমরা অমিত শাহজির সাক্ষাৎকার নিয়েছি। আর প্রথম যে প্রশ্নটা আমি তাঁকে করেছিলাম, সেটা হল, আপনাদের স্লোগান ‘অব কি বার ৪০০ পার’-এর বিষয়ে। এটা কি এখনও বজায় আছে না কি এই প্রচার অভিযান বন্ধ হয়ে আসছে?

পীযূষ গোয়েল: এটা এখনও রয়েছে। আপনি ময়দানে যাবেন, মানুষের কাছে পৌঁছবেন, তাঁদের সাড়া ও প্রতিক্রিয়া দেখবেন। আর রাজনৈতিক নেতারা মানুষের প্রতিক্রিয়া দেখেই কতটা সাড়া মিলতে পারে, তা পরিমাপ করতে পারেন। আসলে কোনও ভাষণ দেওয়ার সময় যে সাড়া আসে আর কোনও বিষয়ে যে সাড়া আসে, সেটা থেকেই বোঝা যায়।

আমার বিশ্বাস, আমরা নিশ্চিত ভাবে ৪০০ পার করব। কিন্তু বিরোধীরা একের পর এক নিম্নরুচির বিতর্কিত এবং ভয়ঙ্কর বিবৃতি জারি করছে, আর যেভাবে তারা ভুলভাল ব্যাখ্যার মাধ্যমে বিষয়গুলিকে অন্যদিকে ঘোরানোর চেষ্টা করছে, যেভাবে ইন্ডিয়া জোটের অন্দরের কলহ জনসমক্ষে বেরিয়ে আসছে! যেমন- কেরলে সিপিএম এবং কংগ্রেসের মধ্যে ঝামেলা… আবার পশ্চিমবঙ্গে অবশ্য এই দুই দলের দারুণ বন্ধুত্ব। অথচ তৃণমূল কংগ্রেস এবং কংগ্রেসের মধ্যে সেখানে বেশ কলহ রয়েছে।

বিরোধীরা নিজেদেরকে পুরোপুরি ভাবে দুর্বল বিরোধী হিসেবে প্রতিপন্ন করেছে। তাঁদের কোনও নেতা নেই, না আছে কোনও নেতৃত্ব, নেই কোনও নীতি, এমনকী দেশের জন্য কোনও লক্ষ্যও নেই। তাহলে তারা কীভাবে আন্তরিকতা এবং সংবেদনশীলতার সঙ্গে কাজ করবে? এমন পরিস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ১০ বছরের মেয়াদ এবং তাঁর ৫০ বছরের অনবদ্য জনজীবন মানুষকে অনুপ্রেরণা জোগাচ্ছে। আর একমাত্র তিনিই দেশকে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যেতে পারবেন, সেই নিশ্চয়তাও মানুষকে দিচ্ছে।

রাহুল জোশী: আমরা লক্ষ্য করেছি যে, প্রথম দিকের দ্বিতীয় থেকে তৃতীয় পর্যায়ে ভোটারদের উপস্থিতি কমে গিয়েছিল। আবার গত কয়েক দিনে স্টক মার্কেটে কিছুটা পতনও দেখা গিয়েছে। এফআইআই বিক্রি হচ্ছে। আর একটা জোর গুঞ্জন তৈরি হয়েছে যে, আপনারা আপনাদের আসনের লক্ষ্যমাত্রায় পৌঁছতে পারবেন না। চার মাস আগে ভারতীয় জনতা পার্টির জন্য আপনি ৩৩০ অঙ্ক আমাদের দিয়েছিলেন। তো আপনি কত অঙ্কের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন? কম উপস্থিতির কারণে বিজেপিতে অতিরিক্ত আত্মবিশ্বাস জন্মেছে এবং কর্মীরা বাড়ি থেকেই বেরোচ্ছেন না, এই রিপোর্টের কি কোনও সত্যতা রয়েছে? আর এই ব্যাখ্যাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

 

পীযূষ গোয়েল: সবার আগে আমি ৩৩০ অঙ্কের বিষয়টা ব্যাখ্যা করি। জেডি-র সঙ্গে আমাদের জোট, চন্দ্রবাবু নাইডুর টিডিপি-র সঙ্গে আমাদের জোট এবং তামিলনাড়ুতে যে কোনও জোটের আগে আমি এই অঙ্কটা আপনাদের দিয়েছিলাম। আমার মনে হয়, সেটা গত সেপ্টেম্বর-অক্টোবর নাগাদ।

এই সমস্ত কিছু হওয়ার পরে অঙ্কটা বাড়ছে। এর ফলে বিজেপির অঙ্কও বাড়ছে এবং সর্বোপরি এনডিএ-র অঙ্কটাও বাড়ছে। এর পাশাপাশি পরিস্থিতিরও পরিবর্তন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, পশ্চিমবঙ্গ, ওড়িশা এবং তেলঙ্গানার কথা বলা যায়। এই তিন রাজ্যে আমরা বিজেপির জন্য যা প্রত্যাশা করেছিলাম, তার তুলনায় অনেক বেশি পরিমাণে মানুষের কাছ থেকে ভাল সাড়া, ভালবাসা এবং আশীর্বাদ পাচ্ছি।

কেরল, তামিলনাড়ু এবং অন্ধ্রপ্রদেশে তো আমরা ভেবেছিলাম বিজেপি খালি হাতেই যাবে, কিন্তু এখন দেখা যাচ্ছে, বিষয়টা বেশ আশাপ্রদ।

রাহুল জোশী: এইবার কেরল এবং তামিলনাড়ুতে কি বিজেপি খাতা খুলতে পারবে?

পীযূষ গোয়েল: অবশ্যই। আমরা নিশ্চয়ই নিজেদের খাতা খুলতে পারব। প্রায় প্রত্যেকেই এই বিষয়ে একমত। কেরলে আমরা এমন ভাবে নিজেদের খাতা খুলব যে, ভোট ভাগাভাগি এবং আসন উভয় দিক থেকেই তা চমকপ্রদ হবে।

রাহুল জোশী: ভোট ভাগাভাগির ক্ষেত্রে তো সকলেই একমত। কিন্তু এটা কি আসনের ক্ষেত্রেও এক?

পীযূষ গোয়েল: আমি মনে করি যে, দুই থেকে তিনটি আসন রয়েছে, যেখানে প্রতিযোগিতার দৌড়ে আমরা মজবুত অবস্থানে রয়েছি আর একটিতে তো আমরা জিতবই।

রাহুল জোশী: আর তামিলনাড়ুতে?

পীযূষ গোয়েল: না, তামিলনাড়ু… কেরল নয়। তামিলনাড়ুতেও পরিস্থিতি একই। আমরা নিশ্চিত ভাবে দু’টিতে জিতব এবং চার ও পাঁচে আমরা মজবুত স্থানে রয়েছি।

রাহুল জোশী: আর যদি আমরা সমগ্র দক্ষিণের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে সেখানে প্রায় ১৩০টি আসন…

পীযূষ গোয়েল: আমরা যদি সমগ্র দক্ষিণের দিকে তাকাই, তাহলে দেখা যাবে একটা সময় তিনটি অথবা চারটি রাজ্যে আমাদের নগণ্য উপস্থিতি ছিল। আর আজ আমরাই একমাত্র দল, যাদের উপস্থিতি প্রতিটি রাজ্যেই রয়েছে। যত তাড়াতাড়ি আমরা কেরল, তামিলনাড়ুতে আমাদের খাতা খুলব এবং অন্ধ্রে ভাল ফলাফল পাব, এইবার বিজয়ওয়াড়ায় কেমন অত্যাশ্চর্য সাড়া পেয়েছি, তা আপনি নিশ্চয়ই দেখে থাকবেন।

