বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য

Nandigram: চিরতরে মিলিয়ে গেলেন স্বপ্ন দেখানোর সেই মুখ…, শোক নেমে এসেছে হলদির তীরে নন্দীগ্রামে

নন্দীগ্রাম: বঙ্গের রাজ্য রাজনীতির পালা বদলের ইতিহাস রচনা করে রাতারাতি সংবাদ শিরোনামে উঠে এসেছিল নন্দীগ্রাম। বৃহস্পতিবার ৮ আগস্ট সকাল থেকেই কার্যত শোকে বিহ্বল এই মফস্বল! কারণ এই নন্দীগ্রামকে নতুন স্বপ্ন দেখানোর স্বপ্নদ্রষ্টা আজ হারিয়ে গেলেন চিরতরে। চলে গেলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। আর তাঁর প্রয়াণে শোকের ছায়া নন্দীগ্রামের অলিতে গলিতে।

প্রবীণ রাজনীতিবিদ বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে রাজনৈতিক মহলের পাশাপাশি চোখের জলে ভিজেছে গোটা বাংলার মন। সেই শোক যেন এসে লেগেছে হলদি নদীর পাড়ের নন্দীগ্রামেও। এই নন্দীগ্রামকেই সেদিন নতুন স্বপ্ন নতুন কর্মসংস্থানের দিশা দেখাতে চেয়েছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য।

আরও পড়ুন: আড়াই ফুট/ছ’ফুটের এয়ার বেড, HMV ‘ক্যারাভান’, বই আর বই! বুদ্ধবাবুর ঘর জুড়ে রইল যারা…! বাঙালির জীবনে আজ ‘তেইশে শ্রাবণ’

সালটা ২০০৭, তখনও সবে সিঙ্গুরে জমি অধিগ্রহণ নিয়ে উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলার রাজনীতি। সেই সময়ই পূর্ব মেদিনীপুর জেলার নন্দীগ্রামে কেমিক্যাল হাবের জন্য জমি অধিগ্রহণকে কেন্দ্র করে উত্তাল হয়ে ওঠে হলদি নদীর তীরের নন্দীগ্রাম। তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তিনি সচেষ্ট হয়েছিলেন হলদিয়া নদীর এক প্রান্তে যেমন হলদিয়া শিল্পাঞ্চল তেমনি অন্য প্রান্তে নন্দীগ্রামেও শিল্প স্থাপনে। কিন্তু কেমিক্যাল হাবের জন্য প্রয়োজন দশ হাজার একর জমি। চাষের জমি কলকারখানা বা শিল্প স্থাপনের জন্য ছেড়ে দিতে নারাজ কৃষকেরা। সেইসময়ই জমি রক্ষা কমিটির নামে শুরু হয় সরকারের বিরুদ্ধে বৃহত্তর আন্দোলন।

তারপর ২০০৭ এর ১৪ মার্চ নেমে আসে সেই কালো দিন। অভিযোগ, জমি রক্ষার আন্দোলনকারীদের উপর অকাতরে চলে পুলিশের গুলি। আন্দোলনকারী ১৪ জন মারা যায় পুলিশের গুলিতে। উত্তাল হয়ে ওঠে নন্দীগ্রাম। তারপর এই নন্দীগ্রামই লেখে পালা বদলের ইতিহাস ক্ষমতাচ্যুত হয় ৩৪ বছরের বাম সরকার। নন্দীগ্রামে শিল্প স্থাপনের স্বপ্ন সেদিনই শেষ হয়। কিন্তু বর্তমান নন্দীগ্রামের বাসিন্দারা মনে করছেন নন্দীগ্রামে শিল্প স্থাপন হলে শুধু নন্দীগ্রাম বা পূর্ব মেদনীপুর জেলা উপকার পেত না, রাজ্যবাসীর বড় অংশ এর সুফল ভোগ করত। কারণ বিপুল কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হত।

আরও পড়ুন: চিরবিদায়…! শেষবারের মতো পাম অ্যাভিনিউ ছাড়লেন ধবধবে সাদা ধুতি-পাঞ্জাবির ‘বুদ্ধবাবু’, রইল শেষযাত্রার কর্মসূচি

আজ নন্দীগ্রামের বহু মানুষ কাজের জন্য ভিন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছেন। বহু ভূমিপুত্র কুয়েত, দুবাই-সহ বিভিন্ন দেশে জমিয়েছেন বাস। নন্দীগ্রামবাসীদের একাংশ আজও মনে করেন সেদিন মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য নন্দীগ্রামের জন্য যে স্বপ্ন এঁকেছিলেন তা বাস্তবায়িত হলে হয়ত নন্দীগ্রামের অর্থনৈতিক কাঠামোই বদলে যেত। কিন্তু সে স্বপ্ন পূরণ হয়নি। যিনি স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সেই স্বপ্নস্রষ্টা, স্বপ্নদ্রষ্টা আজ চিরতরে হারিয়ে গেলেন না ফেরার দেশে।

সৈকত শী