সাইকেলে খবরের কাগজ বোঝাই করে ভোর বেলায় বাড়ি বাড়ি বিলি করেন এই দুই মা মেয়ে

Hooghly News: তাগিদ নয়, ভালবাসার কাজ! খবরের কাগজ বিক্রি করেই চলছে মা-মেয়ের সংগ্রাম

হুগলি: কিছু মানুষ এমন আছে যাঁদের প্রতিদিনই ভোরের আলো ফোটার সঙ্গে  শুরু হয়ে যায় তাদের প্রতিদিনের সংগ্রাম। চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে সারা দুনিয়ার সব খবর যে কাগজের পাতায় পড়তে অভ্যস্ত মানুষজন, সেই কাগজ প্রতিদিন লোকের বাড়িতে পৌঁছে দেন হুগলির কোন্নগরের এক মা এবং তাঁর মেয়ে। দীর্ঘ সময় ধরে প্রতিদিন লোকের বাড়িতে কাগজ পৌঁছে দিচ্ছেন মা-মেয়ে। হাতে গরম খবরের কাগজ লোকের বাড়ি পৌঁছে দিয়েই চলে তাঁদের সংসার।

প্রতিদিন সকালের প্রথম ট্রেন থেকে প্ল্যাটফর্মে কাগজ নামানো দিয়ে শুরু হয় কাজ। ভোরের আলো যখন ফুটবে ফুটবে তখন সাইকেল করে প্রত্যেক গ্রাহকের বাড়ি খবরের কাগজ পৌঁছে দিয়েই সংসার চালাচ্ছেন বছর পঞ্চান্নর গীতা। এই কাজে তার সঙ্গী তার মেয়ে সৃজা। প্রতিদিন সকালে মায়ের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাড়ি বাড়ি খবর পৌঁছে দেওয়ার কাজ করে সৃজাও। বর্তমানে বেলুড় লালবাবা কলেজের ভূগোল অনার্সের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রীর সৃজা। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠে কাগজ দিয়ে কলেজ যেতে একটু সমস্যায় পড়তে হয় তাঁকে। তবে সংসারের হাল ধরা থেকে তার পড়াশোনার খরচ সবের জন্য ভরসায় দৈনিক পত্রিকা।

কাগজ বিক্রেতা গীতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, এই কাজ আগে করতেন তাঁর স্বামী। করোনাকালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান তিনি। সংসারে নেমে আসে চরম বিপদ। স্বামী মৃত্যুর পর সংসারের হাল ধরতে কাগজ দেওয়া শুরু করেন গীতা। সেই থেকেই মাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছেন মেয়ে সৃজাও। প্রতিদিন লোকের বাড়ি গিয়ে কাগজ দিয়ে স্কুলের গণ্ডি পেরিয়ে এখন তিনি কলেজ পড়ুয়া। শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষা কখনওই এই কাজে ছুটি নেননি তাঁরা।

এত কাজ থাকার পরেও কেন কাগজ দেওয়াকেই বেছে নিলেন মা-মেয়ে? সেই বিষয়ে তাঁরা বলেন, খবর পড়তে তাঁদের বরাবরই ভাল লাগতো প্রতিদিন মানুষের বাড়িতে গরমাগরম খবর পৌঁছে দেওয়ার একটা আলাদা আনন্দ আছে। শুধুমাত্র রোজগারের তাগিদে নয়, বরং ভালবাসার সঙ্গে এই কাজকে আপন করে নিয়েছেন তাঁরা।