তেলঙ্গানায় পরিস্থিতি যেভাবে এগোচ্ছে, আমরা বিরোধী এবং শাসক দলের তুলনায় অনেকটাই এগিয়ে রয়েছি। আর কর্নাটকে তো আমরা বেশ ভাল ভাবেই নিজেদের অবস্থান বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছি।

রাহুল জোশী: গতবার আপনার দল তো কর্নাটকে দারুণ বড়সড় জয় পেয়েছিল। আপনারা কি এটা বজায় রাখতে সক্ষম হবেন? আসলে মানুষ বলছেন যে, সেখানকার পরিস্থিতি এবার কিছুটা হলেও স্তিমিত।

পীযূষ গোয়েল: একটা কিংবা দুটো আসনে হয়তো পরিস্থিতি বদলাবে। কিন্তু আমার মনে হয় না, গতবার এবং এবারের মধ্যে বড় কোনও ফারাক হবে। এটা তো জাতীয় নির্বাচন। মানুষ এটা মাথায় রাখবেন যে, দেশের নেতা নির্বাচিত হবেন এবং দেশের সরকার তৈরি হবে। আর প্রত্যেকেই বিশ্বাস করেন যে, ইউপিএ-র সেই অন্ধকারময় দিনগুলি দুর্নীতিতে একেবারে পরিপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী যা-ই করুন না কেন, একজন ‘যুবরাজ’ তা একটি সাংবাদিক সম্মলনে তুলে ধরে সেটাকে ছিন্নভিন্ন করবেন। প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহে দুর্নীতির নতুন একটা ঘটনা প্রকাশ্যে এসেছে। আর প্রধানমন্ত্রী এতটাই অসহায় যে, তিনি বলেন “আমি কী করতে পারি? জোট রাজনীতির ক্ষেত্রে এটা তো বাধ্যতামূলক।” মানুষ দেশের কোনও অংশেই এমন সরকার চাইবেন না।

তাই দক্ষিণে যেমনটা অমিত শাহজি বলেছেন, আমিও বিষয়টা নিয়ে পুরোপুরি চিন্তা করিনি। কিন্তু যখন আমি অঙ্কটা কষলাম, তখন বুঝতে পারলাম যে, কর্নাটক, তেলঙ্গানা, অন্ধ্র, কেরল, তামিলনাড়ু – এই সমস্ত রাজ্য মিলিয়ে আমাদের যে সংখ্যক আসন রয়েছে, অন্য কোনও দল তার ধারে কাছে আসতে পারবে না।

রাহুল জোশী: তাহলে অঙ্ক কী হচ্ছে? ১৩০-এর মধ্যে?

পীযূষ গোয়েল: আমার হাতে সঠিক অঙ্কটা নেই, কিন্তু দক্ষিণে সমস্ত দলের মধ্যে আমাদের একক বৃহত্তম অঙ্ক থাকতে চলেছে।

রাহুল জোশী: পীযূষজি, এবার বেশ কিছু বড় বিষয় নিয়ে কথা বলা যাক। আপনার যদি এতটাই আত্মবিশ্বাস থাকে যে, অতি সহজেই ৪০০ আসন পার করবেন, বিজেপি পাবে ৩৭০টি আসন। যখন এই নির্বাচনে গতি এসেছে, তখন আপনার দল উন্নয়ন, অর্থনীতি, মোদিজির মেয়াদে ঘটে যাওয়া বড় বিষয়গুলি নিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু তারপরে বিশেষ করে দুই পর্যায়ের পরে গোটা প্রচার কর্মসূচিটাই হিন্দু-মুসলিমের দিকে ঘুরে গিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীও রাজস্থানে নিজের সমাবেশে কথা বলেছেন। এমনকী এ-ও বলা হয়েছিল, কংগ্রেস সম্পদের বণ্টন নিয়ে কথা বলেছে যে, তারা হিন্দুদের সঞ্চয় নিয়ে তা মুসলিম এবং অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে বণ্টন করবে। বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন? এই সময়ে ওই বিষয়টাকে তুলে ধরার প্রয়োজনই বা কী?

পীযূষ গোয়েল: আমরা কিন্তু সেই আলোচনা শুরু করিনি। আপনারা মোদির গ্যারান্টিগুলি দেখে নিতে পারেন। এটা একটা খুবই ইতিবাচক ব্যাখ্যা। আমরা প্রতিটা বিষয় খুবই গুরুত্ব দিয়ে এবং গভীরতার সঙ্গে গোটা দেশের সামনে তুলে ধরেছি। এই অমৃত কালে আমরা কীভাবে উন্নত ভারত হয়ে উঠব আর আমাদের তৃতীয় মেয়াদে আমরা কোন দিশায় কী পদক্ষেপ করব, তার লক্ষ্যমাত্রা নিয়েছি।

 

আমার মনে হয়, এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক যে, কংগ্রেসের ইস্তেহার প্রকাশ্যে আসার পরেই সম্পূর্ণ রূপে তাদের স্বরূপ বাইরে এসে গিয়েছে। অথচ তারা এখনও তুষ্টির কথাই ভাবছে। স্যাম পিত্রোদাজি যে অর্থনৈতিক পথ দেখিয়েছেন, সেই পথে হাঁটার কথাই এখনও ভাবছে তারা। আসলে তাদের জন্য এখনও বৈষম্যমূলক রাজনীতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আর সমাজে তারা যে ধরনের বিভ্রান্তি তৈরি করার চেষ্টা করেছে, সেটাই আমরা মানুষের সামনে সঠিক ভাবে তুলে ধরার প্রয়োজন অনুভব করেছি। আর আমার মনে হয়, উন্নয়ন এবং ইতিবাচক কর্মসূচির প্রসঙ্গে কথা বন্ধ করা আমাদের একেবারেই উচিত নয়।

কিন্তু স্বাভাবিক ভাবেই সংবাদ মাধ্যম হোক কিংবা সামাজিক মাধ্যম হোক, উভয় ক্ষেত্রেই সব সময় সংবেদনশীলতা, টিআরপি এবং হেডলাইনের মতো খবর সন্ধানের প্রচেষ্টার প্রতি ঝোঁক থাকবেই। তাই মনে হচ্ছে যে, এই ব্যাখ্যা বদলে গিয়েছে। কিন্তু আপনারা আমাদের যে কোনও কারও বক্তৃতা দেখতে পারেন, সে প্রধানমন্ত্রীর হোক, অমিত ভাই, জেপি নড্ডাজি, রাজনাথজি অথবা আমাদের মতো প্রার্থীদেরই হোক, আমরা খুবই

ইতিবাচনক মনোভাব নিয়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। আর ইতিবাচক ব্যাখ্যারই প্রচার করছি। আসলে এই নির্বাচনই দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে, সেটাই আমাদের মূল লক্ষ্য। মোদিজি প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন না কি অন্য দিকে থাকছে প্রশ্নচিহ্ন, সেটা এই নির্বাচনই নির্ধারণ করবে। কারণ তাঁরা ৫ বছরে পাঁচ জন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করবেন বলে জানালেও, সেই পাঁচ জন কে হবেন, আর কে-ই বা প্রথম প্রধানমন্ত্রী হবেন, সেটা বলতে পারেননি।

রাহুল জোশী: কিন্তু তাদের বক্তব্য, তারা এমনটা বলেনি। তারা এই নিয়ে কোনও কথাই বলেনি এবং তারা নিজেদের ইস্তেহারে মুসলিম প্রসঙ্গে কিছুই বলেনি। তাদের বক্তব্য, আপনারাই এই সমস্ত কিছু তুলে এনেছেন। তাহলে সেই বিষয়ে কীভাবে এই উপসংহারে আসছেন?

