হুগলি: গঙ্গা পারের ফরাসি উপনিবেশ চন্দননগর জগৎজোড়া খ্যাতি অর্জন করেছে তার আলোক শিল্পের জন্য। চন্দননগরের তৈরি আলো ছড়িয়ে রয়েছে পৃথিবীব্যাপী। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পরিবর্তন হয়েছে আলোর ধরনের ও। একটা সময় যখন আলোর জনক শ্রীধর দাসের হাতে আলো তৈরি হতে শুরু করে সেই সময় ছিল টুনি বাল্বের যুগ। তবে, যুগ বদলেছে আলোর ধরন বদলেছে শুধু বদলাই নেই আলোর শিল্পের রং।
আরও পড়ুনঃ মাসের অর্ধেক দিনই ছুটি! নভেম্বরে কদিন-কীসের ছুটি সরকারি কর্মচারীদের! রইল চমকে ওঠা তালিকা
একটা সময় টুনি বাল্বের তৈরি মেকানিক্যাল আলোর মেলা দেখার জন্য মানুষজন ভিড় জমাতেন চন্দননগরের জগদ্ধাত্রী পুজোর শোভাযাত্রা দেখতে। তবে টুনি বাল্ব তৈরিতে যা খরচ ও তাতে যা বিদ্যুৎ খরচ হয় তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে পরে। তাই টুনির জায়গা নিয়েছে এলইডি। কিছু সময়ের জন্য বাজার দখল করেছিল পিক্সেল লাইটে ও তবে চন্দননগরের মানুষের চোখ যা দেখতে অভ্যস্ত তা ছিল টুনি বাল্ব এর আলোকসজ্জা। তবে এলইডির জামানায় যখন টুনি কেউ বানায় না তখন কীভাবে সম্ভব দর্শকদের মন জয় করা ! সেই উপায়ও খুঁজে বার করেছিলেন চন্দননগরের আরেক সনামধন্য আলোক শিল্পী বাবু পাল। এলইডি বাল্ব এর উপরে টুনির ক্যাপ লাগিয়ে এলইডি বাল্বকেই দিয়েছিলেন টুনির রূপ। তারপর থেকে ঘটেছে আধুনিকতা ও ঐতিহ্যের মেলবন্ধন।
রংবেরঙের টুনি তৈরি করার জন্য আগে আলোর জনক অর্থাৎ শ্রীধর দাস ব্যবহার করতেন টুনি বাল্বের উপরে রঙিন কাগজ লাগিয়ে সেই প্রযুক্তিকেই আরও একধাপ এগিয়ে নিয়ে এসেছিলেন আলোক শিল্পী বাবু পাল। তিনি এলইডি ল্যাম্পের উপরে রংবেরঙের টুনির মতন এলইডি র বাল্বের টুপি তৈরি করেন। যা দেখে তাজ্জব হয়ে গিয়েছিল গোটা চন্দননগরের মানুষ। এলইডি হলেও তা দেখতে লাগছিল অবিকল টুনির মতন। এরপর থেকেই এখনো পর্যন্ত চন্দননগরের আলোর বাজার দখল করে রেখেছে এলইডির উপরে ক্যাপ পরানো আলো। যা দিয়ে তৈরি হয় কল্পনাও বাস্তবতার মেলবন্ধন। কোথাও আকাশ থেকে পরীরা নেবে আসছে কোথাও বা কোন প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের ছবি। কিংবা হাতি ঘোড়া ডাইনোসর ড্রাগন সবাই হেঁটে হেঁটে আসছে এই সমস্ত আলো তৈরি হয় এলইডি দিয়েই। তবে সেই এলইডি দেখে সকলের মনে করে তা টুনির আলো।
বাবু পালের এই প্রযুক্তি এখনো চন্দননগরের সকল আলোক নির্মাতারা ব্যবহার করে আসছে। সামনেই জগদ্ধাত্রী পুজো এবারে জগধাত্রী পুজোতে আলোর নতুনত্ব দেখাতে প্রস্তুতি নিচ্ছে আলোক নির্মাতারা। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি চলছে একেবারে জোর কদমে। নাওয়া খাওয়া ভুলে আলো গড়তে প্রস্তুত আলোর শহরের নির্মাতারা।
রাহী হালদার