পাঁচমিশালি Knowledge Story: ছেলেদের এই পোশাকের নাম স্যান্ডো-গেঞ্জি কেন জানেন? উত্তর জানলে চমকে যাবেন! Gallery July 28, 2024 Bangla Digital Desk বাচ্চা থেকে বয়স্ক, পোশাকের নীচে সাদা নরম কাপড়ের স্যান্ডো গেঞ্জি পরেন সকলেই। পুরুষদের পছন্দের এবং প্রয়োজনের এই পোশাক অত্যন্ত জনপ্রিয়। আসলে স্লিভলেস বা হাতা কাটা শার্ট বলা যেতে পারে। সেটিই পশ্চিমবঙ্গও বাংলাদেশে স্যান্ডো গেঞ্জি নামে পরিচিত এবং ব্যাপক ভাবে ব্যবহৃত। গরমকালে শরীরের প্রধান পোশাককে ঘামে ভেজা থেকে রক্ষা করতে এই অন্তর্বাস পরার চল কিন্তু খুব বেশি দিন আগে শুরু হয়নি। অনেকে মনে করেন, ব্রিটিশ আমলেই ভারতে এই হাতাকাটা বিশেষ পোশাক পরার চল শুরু হয়। তবে এমন নামের পিছনে এক বিখ্যাত লোকের নাম জড়িয়ে আছে বলে ধারণা করা হয়। তিনি বিদেশি হলেও এক বিশেষ কারণেই ওই সময় ভারতে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলেন তিনি। এর আগে স্লিভলেস শার্ট নিয়ে একটু জানা যাক। এটি মূলত পশ্চিম থেকেই পরবর্তীতে প্রাচ্যে এসেছে। এ ধরনের পোশাকের শৈলী সাধারণত লিঙ্গের উপর নির্ভর করে। এ ধরনের পোশাক আন্ডারশার্ট বা অন্তর্বাস হিসেবেই ব্যবহৃত হয়। আবার ক্রীড়াবিদেরা ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড এবং ট্রায়থলনের মতো খেলায় পরে থাকেন। অনেক বলেন, গেঞ্জির উৎস ইংরেজি guernsey বা gansey। ইংল্যান্ডের গুয়েরেন্সি দ্বীপপুঞ্জে জেলেরা নরম ও আরামদায়ক এক ধরনের পোশাক পরতেন। বৃষ্টি ও নোনা জলের ছাঁট থেকে বাঁচতে সহায়ক এই পোশাকের নাম ওই দ্বীপপুঞ্জের নামানুসারে প্রচলিত হয়। ব্রিটিশ নৌসেনারাও এই পোশাক ব্যবহার করতেন। ব্রিটিশদের মাধ্যমেই ভারতবর্ষে এই ঔপনিবেশিক অন্তর্বাসের আগমন ঘটেছে বলে ধারণা করা যায়। সেই সূত্রে ঢুকে গিয়েছে বাংলা ভাষার শব্দসম্ভারে। কিন্তু গেঞ্জির সঙ্গে আমরা আবার স্যান্ডো বসাই। ফিলিপিন্সে যখন এটি শার্টের নিচে পরা হয়, তখন নাম হয় ‘স্যান্ডো’। ফিলিপিনো ভাষায় স্যান্ডো মানেই ঊর্ধ্বভাগের অন্তর্বাস। বাংলাদেশ ও পশ্চিমবঙ্গে একে বলে স্যান্ডো-গেঞ্জি। ভারতের অন্যান্য পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যেও এটিকে বলে স্যান্ডো-গেঞ্জি। কিন্তু বাংলাতে এটি স্যান্ডো গেঞ্জি নাম হল কীভাবে? এর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিখ্যাত জার্মান বডিবিল্ডার ইউজেন স্যান্ডোর নাম। ১৮৬৭ সালে তাঁর জন্ম। মারা গিয়েছেন ১৯২৫ সালে। জার্মানির কনিগসবার্গে জন্মগ্রহণকারী স্যান্ডো ১০ বছর বয়সে ইতালি সফরের সময় শরীরচর্চায় আগ্রহী হন। সেই সময়ের বড় বড় তারকাদের সঙ্গে বিভিন্ন শোয়ে অংশ নিয়েছেন। বলা হয়, ১৯০১ সালে তিনিই প্রথম বিশ্বের বৃহত্তম বডি বিল্ডিং প্রতিযোগিতার আয়োজন করেন। লন্ডনের রয়্যাল আলবার্ট হলে সেই আয়োজনে লেখক আর্থার কোনান ডয়েল এবং ক্রীড়াবিদ ও ভাস্কর চার্লস লয়েস-উইটেওরঞ্জের সঙ্গে বিচারকের আসনে ছিলেন স্যান্ডো। স্যান্ডোর বাইসেপস ছিল সাড়ে ১৯ ইঞ্চি! ঊরু ছিল বিখ্যাত ব্রিটিশ রেসিং ড্রাইভার ও সাইক্লিস্ট ক্রিস হোয়ের সমান। তাঁর শরীরের সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও অনন্য বিষয় ছিল সিক্স প্যাক বডি। প্রশস্ত ছাতি, ৪৮ ইঞ্চি। ফুললে হত ৬২ ইঞ্চি। সেই সময়কার আদর্শ পুরুষের প্রতীক হয়ে উঠেছিলেন তিনি। মেয়েদের কাছে ছিলেন আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু। ১৯০৫ সালে ভারত সফর করেন স্যান্ডো। বড় আয়োজন করে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনার সঙ্গে তাঁকে স্বাগত জানায় ভারতবাসী। অবশ্য এর আগে থেকেই ভারতে ‘নায়ক’-এ পরিণত হয়েছিলেন স্যান্ডো। কারণটা খুব সহজ, ওই সময় ভারতে জাতীয়তাবাদী আবেগ তুঙ্গে। স্যান্ডো হয়ে উঠেছিলেন ভারতীয় যোগের একজন আন্তর্জাতিক আইকন। আমেরিকান নৃতাত্ত্বিক জোসেফ এস অলটারের মতে, শরীরচর্চা হিসেবে আধুনিক যোগের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তিটি হলেন স্যান্ডো। বিভিন্ন শোয়ে ইউজেন স্যান্ডো স্লিভলেস শার্ট বা গেঞ্জি পরতেন। সেটি এখনকার স্যান্ডো গেঞ্জিরই কাছাকাছি। ধারণা করা হয়, বাংলার মানুষ আদর করে তাঁর নামেই রেখেছেন তাঁদের নিত্যপ্রয়োজনীয় পোশাকের নাম ‘স্যান্ডো গেঞ্জি’।