পীযূষ গোয়েল: রাহুলজি, আপনি দেখেছেন যে, স্যাম পিত্রোদাজি তাদের বিশ্বস্ত উপদেষ্টা এবং বছরের পর বছর ধরে এটাই হয়ে এসেছে ৷ স্যাম পিত্রোদাজিকে ওভারসীজ কংগ্রেসের নামে বিশ্বের দরবারে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল, আর তিনি সেখানে দেশের নামে খারাপ কথা বলেছেন।
এখন এই ধরনের একজন ব্যক্তি যখন ৫৫ শতাংশ উত্তরাধিকার কর নিয়ে কথা বলেন, তখন আমার বিশ্বাস যে, ইস্তেহারের পিছনে নিশ্চিত ভাবে তাঁরও হাত রয়েছে। বর্তমানে একদিকে ওই ইস্তেহার এসেছে, যেখানে বলা হয়েছে যে, আমরা প্রত্যেকের সঞ্চয়ের বিস্তারিত তথ্য নেব, আমরা প্রত্যেকের বিষয়ে তদন্ত করব, আপনাদের কাছে যে সঞ্চয় আছে, তা পরীক্ষা-নিরীক্ষাও করব। আর আমরা যদি সম্পদের পুনর্বণ্টনের বিষয়ে কথা বলি, তাহলে সঞ্চয় পুনর্বণ্টনের জন্য প্রথমে আপনাকে এটি নিতে এবং ছিনিয়েই নিতে হবে।

তাই স্বাভাবিক ভাবেই এটাই তারা বলছে। এরপরে আপনি দেখবেন একই সময়ে তিনটে জিনিস ঘটছে। এক, ওই ইস্তেহার বলছে যে, দেশের প্রত্যেকের, প্রতিটি মধ্যবিত্তের সম্পদ পুরোপুরি ভাবে খতিয়ে দেখা হবে। যদি ২৫ কোটি মানুষ দারিদ্র্য থেকে বেরিয়ে আসেন, তবে তাঁদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। তাই তাঁদের সম্পদের বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করা হবে।

দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটি হল, জনসংখ্যার ভিত্তিতে তারা সম্পদ পুনর্বণ্টন করবে। একটি তৃতীয় ব্যাখ্যা করা হয়েছে সংখ্যালঘুদের বিষয়ে এবং এটি মিথ্যা। সংখ্যালঘুদের সঙ্গে মোদিজি অন্যায় আচরণ করেছেন, তাই দেশের সম্পদে তাঁদের প্রথম অধিকার রয়েছে, যেমনটা আমাদের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন। এরপরে চতুর্থত স্যাম পিত্রোদাজি সেই সময়েই উত্তরাধিকার কর প্রসঙ্গে কথা বলেছেন। সম্ভবত তিনি অজান্তেই নিজের মনের কথা বলেছেন; আমেরিকার মতো, এবং এটি ৫৫%, সামান্য নয়। এর আগে আমাদের একটা উত্তরাধিকার কর ছিল, কিন্তু সেটি খুবই কম পরিমাণে। ৫৫ শতাংশ করের বিষয়ে কথা বলা কি ভারতের জন্য ভাল হতে পারে?

বর্তমানে এই চারটি সূত্রকে যদি আপনি মেলান, তাহলেই আপনি বুঝতে পারবেন কংগ্রেসের চিন্তাধারা। আর রাহুল গান্ধি এবং তাঁর বন্ধুরা কোন দিশায় দেশকে নিয়ে যেতে চান, সেটাও বুঝতে পারবেন। সেই কারণেই আমরা তাঁদের চিন্তাধারার বিষয়ে দেশকে সচেতন করার প্রয়োজন বোধ করেছি।

রাহুল জোশী: প্রধানমন্ত্রী বলেছেন যে, এই ইস্তেহারে মুসলিম লিগের ছাপ স্পষ্ট। সেটা কোথা থেকে এল?

পীযূষ গোয়েল: আপনি যদি কংগ্রেসের গোটা ইতিহাসের দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন যে, তারা ভাষা, রাজ্য, ধর্ম এবং এমনকী গায়ের রঙের উপর ভিত্তি করে বৈষম্য করেছেন।

 

এখন আমার আপনারটা জানা নেই, কিন্তু আমি মরাঠি। তাই আপনি আপনার দর্শকদের বলুন আমি কোন ক্যাটাগরিতে পড়ছি। কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক যে, ওরা এইভাবে সব সময় মানুষের মধ্যে বিভাজন তৈরি করার চেষ্টা করেছে। এমনকী নিজেদের স্কিমের মাধ্যমেও ওরা মানুষের মধ্যে বিভাজন করেছে। সাচার কমিটি কী ছিল? তারা প্রতিটি রাজ্যের মানুষকে জিজ্ঞাসা করেছিল যে, মুসলমানদের জন্য তাদের কি নির্দিষ্ট নীতি বা পরিকল্পনা রয়েছে। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। তাই যদি আমরা রাস্তাঘাট অথবা রেলওয়ের জন্য কোনও পরিকাঠামো প্রকল্প তৈরি করি, তাহলে সেই রাস্তা ব্যবহার করার জন্য মুসলিমদের কতটা সংরক্ষণ দিতে হবে, তা কি আমাদের ঠিক করতে হবে?

একইভাবে কর্নাটক এবং তাদের অন্যান্য রাজ্যে তারা দাবি করেছে যে, মুসলিমদের সংরক্ষণ পাওয়া উচিত। এখন এই সমস্ত বিষয়ই বলছে মুসলিম লিগ। তাদের ইস্তেহারে তাদের কার্যকলাপ এবং তাদের কথাবার্তা এবং কয়েকটি রাজ্যে তারা যে কাজ করেছে, সেদিকে তাকিয়ে এবং তারা কীভাবে ভগবান শ্রীরামকে অপমান করছে, রামমন্দিরে প্রাণ প্রতিষ্ঠাকে বয়কট করছে, শ্রীরামের অস্তিত্বের উপর প্রশ্ন তুলছে, কিছু কংগ্রেস নেতা তো আবার বলছে যে, তাঁরা রাম মন্দিরের শোধন করবেন, যখন এই সমস্ত বক্তব্য আসে এবং এই প্রেক্ষাপটে দেখা যায় যে, এই মানুষগুলি দাবি করছেন, দেশের সম্পদের প্রথম অধিকার একটি সম্প্রদায়ের হওয়া উচিত, তখন আপনি বিচার করতে পারেন যে, তারা মুসলিম লীগের মতোই কথা বলছে।

রাহুল জোশী: আর তারা ওবিসি-দের কাছ থেকে সংরক্ষণ ছিনিয়ে নেবে এবং তা মুসলিমদের দিয়ে দেবে, এটা আপনি কীভাবে দেখছেন? সেটা কোথায়?

পীযূষ গোয়েল: আমরা আইনের শাসনে বিশ্বাস রাখি। তফসিলি জাতি, তফসিলি উপজাতি এবং ওবিসি-দের জন্য সংরক্ষিত সংরক্ষণের সঙ্গে সুপ্রিম কোর্ট একটি সীমা নির্ধারণ করেছে। আর মণ্ডল কমিশনের রিপোর্ট এত দিন ধরেই চলে আসছে, আর কংগ্রেস কখনও তা বাস্তবায়ন করেনি। মণ্ডল কমিশনের অধীনে ওবিসিদের সংরক্ষণ দিতে একটি অ-কংগ্রেস সরকারকে আসতে হয়েছিল।

যদি আপনি দেখেন, যখন আমরা আর্থিক ভাবে দুর্বল শ্রেণীগুলিকে সংরক্ষণ দিয়েছিলাম, তখন আমরা ওবিসি, এসসি, এসটি কোটার বাইরে থেকে তা দিয়েছিলাম। সেই কারণে তা অপসারণ করা হয়নি। কিন্তু সুপ্রিম কোর্ট স্পষ্ট নির্দেশিকা জারি করেছিল যে, সামাজিক এবং অর্থনৈতিক কারণের জন্য সংরক্ষণ একটা সীমা পর্যন্ত হতে পারে। এক্ষেত্রে তারা যদি মুসলিমদের সঙ্গে সংযোগ গড়ে তোলে, তাহলে ইসলামে সামাজিক অনগ্রসরতার কোনও প্রশ্নই থাকে না। কারণ তাদের কোনও জাতিগত প্রথাই নেই। তাই প্রথমে সেটা হবে অসাংবিধানিক। আর যদি তারা সেটা করার চেষ্টা করে, তাহলে স্বাভাবিক ভাবেই তা ওবিসি, এসসি এবং এসটি-দের কাছ থেকে সংরক্ষণ ছিনিয়ে নেওয়ার পরেই ঘটবে।

সেই কারণে তারা যদি নির্দিষ্ট কোনও ধর্মকে সংরক্ষণ দেওয়ার চেষ্টা করে এবং ওবিসি, এসসি, এসটি-দের কাছ থেকে সংরক্ষণ ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে, তাহলে এই দেশ তা মেনে নেবে না। দেশের ওবিসি, বনবাসী, তফসিলি জাতি, দলিত, সমস্ত সুবিধা থেকে বঞ্চিত অথবা অনগ্রসর যে কোনও মানুষকে দেওয়া সংরক্ষণের ক্ষেত্রে কিছুই হতে দেবে না বিজেপি, আমাদের জোটশক্তি এবং প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এটা আমাদের নিশ্চয়তা যে, কংগ্রেস যতই চেষ্টা করুক না কেন, শুধুমাত্র তাদের রাজনৈতিক তুষ্টির জন্য ওবিসি, এসসি এবং এসটি-দের সঙ্গে ছিনিমিনি খেলতে দেব না আমরা।

রাহুল জোশী: রাহুল গান্ধি বলছেন যে, যদি আপনাদের দিকে ইডি, সিবিআই এবং ইভিএম না থাকত, তাহলে আপনাদের মধ্যে কেউ এমনকী নরেন্দ্র মোদিও ভোটে জিততে পারতেন না। আসলে ইডি, সিবিআই এবং ইভিএম-এর সহায়তায় তিনি ম্যাচ ফিক্সিং করে ভোটে জিতছেন। এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

পীযূষ গোয়েল: কর্নাটক এবং তেলঙ্গানায় তারা নির্বাচনে জিতেছে, তাই তাদের তো অবিলম্বে পদত্যাগ করা উচিত, কারণ তারাই বলছে যে, ইভিএম বেঠিক। তাদের পদত্যাগ করা উচিত এবং বলা উচিত যে, তারা সরকার গড়বে না আর তারা ভোটের জন্য ব্যালট বাক্স ফিরিয়ে আনতে চাইছে। তাই তাদেরই ঠিক করতে দেওয়া হোক।

তারা তো সুপ্রিম কোর্টকেও ইমোশনাল ব্ল্যাকমেল করছে যে, যদি কোনও সিদ্ধান্ত তাদের পক্ষে যায়, তাহলে ‘গণতন্ত্র রক্ষা পাবে, সত্যমেব জয়তে’ সুপ্রিম কোর্টের জয়জয়কার হবে। কিন্তু যদি রামলালার মন্দির গড়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত হয়, তাহলে তারা সুপ্রিম কোর্টের সমালোচনায় মুখর হবে… আর সুপ্রিম কোর্ট তো ইভিএম-এর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

এটা খুবই তুচ্ছ বিষয়। এমনকী সারা দেশে ব্যবহৃত লক্ষ লক্ষ ইভিএম নেটের মাধ্যমে পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। আমি বলতে চাইছি যে, ওদের চিন্তাভাবনা কী ভয়ানক! আমি তো বলব অবজ্ঞারও নিচে। আপনি কল্পনা করতে পারেন যে, সারা দেশে প্রায় ১২ লক্ষেরও বেশি ইভিএম ব্যবহার করা হয়েছে। এমনকী সেগুলি একে অপরের সঙ্গে সংযুক্তও নয়। তাই যদি কোনও গোলমাল থাকে, তাহলে তো প্রায় ১২ লক্ষ ইভিএমে কারচুপি করতে হবে। আর যদি সেটা ঘটেও, তাহলে কোনও নির্বাচনে কোনও বিরোধী দলের জয়ী হয়ে সরকার গঠনের কোনও প্রশ্নই থাকত না।

 

তাই এটা খুবই তুচ্ছ ব্যাখ্যা। ওরা ভাল করেই জানে যে, ওরা হারতে চলেছে। তাই এখন তারা রাহুল গান্ধির পরাজয়কে ধামাচাপা দিতে একটা ব্যাখ্যার প্রেক্ষাপট তৈরিতে ব্যস্ত। সেই কারণে ওরা ইভিএম-এর উপরেই দোষ চাপাবে। এরপর তারা শরদ পওয়ার অথবা এমনকী উদ্ধব ঠাকরেকেও দোষারোপ করতে পারে। তাদের শুধুমাত্র একটাই কাজ, রাহুল গান্ধি এবং গান্ধি-নেহরু পরিবারকে রক্ষা করা। যতদূর ইডি এবং সিবিআই-এর বিষয়টা নিয়ে কথা হচ্ছে, আমি বিশ্বাস করি যে, আইন নিজের পথে এগোবে। আইনের একটা নিয়ম রয়েছে। আপনি যদি দুর্নীতি করেন, আপনি ধরা পড়বেন। আপনি যদি হাতেনাতে ধরা পড়েন, তাহলে আইন নিজের পথেই কার্যবিধি চালাবে।

রাহুল জোশী: কিন্তু পীষূষজি এটা কি সত্যি নয় যে, ইডি-র বেশিরভাগ মামলা এবং অভিযান বিরোধী দলগুলির ক্ষেত্রেই হচ্ছে? সম্প্রতি একটি জাতীয় সংবাদপত্র একটা গবেষণা চালিয়েছে এবং তাতে দেখা গিয়েছে যে, অন্যান্য দল থেকে বিজেপিতে যোগ দেওয়া প্রায় ২৫ জন নেতার মধ্যে ২৩ জনের ক্ষেত্রেই তাঁদের বিরুদ্ধে চলা মামলা বাতিল হয়েছে অথবা সেটা ঠান্ডা ঘরে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

পীযূষ গোয়েল: আমার মনে হয়, আইন নিজস্ব গতি এবং নিজস্ব সময় নিয়েই এগোবে। কিন্তু আমাদের সরকার কোনও রকম মামলায় হস্তক্ষেপ করে না। এগুলো স্বাধীন সংস্থা, যারা নিজেদের কাজ করে।
আর আমরা আমাদের দলে কাউকে নেওয়ার আগে তাঁর উপর কী ধরনের মামলা ঝুলছে, সেটা যাচাই করেই নিই। আর ওই ব্যক্তি আমাদের দলের নীতির সঙ্গে মানিয়ে নিতে পারবেন কি না, সেটাও পরখ করে দেখা হয়। এমন প্রচুর মানুষ রয়েছেন, যাঁরা দলে যোগ দিতে চান, অথচ তাঁদের আমরা বিবেচনাই করি না। আসলে যদি আমাদের মনে হয়, তাঁদের প্রেক্ষাপট এমনই যে, সেটা আমাদের দলে গ্রহণ করা হবে না, সেক্ষেত্রে আমরা তাঁদের বিবেচনার মধ্যেই রাখি না।

রাহুল জোশী: আর যদি তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা থাকে এবং তাঁরা আপনার দলে যোগ দেয়, তাহলে মামলাগুলো চাপা পড়ে যাবে?

