পাঁচমিশালি Knowledge Story: কালনাগিনী সাপ দেখতে ঠিক কেমন? সত্যিই এই সাপের অস্তিত্ব আছে…না সবটাই গল্পগাথা! জানুন আসল সত্য Gallery June 22, 2024 Bangla Digital Desk জ্ঞান হওয়া ইস্তকই আমাদের মনে সাপ নিয়ে বিশেষ ভয় বাসা বাঁধে৷ যার পিছনে দায়ী থাকে সামগ্রিক পরিবেশের পরিচালিত ভয়ভীতি এবং অবশ্যই কিছু প্রচলিত কিংবদন্তী৷ কেউটে, গোখরো, কালাচ, জলঢোরা…এই সব সাপের নাম জেনে বড় হয়ে ওঠে বাঙালি৷ এই সাপের তালিকায় যেমন থাকে বিষধর কিছু সাপের নাম, তেমন, বিষধর নয়, এমনও সাপ থাকে সেই তালিকায়৷ কিন্তু, কোনটা বিষধর, কোনটা নয় , তা সহজে না বুঝতে পারার চক্করে আমাদের মধ্যে সাপ নিয়ে সমগ্রিক ভাবেই এক ভীতি তৈরি হয়৷ তেমনই এক সাপের নাম যা আমরা ছোট শুনে এসেছি, তা হল কালনাগিনী৷ হ্যাঁ, সেই কালনাগিনী যা আমরা পুরাণ কথায় শুনেছি৷ শুনেছি বেহুলা-লখিন্দরের গল্প কথায়৷ এখন প্রশ্ন, সত্যিই কি পশ্চিমবঙ্গে আছে এই কালনাগিনী? এই সাপের কি সত্যিই অস্তিত্ব আছে? থাকলে তা দেখতে কেমন? সেই প্রশ্নেরই উত্তর খুঁজব আমরা৷ এই সাপ নিয়ে বিভিন্ন ভয়ের গল্প, ঘটনা শোনা যায় কান পাতলেই৷ সাপুড়েরাও নানা অভিজ্ঞতার কথা বলেন। হাটেঘাটে এ সাপকে বিষাক্ত বলে পরিচয় করিয়ে দেন। নাগ-নাগিনী নিয়ে কালনাগিনীর নামে সিনেমা-সিরিয়ালের খোঁজও মেলে ভুড়ি ভুড়ি। বাস্তবে ঠিক কেমন দেখতে এই সাপ? এই সাপের এক ছোবলেই কি মারা যায় মানুষ? কেমন এর স্বভাব? কতটা আক্রমণাত্মক হয় কালনাগিনীরা৷ নাগের সঙ্গেই কি থাকে এরা? প্রতিশোধ নেয়? প্রকৃতিবিদেরা জানাচ্ছেন, গ্রামবাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে এই সাপটিকে উড়ন্ত সাপ, উড়াল মহারাজ সাপ, সুন্দরী সাপ, কালসাপ ও কালনাগ বলে ডাকা হয়। প্রাণিজগতের সবচেয়ে সুন্দর সাপগুলোর মধ্যে অন্যতম হল এই সাপ। যার ইংরেজি নাম- Ornate Flying Snake (অর্নেট ফ্লাইং স্নেক, উড়ুক্কু সাপও বলতে পারেন) ও বৈজ্ঞানিক নাম Chrysopelea ornata (ক্রাইসোপিলিয়া অরনাটা)। সাধারণত, গাছপালা যুক্ত অঞ্চলে এদের দেখা মেলে। দৈর্ঘ্য ১০০ থেকে ১৭৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত। মাথা লম্বা ও চ্যাপ্টা এবং মুখের সামনের দিকে চৌকো আকৃতির। এদের দেহের রঙ পিঠের দিকে সবুজ। আবার হালকা সবুজ রঙয়ের এবং কালচে ডোরাযুক্ত হয়। ঘাড় থেকে লেজের ডগা পর্যন্ত মেরুদণ্ড বরাবর কমলা রঙের এবং লাল দাগ দেখা যায়। ইংরেজিতে ফ্লাইং স্নেক (Flying Snake) বলা হলেও এই সাপ সক্রিয়ভাবে উড়তে পারে না। খাদ্যগ্রহণ এবং চরিত্রগত কারণে উঁচু গাছের ডাল থেকে নিচু গাছের ডালে লাফ দিতে পারে। লাফ দেওয়ার সময় এরা সারা শরীরটা চ্যাপ্টা করে নেয়, যাতে ঠিক মতো গ্লাইড করা যায়৷ এটাই এদের বৈশিষ্ট্য৷ এবার প্রশ্ন, কালনাগিনীর বিষ কতটা জোড়াল! কালনাগিনীর বিষে মানুষের মৃত্যু হয় বলেও কথিত আছে। কিন্তু, জানেন কি, বাস্তবটা মোটেও এমন নয়, সম্পূর্ণ বিপরীত। কালনাগিনীর কামড়ে কোনও মানুষের মৃত্যু হয়েছে, এমন তথ্য জানা যায় না৷ এরা সাধারণত পোকামাকড়, টিকটিকি, গিরগিটি, ব্যাঙ ও ছোট পাখি ইত্যাদি খায়। জুন থেকে জুলাই মাস এদের প্রজনন মরসুম। প্রজননের সময়ে এরা সাধারণত ৬ থেকে ১২টি ডিম দেয়। প্রাণীবিদেরা জানাচ্ছেন, নাগ-নাগিনী বলে পৃথক কোনও সাপ নেই৷ যেমন, যে কোনও কোবরা গোত্রীয় সাপকে সাধারণত চলতি কথায় নাগ বলা হয়৷ কোবরা গোত্রীয় সাপের সঙ্গে কালনাগিনীর কোনও সম্পর্ক নেই৷ দু’টি ভিন্ন গোত্রীয় সাপ৷ তাই নাগ এবং নাগিনীর গল্পও এক্ষেত্রে খাটে না৷ কুসংস্কার ও ভুল উপস্থাপনার জন্য আজ এই ধরনের সাপের প্রজাতি প্রায় বিলুপ্ত হওয়ার পথে৷ আন্তর্জাতিক সাপ দিবসের অঙ্গীকার হওয়া উচিত সাপ সম্পর্কে সচেতন হওয়া৷ বিষযুক্ত ও বিষধর সাপের তুলনা বোঝা৷ কুসংস্কার সরিয়ে বিজ্ঞানে আস্থা রাখা৷ ভুল তথ্যের মাঝে ঠিক তথ্যের অনুসন্ধান করা এবং সর্বশেষে সাপে কামড়ালে দ্রুত চিকিৎসকের সাহায্য নেওয়া৷