পশ্চিম মেদিনীপুর: সারা পশ্চিমবঙ্গ জুড়ে হাতেগোনা কয়েকজনের বসবাস। এককালে পরিচয়হীন তাঁরাও একটি জাতির মানুষ। এমনটাই সমীক্ষায় তথ্য দিয়েছেন গবেষকেরা। শুধু তাই নয়, নানান সমীক্ষার মধ্য দিয়ে তাদের জাতির অস্তিত্বের কথা বলেছেন স্বয়ং ব্রিটিশ শাসকও। তাঁদের ভাষা আর পাঁচজনের থেকে আলাদা ছিল। বেশ কয়েক পুরুষ আগে তাদের পেশা ছিল শিকার। পিছিয়ে পড়া সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণে এককালে তাঁদের ভাল চোখে দেখতেন না সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষেরা। তাই তাঁরা পরবর্তীতে নিজেদের বদলানোর চেষ্টা করেন। সেভাবে বদলে যায় তাঁদের জাতির আসল পরিচয়। উচ্চশ্রেণির সংস্কৃতিকে ধীরে ধীরে নিজেদের আয়ত্ত করতে থাকেন তাঁরা। তবে বর্তমানে বেশিরভাগ মানুষ পরিবর্তিত হয়ে গিয়েছেন অন্যান্য জাতিতে।
বাংলা ওড়িশার সীমান্ত এলাকায় হাতেগোনা কয়েকটি মৌজায় বসবাস শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষজনের। বেশ কয়েক পুরুষ আগে এঁদের ভাষা ছিল বেশ অদ্ভুত। কিছুটা গুজরাটি অপভ্রংশ, কিছুটা আবার হিন্দির। তবে সভ্যতার উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে শিয়ালগিরি জাতির অবলুপ্তি ঘটতে থাকে। ক্রমশই তাঁরা শবর জনজাতিভুক্ত হওয়ার দাবি জানায়, বেশ কয়েকজন শবর সম্প্রদায়ের সার্টিফিকেটও পেয়েছেন। এরপর অন্যান্যরা দাবি জানানোয় বিশেষ পর্যবেক্ষণ টিম তাঁদের পর্যবেক্ষণ করে জানায় আদতে এঁরা শবর সম্প্রদায়ের নয়।
দাঁতনের শিক্ষক তথা গবেষক সন্তু জানা প্রায় বছর সাতেকের প্রচেষ্টায় উদ্ধার করেন হারিয়ে যেতে বসা শিয়ালগিরি সম্প্রদায়কে। শিয়ালগিরি সম্পর্কে বিশেষ গবেষণামূলক বই প্রকাশের মধ্য দিয়ে আত্মপ্রকাশ ঘটায় অবলুপ্ত এই জাতির পরিচয়। যাঁরা জনজাতিভুক্ত নয়, একটি জাতির মানুষ। বেশ কয়েক পুরুষ আগেই পিছনে গেলে জানা যাবে, এই সম্প্রদায়ের পূর্বপুরুষদের পেশা ছিল শিকার করা। যাঁরা পরিচিত ছিলেন শিয়ালগিরি নামে। সম্প্রতি তিনি বেশ কিছু প্রামাণ্য তথ্য ও শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষজনের ভাষা সংস্কৃতি এবং তাঁদের ব্যবহার্য নানান জিনিসের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছেন বাংলা ওড়িশা সীমান্ত এলাকার সোলপাট্টা, নিমপুর সহ একাধিক মৌজায় রয়েছেন বহু শিয়ালগিরি সম্প্রদায়ের মানুষ।
রবিবার বিকেলে দাঁতনের বিধায়ক বিক্রমচন্দ্র প্রধান, দাঁতন এক পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি কণক পাত্র সহ বিশিষ্ট জনেদের এবং এই সম্প্রদায়ের মানুষজনের উপস্থিতিতে একটি বিশেষ সভার আয়োজন করা হয়। যেখানে শবর নয়, শিয়ালগিরি জাতি হিসেবে পরিচিতি পেতে চান এই সকল মানুষ। তাঁদের প্রামাণ্য বিভিন্ন নথি এবং দলিল অনুযায়ী তাঁদের জাতি হিসেবেই তাঁরা সরকারি নানান সুযোগ-সুবিধা পেতে আগ্রহী। ইতিমধ্যেই এই জাতিগত শংসাপত্র পেতে বিভিন্ন জায়গায় আবেদন জানিয়েছেন তাঁরা।
রঞ্জন চন্দ