পীযূষ গোয়েল: আইন আইনের পথে চলবে। আমাদের পক্ষে কোনও মামলা ধামাচাপা দেওয়া সম্ভব নয়। ওঁরা স্বাধীন সংস্থা। আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করে না।

রাহুল জোশী: নির্বাচন কয়েক দফা জুড়ে আরও একটা ন্যারেটিভ চলছে, সেটা হল ভারত-পাকিস্তান অধ্যায়। শুরুর দিকে বলা হচ্ছিল, আজকের ভারত সেই ভারত নেই যে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবে আর বাড়ি ফিরে যাবে – “ইয়ে ভারত ঘর মে ঘুস কে মারেগা”। বিদেশি সংবাদ সংস্থারা বলছে, আমাদের কিছু গোয়েন্দা সংস্থা পাকিস্তানের মাটিতে ২০ জন সন্ত্রাসীকে হত্যা করেছে। কংগ্রেসের মণিশঙ্কর আইয়ার বলছেন, পাকিস্তানের সঙ্গে ঝামেলা করা উচিত নয়, কারণ ওঁদের কাছে পরমাণু বোমা রয়েছে। ওরা পাল্টা হামলা করতে পারে। আপনি এই ন্যারেটিভকে কীভাবে দেখছেন? এটাও কী তুষ্টিকরণের ন্যারেটিভ?

পীযূষ গোয়েল: ভারত স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আমরা অন্য দেশের রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করি না। তাদেরও করা উচিত নয়। দ্বিতীয়ত, অতীতে আমাদের সরকার দুর্বল ছিল। এটা সবাই জানে। আমি একজন মুম্বইকর। আমরা সন্ত্রাসীদের মুক্তিপণ আদায় করতে দেখেছি, সেটা বোমা বিস্ফোরণ হোক কিংবা ২০০৮ সালের সন্ত্রাসী হামলা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেস দেশকে দুর্বল সরকার দিয়েছে, এতে দেশের প্রতিটা নাগরিক অসন্তুষ্ট। আজ প্রধানমন্ত্রী মোদিজি বালাকোট বা উরিতে পাল্টা হামলা চালিয়েছেন, এতে দেশের প্রতিটি নাগরিক গর্বিত। দেশের মনোবল বেড়েছে। দেশবাসী নিরাপত্তার অনুভূতি পেয়েছেন। দেশের প্রতিটা মানুষ নিরাপদ বোধ করছেন। আমজনতার কাছে এটা বড় ইস্যু।

গতকাল আমি কান্দিভালি ইস্ট এবং মালাড ইস্ট সফরে গিয়েছিলাম। সেখানে এক মহিলা আমাকে বলেন, তিনি খুব খুশি। তিনি শুধু মোদিজিকেই ভোট দেবেন। কারণ আজ দেশের মহিলারা নিরাপদ বোধ করেন। এই কথা যেন আমি মোদিজিকে জানিয়ে দিই। প্রায় দেড় মিনিট আমার সঙ্গে কথা বলেন তিনি। প্রচণ্ড উত্তেজিত। মোদিজিকে কী কী বিষয় জানাতে হবে সব বলে দেন। আসলে ভারত আত্মসম্মান ফিরে পেয়েছে, এটাই মুড অফ দ্য নেশন। ভারত এখন কারও কাছে মাথা নত করবে না। ভারতীয়দের মধ্যে এই আত্মবিশ্বাস জন্ম নিয়েছে। এটাই প্রধানমন্ত্রী মোদিজির জনপ্রিয়তার একটা বড় কারণ।

রাহুল জোশী: বিরোধীরা বলছে, সরকার পাকিস্তানকে শক্তি দেখায়, কিন্তু চিনের কথা বললেই আর কোনও উত্তর পাওয়া যায় না। চিন আমাদের জমি দখল করে রেখেছে, আপনি কিছু বলেননি…

পীযূষ গোয়েল: রাহুলজি, বিজেপির আমলে চিন আমাদের জমি নেয়নি, কংগ্রেসের আমলে নিয়েছে। কাঠগড়ায় কংগ্রেস। কংগ্রেস জমানায় যুদ্ধে হেরে যে জমি আমরা হারিয়েছি, তার জবাব কংগ্রেসকেই দিতে হবে। বিজেপি এবং এনডিএ জমানায় ভারতের সীমান্ত নিরাপদ। সশস্ত্র ও নিরাপত্তা বাহিনীর মনোবল তুঙ্গে রয়েছে। আমাদের উপর কেউ হামলার চেষ্টা করলে তারা কড়া জবাব দেয়।

আপনার নিশ্চয় মনে আছে, কীভাবে প্যাংগং লেকে আমাদের সেনারা উপযুক্ত জবাব দিয়েছিল। সেখান থেকে একজনও সরেনি। আমরা সেনাকে অফুরন্ত সুযোগ সুবিধা দিয়েছি, সেরা সরঞ্জামে সজ্জিত করেছি।
কংগ্রেস শাসনে সেনা সরঞ্জাম বা প্রতিরক্ষা খাতে উৎপাদন দুর্বল হয়ে পড়েছিল। আজ আমাদের সশস্ত্র বাহিনী নতুন শক্তি নতুন উদ্দীপনা পেয়েছে।

 

রাহুল জোশী: এবারের নির্বাচনে আরেকটা বিষয় উঠে এসেছে, সেটা হল, প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা পরিষদ জনসংখ্যার বিশ্লেষণ করছে। দেখা যাচ্ছে, ১৯৫০ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ৪৩ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সময়ে হিন্দু জনসংখ্যা ৭ শতাংশ কমেছে। আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন? আবার ক্ষমতায় এলে কি জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণে কোনও পদক্ষেপ করবেন?

পীযূষ গোয়েল: এই বিষয়ে সাধারণ মানুষকে ভাবতে হবে। সরকারের এমন কোনও স্কিম নেই। তবে জনগণের এই বিষয়ে গুরুত্ব সহকারে ভাবা উচিত, এই নিয়ে চিন্তা করা উচিত, বিতর্ক হওয়া উচিত। সংবাদমাধ্যমেও বিষয়টা নিয়ে আলোচনা করতে হবে। দেশের ভারসাম্য বিঘ্নিত হচ্ছে কি না, জনগণকে ভাবতে হবে। ভবিষ্যতে এর পরিণতি কী হবে? আপনি যদি গোটা বিশ্বের দিকে তাকান, এটা উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। অনেক দেশই জনসংখ্যার পরিবর্তন নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই নিয়ে চিন্তাভাবনা করছে। অনেকে আইন প্রণয়নও করেছে। ভারত অন্তর্ভুক্তিমুলক দেশ। আমরা সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলি। সরকারের পক্ষ থেকে এই ব্যাপারে কিছু করতে চাই না, তবে ভারতের জনগণকে এই নিয়ে অবশ্যই ভাবতে হবে।

রাহুল জোশী: আমরা আজ মুম্বইয়ে আছি। তাই মহারাষ্ট্র নিয়ে কথা বলা যাক, এবারের নির্বাচনে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য। আপনি একমত হবেন যে, গতবার আপনারা শিবসেনার সঙ্গে ছিলেন এবং ৪৮টি আসনের মধ্যে ৪১টিতে জিতেছিলেন। এবার গণ্ডগোল হয়েছে। দুই দলে ভাগ হয়ে গিয়েছে। একটি দল আপনাদের সঙ্গে রয়েছে আর অন্য দল যাকে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন ‘ডুপ্লিকেট শিবসেনা’। এই সময়ে দাঁড়িয়ে এটাকে কীভাবে দেখছেন? আপনারা ২৮ আসনে লড়ছেন। গতবার বিজেপি ২৩ আসনে জিতেছিল। এবার এই আসনগুলো ধরে রাখতে পারবেন? বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে মহারাষ্ট্র আপনাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ রাজ্য…

