আমন্ডের থেকেও দামি; তবুও বর্তমানে ভিটামিন-প্রোটিন সমৃদ্ধ মারওয়াড়ের এই শুষ্ক সবজির চাহিদা তুঙ্গে

আমন্ডের থেকেও দামি! তবুও বর্তমানে ভিটামিন-প্রোটিন সমৃদ্ধ মারওয়াড়ের এই শুষ্ক সবজির চাহিদা তুঙ্গে

কৃষ্ণা কুমার গৌড়, যোধপুর: রাজস্থানি খাবারের স্বাদের কথা তো গোটা বিশ্বে বিখ্যাত। এখানকার ডালবাটি-চুরমা থেকে শুরু করে কের সাংরির মতো খাবারের নাম তো আজ সকলেই জেনে গিয়েছেন। কের আসলে হল মারওয়াড়ের শুকনো ফল। এর বিশেষত্ব হল, ফলটি শুষ্ক হওয়ার পর এর দাম বেড়ে যায়। কের আবার স্বাদের পাশাপাশি পুষ্টি ও প্রাকৃতিক গুণেও ভরপুর। রাজস্থানে ধনী থেকে দরিদ্র সকলেই উপভোগ করেন এর স্বাদ।

গ্রীষ্মের মরশুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বাজারে প্রচুর পরিমাণে মিলতে থাকে কের। রাজস্থানের বড় বাজার থেকে শুরু করে রাস্তার পাশের দোকানগুলিতেও এই সময় দেখা মিলছে এই শুষ্ক ফলটির। যোধপুরের বাইরোড, সিওয়াঞ্চি গেট, পাবতা এবং চৌপাসনি হাউজিং বোর্ড এলাকায় বাড়ছে বিক্রি। বর্তমানে চাহিদা বেশি থাকায় কেরির দামও বাড়ছে দিনে দিনে। দেশে-বিদেশে এর চাহিদা থাকায় এটি এখন মানুষের কর্মসংস্থানের মাধ্যম হয়ে উঠেছে। মারওয়াড়ের শুষ্ক এলাকাতেই মেলে এই ফল।

আরও পড়ুন-দারুণ খবর! ফিক্সড ডিপোজিটের বেশিরভাগ মেয়াদের সুদের হার ৬০ bps পর্যন্ত বাড়াল বাজাজ ফিন্যান্স; সর্বোচ্চ হার ৮.৮৫%

হোলি পর্যন্ত ফল ধরে খেজরি গাছে বেড়ে ওঠা সাংরি এবং কের গাছে। শুষ্ক কের সাংরির তুলনায় বাজারে সবুজ কের ও সবুজ সাংরির দাম অনেক কম। ড্রাই কের বিক্রি হচ্ছে ড্রাই ফ্রুটসের দামে। কেরের অনেক জাত রয়েছে। মারওয়াড়ের হরে কের আচার বিশ্ব বিখ্যাত। যদিও মারওয়াড়ে এই আচার সারা বছর পাওয়া যায়, তবে অফ সিজনে এর দাম বেশি থাকে। বর্তমানে স্থানীয় বাজারে তাজা কের পাওয়া যাচ্ছে কেজি প্রতি ২০০ টাকা থেকে ৩৫০ টাকা দরে। আর সাংরি মিলছে কেজি প্রতি ১৫০ টাকা থেকে ২৫০ টাকা দরে। পরবর্তীকালে শুষ্ক সবজি হিসেবে এই একই কেরের দাম প্রতি কেজি ১২০০ টাকায় পৌঁছয়।

আরও পড়ুন- চলন্ত ট্রেনে চিরুনি তল্লাশি চালাচ্ছে আরপিএফ; ইতিমধ্যেই উদ্ধার হয়েছে লক্ষ লক্ষ টাকার সোনা-রুপো আর নগদ!

এর চাহিদাও থাকে তুঙ্গে। এমনকী, প্রসাদ হিসেবেও নিবেদন করা হয় এই কের। মূলত শীতলাষ্টমীতে দেবীর প্রসাদে শুকনো কের সবজি রাখা হয়। আধুনিক সময়ের বাবুর্চিরা নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে এই সবজি দিয়ে নানা খাবার তৈরি করতে শুরু করেছেন। এখন পাঁচতারা হোটেলের মেন্যুতেও কের এক বিশেষ জায়গা করে নিয়েছে।

মারওয়াড়ে তাপমাত্রার পারদ চড়তে শুরু করলে কের গাছগুলো ফুলে ফুলে ঢেকে যায়। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই ফুল ফুটতে শুরু করে। এই মরশুমে সাংরিও হতে শুরু করে। মারওয়াড়ের নিকটবর্তী ভোজাসার, ভিনিয়াসার, ঘন্টিয়ালি, চিমনা, ​​চাখু, লুনা, উদত, কেলানসার, রানিসার, বরজাসার, সুভাপ, ইশরু, কেরালা, বারসিঙ্গা কা বাস, চাদি এবং লক্ষ্মণ-সহ দুই ডজনেরও বেশি গ্রামে দারুণ ফলন হয়েছে এই সবজির। আর এইসব গ্রামের মহিলারা কের ও সাংরি বিক্রি করতে শহরে আসেন।

বিশেষজ্ঞদের দাবি, সাংরি বিনস প্রাকৃতিক পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ। এগুলি পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ক্যালসিয়াম, আয়রন, জিঙ্ক, প্রোটিন এবং ফাইবারের মতো পুষ্টি উপাদানে ভরপুর হয়। আর সবথেকে বড় কথা হল, কের চাষের ক্ষেত্রে কোনও রকম রাসায়নিক বা ওষুধ ব্যবহার করা হয় না। ফলে প্রাকৃতিক এই সবজি খেলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে। এছাড়া কের এবং সাংরি উভয়ই প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ।