স্তন ক্যানসার যে শুধু মহিলাদের হয়, এই ধারণা ভুল। পুরুষদেরও হতে পারে। এমনটাই বলছেন আইএলএস হাসপাতালের ডিরেক্টর এবং কনসালট্যান্ট সার্জন (গাইনোকলজি এবং প্রসূতি) অরুণ তাঁতিয়া। তাঁর মতে, স্তন ক্যানসারের লক্ষণগুলি চেনা অত্যন্ত জরুরি। তবেই প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা শুরু করা সম্ভব।
স্তনে অনিয়ন্ত্রিত কোষের বৃদ্ধিই স্তন ক্যানসার। এই বৃদ্ধি টিউমারের আকারে হতে পারে আবার ম্যালিগন্যান্টও হতে পারে। তবে যাই হোক না কেন শনাক্ত এবং চিকিৎসা প্রয়োজন। নাহলে শরীরের অন্যান্য অঞ্চলেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়তে পারে। এই বিষয়েই বিস্তারিত জানালেন চিকিৎসক অরুণা তাতিয়া।
কারণ এবং ঝুঁকি: স্তন ক্যানসারের কারণ আজও অজানা। তবে কয়েকটি কারণে ঝুঁকি বেড়ে যায়। সেগুলি হল –
পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের স্তন ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। ঝুঁকি বয়সের সঙ্গে বাড়ে। বিশেষ করে ৫০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি থাকে সবচেয়ে বেশি।
পারিবারিক ইতিহাসও খুব গুরুত্বপূর্ণ। নিকট আত্মীয় বা পরিবারের কারও স্তন ক্যানসার থাকলে পরবর্তী প্রজন্মের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
BRCA1 এবং BRCA2-এর মতো বংশগত জিন মিউটেশনের কারণেও স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এর সঙ্গে রয়েছে হরমোন জনিত কারণও। অল্প বয়সে পিরিয়ড শুরু হওয়া, দেরিতে মেনোপজ এমনকী হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপিতে দীর্ঘস্থায়ী ইস্ট্রোজেন এক্সপোজারের কারণেও স্তন ক্যানসারের ঝুঁকি থাকে।
স্তন ক্যানসার ঘুরে আসে। যাঁরা একবার স্তন ক্যানসারে আক্রান্ত হয়েছেন, তাঁদের ফের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
প্রাথমিক পর্যায়ে শনাক্তকরণের উপর স্তন ক্যানসারের চিকিৎসা নির্ভর করে। এই জন্যই লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি জেনে রাখা জরুরি।
বাহুর নীচে বা স্তনে মাংসপিণ্ড দেখা দিলে সতর্ক হতে হবে।
স্তনের আকার বা আকৃতির পরিবর্তনও স্তন ক্যানসারের অন্যতম লক্ষণ। তবে স্তনের টিস্যু ঘন হওয়ার কারণেও এমনটা হতে পারে।
ত্বকের কোনও পরিবর্তন হলে অবশ্যই চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ করতে হবে। যেমন লাল হয়ে যাওয়া বা ত্বকে ভাঁজ পড়া বা কুঁচকে যাওয়া ইত্যাদি।
স্তন বৃন্ত দিয়ে দুধের মতো সাদা স্রাব বের হলেও সাবধান হতে হবে। এর সঙ্গে স্তনে ব্যথা বা অস্বস্তিও স্তন ক্যানসারের অন্যতম উপসর্গ হতে পারে।
ক্যানসারের ধরন এবং কোন পর্যায়ে রয়েছে, তার উপর নির্ভর করে চিকিৎসা পদ্ধতি ঠিক করেন চিকিৎসকরা।
সার্জারি: সার্জারির মাধ্যমে টিউমার বা গোটা স্তন কিংবা স্তনের কিছু অংশ কেটে বাদ দেওয়া হয়।
রেডিয়েশন থেরাপি: এতে হাই এনার্জি রেডিয়েশনের মাধ্যমে ক্যানসার কোষ নির্মূল করা হয়। অস্ত্রোপচারের পরেও যদি ক্যানসার কোষ থেকে গেলে রেডিয়েশন থেরাপি দেন চিকিৎসকরা।
কেমোথেরাপি: ক্যানসার কোষের বৃদ্ধি কমাতে বা নির্মূল করতে কেমোথেরাপি দেওয়া হয়। অস্ত্রোপচারের আগে বা পরে এই থেরাপি করা হতে পারে।
হরমোন থেরাপি: ক্যানসার কোষের বৃদ্ধির জন্য প্রয়োজন এমন হরমোনের ক্ষরণ ব্লক করতে হরমোন থেরাপি দেওয়া হয়।
আরও পড়ুন: ঝোপেঝাড়ে পড়ে থাকে! গ্রামবাংলার এই শাকই হাড়ের ব্যথা কমিয়ে দেয়, গুনে গুনে সারায় রোগ
আরও পড়ুন: ২-৩ মাসই মেলে! যত পারেন খেয়ে নিন! হুড়মুড়িয়ে ওজন কমায় এই ফল, সারায় এক ডজন রোগ
টার্গেটেড থেরাপি: ক্যানসারের বিকাশ এবং বিস্তারের সঙ্গে জড়িত রাসায়নিকগুলিকে লক্ষ্য করে টার্গেটেড থেরাপি দেওয়া হয়।
ইমিউনোথেরাপি: এটি ক্যানসার কোষের বিরুদ্ধে শরীরের প্রতিরক্ষা সিস্টেমকে শক্তিশালী করে।