পীযূষ গোয়েল: ২০১৯ সালে মহারাষ্ট্রের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছিল। আপনার মনে থাকবে, ২০১৯ সালের লোকসভা ভোট নরেন্দ্র মোদির নামে লড়া হয়। আমার এখনও মনে আছে, আমাদের এলাকা থেকে শিবসেনা সাংসদকে জেতাতে আমি সাধারণ মানুষের ঘরে ঘরে গিয়েছিলাম। বাসিন্দা কল্যাণ সমিতির বৈঠকে বলেছিলাম, মোদিজিকে ভোট দিতে হবে। এটা মোদিজির নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর নির্বাচন। শিবসেনার সাংসদরা মোদিজির নামে নির্বাচনে জিতেছেন, ওঁরাও সেটা জানেন। ২০১৯ সালের বিধানসভা নির্বাচনেও বারবার বলা হয়েছিল, দেবেন্দ্র ফড়নবিশ মুখ্যমন্ত্রী হবেন। এমনকী অনেক জনসভায়, যেখানে উদ্ধব ঠাকরেজিও উপস্থিত ছিলেন, বলা হয়েছিল, দেবেন্দ্র ফড়নবিশকে মুখ্যমন্ত্রী করা হবে।

উদ্ধব ঠাকরে আমাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। মোদিজি এবং ফড়নবিশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছেন। সবচেয়ে বড় কথা, আমাদের জোট ছিল। জোট সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোট পায়। কোনও না কোনওভাবে তাঁর মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার উচ্চাকাঙ্ক্ষা এবং সম্ভবত ছেলেকে প্রতিষ্ঠিত করার ইচ্ছা… সেই লোভেই তিনি বালাসাহেব ঠাকরের নীতি বিসর্জন দিয়েছেন, যা শিবসেনার হিতের জন্য ছিল। তিনি হিন্দুত্বকেও বলি দিয়েছেন। বালাসাহেব ঠাকরের বিখ্যাত উক্তি ছিল, “আমি দল ভেঙে দেব, কিন্তু কংগ্রেসের সঙ্গে হাত মেলাব না”। উদ্ধব ঠাকরে সেই নীতিও জলাঞ্জলি দিয়েছেন।

তুষ্টিকরণের রাজনীতি করতে গিয়ে উদ্ধব ঠাকরে রাহুল গান্ধির কোলে গিয়ে বসলেন। আমার মনে হয়, এই নিয়ে শিবসেনার মধ্যে অনেক ক্ষোভ ছিল। সাংসদ এবং বিধায়করাও বুঝতে পেরেছিলেন, পরবর্তী সময়ে তাঁদের আর মুখ থাকবে না। এই পরিস্থিতিতে গোটা শিবসেনা সিদ্ধান্ত নেয় যে তাঁদের নেতা বদল করতে হবে। একনাথ শিন্ডে নেতা হলে, কয়েকজন দল থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নেন। এঁদের সঙ্গে দুই থেকে চারজন সিনিয়র নেতা রয়েছেন। উদ্ধব ঠাকরে স্প্লিন্টার গ্রুপে রয়েছেন। অধিকাংশ সাংসদ এবং বিধায়কই মূল শিবসেনার সঙ্গে। সুতরাং এটা কোনও ভাগ নয়, শিবসেনা অক্ষত রয়েছে, এটা একটা ছোট স্প্লিন্টার গ্রুপ।

একই কথা এনসিপি-র ক্ষেত্রেও খাটে। অজিত পওয়ারই মূল নেতা। শরদ পওয়ার মেয়েকে বাঁচাতে এটা করেছেন। ২০১৪ সালে ওঁরা বিজেপির সঙ্গে গিয়েছিল, ২০১৭ সালে বিজেপির সঙ্গে যেতে চেয়েছিল, ২০১৯ সালে গিয়েও পিছিয়ে এসেছিল।

রাহুল জোশী: উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারের প্রতি কিছুটা সহানুভূতি থাকতে পারে বলে কি আপনার মনে হয় না?

পীযূষ গোয়েল: সহানুভূতি তো মোদিজি এবং ফড়নবিশের জন্য থাকবে, কারণ ওঁরা প্রতারিত হয়েছেন। ওঁদের পিঠে ছুরি মারা হয়েছে। যদি আদৌ সহানুভূতির হাওয়া থাকে, তাহলে এই মানুষগুলোর জন্য থাকবে। এমনকী অজিত পওয়ারের জন্যও থাকবে, কারণ তাঁকে ঘুঁটি বানানো হয়েছিল। ২০১৪ সালে তাঁকে বলা হয়েছিল বিজেপিকে সমর্থন করার জন্য, যখন শিবসেনা আমাদের সমর্থন দিচ্ছিল না। ২০১৭ সালে সমস্ত বিধায়ককে বিজেপিকে সমর্থন করার কথা বলা হয়েছিল। এরপর তারা পিছু হটে। ২০১৯ সালেও… এখন এসব সামনে আসছে। শরদ পওয়ারজিও বলেছেন, তিনি ওঁদের বিজেপির সঙ্গে যেতে বলেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, এটা ছিল তাঁর স্ট্র্যাটেজি, কিন্তু মহারাষ্ট্রের জনগণ এই ধরনের রাজনীতি মেনে নেবে না। আমি আমার নির্বাচনী এলাকায় দেখেছি, কতটা শক্তভাবে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

আরও পড়ুন – ‘মোদি, ফড়নবিসের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে উদ্ধব’ বিস্ফোরক পীযূষ গোয়েল

আরও পড়ুন – ইভিএম কারচুপি নিয়ে নিউজ18-এর কাছে মুখ খুললেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী পীযূষ গোয়েল

রাহুল জোশী: একদিকে আপনি মহারাষ্ট্র নিয়ে এতটা আত্মবিশ্বাসী, অন্য দিকে প্রধানমন্ত্রী বলছেন, শরদ পওয়ার অজিত পওয়ারের সঙ্গে যোগ দিতে পারেন। এটা কি কোনও ইঙ্গিতপূর্ণ বার্তা? আপনি কীভাবে দেখছেন?

পীযূষ গোয়েল: শরদ পওয়ারজি মাথা নত করে নিয়েছেন। তিনি বলে দিয়েছেন, বারামতী নির্বাচনের পর তাঁর দল বা ছোট দলগুলো কংগ্রেসের সঙ্গে মিশে যেতে পারে। সুতরাং এটা স্পষ্ট যে তিনি অনুমান করছেন, সুনেত্রা পওয়ারজি জিতছেন এবং সুপ্রিয়া সুলেজি হারছেন। তাঁর এখন একটাই লক্ষ্য, সুপ্রিয়া সুলেকে বাঁচানো। তাঁর রাজ্যসভার আসন নাও থাকতে পারে, লোকসভার আসন হারছেন। তাই হয়তো তিনি ভেবেছেন, সুপ্রিয়া সুলে কংগ্রেসে যোগ দিক। সুপ্রিয়া সুলে কংগ্রেসে যোগ দিতেও পারেন… স্প্লিন্টার গ্রুপে কিছুই অবশিষ্ট থাকবে না…

উদ্ধব ঠাকরে যে কারণেই হোক এখন কংগ্রেসের বি টিম। ওদের কথাতেই তিনি নাচছেন। তুষ্টিকরণের রাজনীতি উদ্ধব ঠাকরের কলিং কার্ডে পরিণত হয়েছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, তিনি হিন্দুত্ব এবং বালাসাহেবের সমস্ত নীতি বিসর্জন দিয়েছেন।

