গঙ্গার রুদ্রমূর্তি! তলিয়ে গেল ১০টি পাকা বাড়ি, কয়েকবিঘা কৃষি জমি… শুধু হাহাকার

সামশেরগঞ্জ: হঠাৎ করেই সকাল ৯টার পরে  রুদ্রমূর্তি ধারণ করে গঙ্গা। বাড়ি থেকে দূরত্ব ছিল প্রায় ১০০মিটার। বাড়ির সামনের উঠোনটায় বড় ফাটল ধরে যায়। পরিবারের সকলে মিলে কিছুক্ষণ সময়ের মধ্যে কয়েকটা দরজা জানলা খুলতে পেরেছিলেন। তারপর আস্তে আস্তে নদী গিলে খায় আস্ত দোতলা বাড়িটা। এ অবস্থা ললিতা দেবীর। একই অবস্থা প্রতিবেশী রাধারানি দেবীরও।

গত চারবছর ধরে এলাকায় ভাঙন হওয়ায় বাড়ির পলেস্তারাটা আর নতুন করে করেননি । গত তিনমাস আগে বালির বস্তা ফেলেছিল ঠিকাদারের লোকেরা। ভালোভাবে কাজের জন্য কপাল ঠুকে বলেছিলেন ভর্তি বালির বস্তা যেন দেওয়া হয়। কিন্তু সেকথা শোনেনি। জল বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বালির বস্তাগুলো বসে গিয়েছিল। সকাল থেকেই আড়াআড়ি ভাবে ফাটল দেখা দেয় বাড়িতে। আস্তে আস্তে দোতলা বাড়িটা তলিয়ে যায়। পাশের নতুন শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে ২০টা পরিবার। কিন্তু এইভাবে ভাঙন চললে গঙ্গা গর্ভে তলিয়ে যাবে আস্ত স্কুলটাও। তারপর কোথায় থাকবে জানা নেয় কারোর। শুধু চোখে মুখে গ্রাস করছে, একরাশ আতঙ্ক।

সামশেরগঞ্জের নতুন শিবপুর ভাঙা লাইন এলাকায় গঙ্গাগর্ভে তলিয়ে যায় ১০টি পাকা বাড়ি, কয়েকবিঘা কৃষি জমি। যে কোনও মুহুর্তে গঙ্গায় তলিয়ে যেতে পারে আরও ৫০টি বাড়ি, শিবপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। বাড়ি থেকে ইট, জানলা, দরজা খুলে নিয়ে অন্যত্র পালাচ্ছেন গ্রামবাসীরা। আবারও সেই ভয়াবহ গঙ্গা ভাঙন শুরু হওয়ায় আতঙ্ক গ্রাস করেছে গ্রামবাসীদের।

বিগত ৪বছর ধরে গঙ্গা ভাঙনে দুর্বিসহ অবস্থা সামশেরগঞ্জের গঙ্গা তীরবর্তী এলাকার মানুষদের। এখনও ভিটে মাটি হারা কয়েকশ মানুষ। গঙ্গা ভাঙন প্রতিরোধের কাজে রাজ্য সরকারের পক্ষ থেকে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়। বালির বস্তা ফেলার কাজ শুরু হলেও উঠেছে দুর্নীতির অভিযোগ। ভাঙনের সমস্যা থেকে গিয়েছে সেই তিমিরেই। বাড়ি ঘর সর্বস্ব হারিয়ে গ্রামজুড়ে ভাঙন বিধ্বস্তদের হাহাকার। খবর পাওয়া মাত্র ঘটনাস্থলে ছুটে আসে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। চাচণ্ড গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানের স্বামী গোলাপ সেখ জানান, এদিনের ভাঙনে ২০টি পরিবার ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। তাদের নতুন শিবপুর প্রাথমিক স্কুলে থাকার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা সমস্ত সহযোগিতায় ভাঙন বিধ্বস্তদের পাশে আছি।