রাহুল জোশী: এবার মহারাষ্ট্রে অনেক মুসলিম উদ্ধব ঠাকরে সেনাকে ভোট দেবেন।

পীযূষ গোয়েল: হ্যাঁ, আজকাল উদ্ধব ঠাকরে মুসলিম ভোট ব্যাঙ্কের পিছনে ছুটছেন… সেই জন্যই আমি বলেছিলাম, আজ ছেলের কাজকর্ম দেখলে বালাসাহেব দুঃখ পেতেন। তবে তাঁর ভাল লাগবে যে শিন্ডেজি এখনও তাঁর মূল নীতিগুলো ধরে রেখেছেন এবং শিবসেনা অটুট রয়েছে। কিন্তু তাঁর নিজের ছেলেই তাঁর নীতির তোয়াক্কা করছেন না, এটা দুঃখজনক। আমি বিশ্বাস করি, আমাদের নীতি, আমাদের মহাযুতির নীতি এমন যে তাতে আমরা মুসলমানদেরও আমন্ত্রণ জানাতে পারি। আমার এলাকায় দেখেছি, বিপুল সংখ্যক মুসলিম ভাই আমাদের সমর্থন করছেন। তাঁরা আমাদের সঙ্গে আছেন। গতকাল হকারদের একটা বড় দল আমার অফিসে এসেছিল। তাঁরা বলেন, মোদিজি আমাদের খেয়াল রেখেছেন। স্বনিধি এবং এই জাতীয় অন্যান্য প্রকল্প নিয়ে এসেছেন। তিন তালাক আইনে মুসলিম মেয়েদের ভবিষ্যৎ সুরক্ষিত হয়েছে, এটা ওঁদের কথা। ওঁরা মেয়েদের নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। মুসলিম সমাজ আর তুষ্টিকরণ বা এই ধরনের বিতর্কিত মন্তব্যে প্রভাবিত হয় না। তাঁরা দেশের মূল স্রোতে ফিরতে চায়। তাঁরা প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আছেন, সবকা সাহ সবকা বিকাশে বিশ্বাসী।

রাহুল জোশী: আমি একটা প্রশ্ন সরাসরি জিজ্ঞেস করতে চাই। আপনি মুসলমানদের কথা বলছেন। কিন্তু মহারাষ্ট্রে মরাঠারা কিছুটা হলেও কি বিজেপির বিপক্ষে নয়? এখানে মরাঠা আন্দোলন হয়েছিল, মনোজ জারাঙ্গে পাটিলজি নেতৃত্ব দিয়েছিলেন। মরাঠারা আজ বিজেপির সঙ্গে আছে কি না, সেটা কী স্পষ্ট করে বলতে পারেন? এখানে এঁরা বড় ভোট ব্লক…

পীযূষ গোয়েল: পুরো মরাঠা সমাজ মনে করে, যদি কেউ তাঁদের স্বার্থরক্ষা করতে পারে, সেটা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিজি… মোদিজি এবং আমাদের মহাযুতি সরকার, শুধুমাত্র এই ডবল ইঞ্জিন সরকারই মরাঠাদের স্বার্থরক্ষা করতে পারে। মরাঠারা জানেন, তাঁদের ভোট এখানে-ওখানে দিলে নষ্ট হবে। না তাঁরা নির্বাচিত হবে, না তাঁরা মরাঠাদের স্বার্থরক্ষা করবেন। আমার পূর্ণ বিশ্বাস, মরাঠা ভাই ও বোনেরা মোদিজির সঙ্গে আছেন এবং বিজেপিকে পূর্ণ সমর্থন করবেন।

রাহুল জোশী: পীযূষজি মুম্বই উত্তর আপনার আসন। বিজেপির শক্ত ঘাঁটি। গতবারও বিজেপি বিপুল ভোটে জিতেছিল। এবার কি গতবারের জয়ের মার্জিন ছাড়িয়ে যেতে পারবেন?

পীযূষ গোয়েল: মার্জিন বাড়বে কি না ‘জনতা জনার্দন’ ঠিক করবে। কিন্তু আমি যেখানেই গিয়েছি, ভালবাসা, সমর্থন, আশীর্বাদ পেয়েছি… সেটা বস্তি হোক কিংবা কোনও গোষ্ঠী বা সম্প্রদায়। আমার নির্বাচনী এলাকায় এমন কাউকে দেখিনি যার বিজেপির প্রতি কোনওরকম নেতিবাচকতা রয়েছে। সবাই মোদিজির সঙ্গে যেতে চান। এই ভোট উত্তর মুম্বইয়ের জনগণের কাছ থেকে মোদিজির কাছে আশীর্বাদ হয়ে আসবে। মোদিজির গ্যারান্টি এবং আমার দৃঢ় সংকল্প হল, মোদিজির গ্যারান্ট উত্তর মুম্বইয়ের মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়া। উত্তর মুম্বইকে ‘উত্তম মুম্বই’ বানানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছি আমি। জনগণ আগের বারের চেয়ে বেশি সংখ্যায় ভোট দিতে আসবে এটা নিশ্চিত। আর ভোট হবে মোদিজির জন্য।

রাহুল জোশী: আপনার বিরুদ্ধে ভূষণ পাটিলকে দাঁড় করিয়েছে কংগ্রেস। তিনি বলছেন, আপনি বহিরাগত। মরাঠি বনাম গুজরাতি রঙ দেওয়ার চেষ্টাও হচ্ছে… এতে কি ভোটে প্রভাব ফেলতে পারে? একজন মুম্বইকর হিসেবে এই বক্তব্যকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

পীযূষ গোয়েল: যখন কারও কাছে বলার মতো কোনও বিষয়, নীতি বা দৃষ্টিভঙ্গী নেই, এমনকী কোনও ইস্যু নেই, তখন তারা এইসব কথা বলে… মজার ব্যাপার হল, আমরা সবাই মুম্বইকর… আমি একজন মুম্বইকর, আপনিও। আপনি কি কখনও নিজেকে দক্ষিণ মুম্বইকার বা উত্তর মুম্বইকার বলেছেন? আপনার এই স্টুডিওতে অনেক লোক রয়েছে, একটা ভোট হয়ে যাক, কেউ কি কখনও বলেন যে তিনি উত্তর মধ্য মুম্বইকর বা উত্তর-পূর্ব মুম্বইকর? আমরা সবাই মুম্বইকর এবং মুম্বইয়ের জন্য আমরা গর্বিত। কংগ্রেস এবং উদ্ধব ঠাকরেজি সম্ভবত মুম্বইকে ভাগ করতে চান। যেভাবেই হোক দেশকে ভাগ করতে হবে, এটাই ওঁদের নীতি এবং পরিকল্পনা। এখন ওঁরা মুম্বইকে ভাগ করতে চাইছে। মুম্বইবাসীকে এঁকে অন্যের বিরুদ্ধে লড়াতে চাইছে। এই ধরনের বিবৃতি একটা দল এবং সেই দলের কিছু মানুষই দিতে পারে… এটা মজার কারণ, বর্ষা গায়কোয়াড় এবং আমি একই এলাকার। নির্বাচনী এলাকা একে অপরের সংলগ্ন। তিনি কংগ্রেসের সভাপতি হিসেবে বহিরাগত ইস্যু তুলেছেন। আর নিজেই ধারাভি ছেড়ে বান্দ্রা সান্তাক্রুজ থেকে লড়তে যাচ্ছেন। এখন আমি জানি না, তিনি নিজেকে বহিরাগত হিসেবে দেখেন না কি ঘরের লোক হিসেবে দেখেন। সবাই জানেন আদিত্য ঠাকরেজি বান্দ্রায় থাকেন, আর তিনি সেই জায়গা ছেড়ে ওয়ারলি থেকে বিধায়ক হয়েছিলেন। সুতরাং আমি জানি না, তিনি বাইরের লোক না কি ওয়ারলির ভিতরের লোক।

উদ্ধব ঠাকরেজির নেতা রাহুল গান্ধিজি, ঠাকরেজি দিনরাত যাঁর প্রশংসা করেন এবং যাঁর নির্দেশে আজকাল দল চালান, আমি জানি না তিনি কোথা থেকে এসেছেন। কখনও তিনি ওয়ানাড় ছুটে যান, কখনও রায়বরেলি, তার আগে আমেঠি… সেই হিসেবে তাঁকেও সম্ভবত ইতালিয় হিসেবে গণ্য করা হবে, আমি জানি না…

রাহুল জোশী: তুষ্টিকরণ এখানেও চলছে। আমরা মুম্বইয়ে বসে আছি। এখানেও তুষ্টিকরণ হচ্ছে। কেউ বলছে, হেমন্ত কারকারেজিকে হত্যা করেছে, আরএসএস সমর্থিত পুলিশ, কাসভ নয়। আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখছেন?

 

পীযূষ গোয়েল: এটা লজ্জার কথা। কংগ্রেস অন্তত বাহিনীকে রেহাই দিক। কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরেজি, এমনভিএ, তথাকথিত মহাবিকাশ আঘাড়ি জোট, এঁদের অন্তত সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল ভাঙা উচিত নয়। সেনার আত্মত্যাগকে ছোট করে দেখা উচিত হবে না। বাটলা হাউজ কাণ্ডেও ওঁরা একই কাজ করেছে। কাশ্মীরেও সেনার অপমান করেছে। যারা পাথর ছুঁড়ছে, তারা ভাল ছিল… এখন ৩৭০ ধারা রদের পর এসব নিষিদ্ধ হয়েছে।

ওরা দেখতে পাচ্ছে না, মানুষের জীবন আমূল বদলে গিয়েছে। কংগ্রেস যখন হেমন্ত কারকারের আত্মত্যাগকে তুষ্টিকরণের রাজনীতির সঙ্গে জুড়ে দেয় বা তুকারামজি যিনি কাসভকে ধরতে গিয়ে শহিদ হয়েছিলেন অথবা উজ্জ্বল নিকমজি, যিনি ফাঁসি দেওয়ার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেছেন বা আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যারা বাকি সন্ত্রাসীদের গুলি করে মেরেছিল… মুম্বই খাদের ধারে দাঁড়িয়েছিল। দুই দিন মুক্তিপণের লড়াই হয়েছে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী মুম্বইকে বাঁচিয়েছে। এই সব আত্মত্যাগ… আমার অনেক বন্ধু ২০০৮ সালের হামলায় প্রাণ হারান। তারপর যখন কংগ্রেস নেতাদের কাছ থেকে এই ধরনের বিবৃতি আসে, সেটা কংগ্রেস হোক, উদ্ধব ঠাকরে কিংবা শরদ পওয়ার, তাঁরা দেশের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন, প্রতিটা মহারাষ্ট্রীয়, প্রতিটা মুম্বইকরের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেন। রাহুল গান্ধি, শরদ পওয়ার, উদ্ধব ঠাকরে বা তাঁদের দলের ছোট বড় নেতার প্রত্যেক মুম্বইকর, প্রতিটি জওয়ান, প্রত্যেক সেনাকর্মী এবং শহিদ পরিবারের কাছে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাওয়া উচিত।

রাহুল জোশী: জমিয়ত উলেমা ফতোয়া জারি করেছে যে মুসলমানদের উচিত কংগ্রেস, উদ্ধব ঠাকরে এবং শরদ পওয়ারকে ভোট দেওয়া। রাজ ঠাকরে আপনাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছেন। তিনি সমস্ত হিন্দুদের বিজেপি, শিন্ডে সেনা এবং অজিত পওয়ারজিকে ভোট দেওয়া উচিত বলে পাল্টা ফতোয়া জারি করেছেন। এই বিষয়টাকে আপনি কীভাবে দেখছেন?

পীযূষ গোয়েল: দেখুন, রাজ ঠাকরেজি কোনও ধর্মীয় নেতা নন। তিনি ক্ষুব্ধ হয়ে একথা বলেছেন। এই নিয়ে ফতোয়া জারি করার অধিকার কারও নেই। এটা প্রতিক্রিয়া এবং পাল্টা আক্রমণ। ধর্মের ভিত্তিতে ধর্মগুরুরা ফতোয়া জারি করেন। আমরা এই ফতোয়ার তীব্র নিন্দা জানাই। এ ধরনের ফতোয়া জারি করলে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয়। রাজ ঠাকরেজি একজন রাজনৈতিক নেতা… রাজনৈতিক নেতারা আবেদন করেন, নিজের মতামত তুলে ধরেন এবং জনগণের সমর্থন ও আশীর্বাদ চান। তিনি রাগের মাথায় এই কথা বলেছেন। কোনও মৌলবি বা ধর্মগুরুরও এই ধরনের ফতোয়া দেওয়ার অধিকার নেই। আপনি কোনও ধর্মগুরুকে এই ধরনের ফতোয়া দিতে দেখেছেন যে এই দলকে ভোট দিন, নাহলে ঈশ্বর ক্রুদ্ধ হবেন বা ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর খারাপ প্রভাব পড়বে? আমি বিশ্বাস করি, ধর্ম ও রাজনীতিকে মেশানো উচিত নয়। ভারত ধর্মনিরপেক্ষ দেশ। অসাম্প্রদায়িক দেশে সকলের ধর্ম পালনের অধিকার রয়েছে। রাজনীতির ময়দানে আমাদের রাজনৈতিক এবং কংক্রিট ইস্যুতে ভোটে লড়তে হবে।

রাহুল জোশী: আরেকটা প্রশ্ন। আপনি বাণিজ্য ও শিল্পমন্ত্রী হয়েছেন। রেলমন্ত্রী ছিলেন। সংস্কারে বিরাট অবদান রেখেছেন। এখন বস্তি পুনর্বাসন বড় সমস্যা। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী হিসেবে আপনি এই বিষয়টাকে কীভাবে দেখেন, আপনি কীভাবে এই সংস্কারে অবদান রাখতে চান? কীভাবে বিষয়টার মোকাবিলা করবেন, এর সমাধান কী?

 

পীযূষ গোয়েল: দেখুন, আপনি নিশ্চয়ই দেখেছেন মোদির গ্যারান্টি, ২০২৪ সালের জন্য আমাদের ‘সংকল্প পত্র’ (রেজোলিউশন)। এটি তার সারসংক্ষেপ। এর প্রথম অধ্যায়ে দরিদ্র পরিবারের সেবার কথা বলা হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী স্পষ্ট গ্যারান্টি দিয়েছেন যে বস্তির জমিতে বস্তি পুনর্বাসন বাড়িয়ে নিম্ন আয়ের পরিবারগুলিকে উন্নতমানের বাড়িতে পুনর্বাসন করা হবে। এর অর্থ বস্তির বাসিন্দাদের ইন-সিটু পুনর্বাসন দেওয়া হবে। আমাদের গ্যারান্টি লেটারে বলা হয়েছে, নিম্ন আয়ের পরিবারগুলি ভাল বাড়ি পাবে এবং তাঁদের সন্তানরা ভাল পরিবেশে বড় হবে। এটা স্পষ্ট যে আমরা সারাদেশের সমস্ত বস্তির বাসিন্দাদের খুব দ্রুত, তাঁরা যেখানে বাস করেন সেখানেই পুনর্বাসন দিতে চাই। তাঁরা একই জায়গায় একটি নতুন এবং ভাল বাড়ি পাবেন, এটাই আমাদের সিদ্ধান্ত।

রাহুল জোশী: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ। ২০ মে ভোটের দিন নির্বাচনের জন্য আপনাকে শুভেচ্ছা। এরপর আমরা আবার আপনার সঙ্গে দেখা করব। আপনি নির্বাচন নিয়ে যে ভবিষ্যদ্বাণী আজ করলেন তা সঠিক কি না, সরকার গঠনের পর আপনাকে জিজ্ঞেস করব। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

পীযূষ গোয়েল: আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। নমস্কার।