সোমনাথ ঘোষ, চুঁচুড়া: দু’ জনেই এবার মুখোমুখি যুদ্ধে৷ এক সময় একই পেশায় থাকলেও এবার রাজনীতির ময়দানে একেবারে দুই শিবিরের দুই প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায় ও লকেট চট্টোপাধ্যায়৷ লকেটের লড়াই যেখানে নিজের গড় হুগলি ধরে রাখার, সেখানে রাজনীতিতে নতুন পা দেওয়া রচনার চ্যালেঞ্জ লকেটকে হারিয়ে হুগলিতে ফের ঘাসফুল ফোটানোর৷
তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা যতই প্রবল হোক না কেন, আপাতত রাজনৈতিক সৌজন্য হারাচ্ছেন না লকেট-রচনা৷ অন্তত এ দিন সেরকমই দাবি করলেন হুগলি লোকসভা কেন্দ্রের দুই প্রার্থী৷ রচনা, লকেট দু জনেই জানিয়েছেন, রাজনীতির প্রভাব তাঁদের ব্যক্তিগত সম্পর্কে পড়বে না৷
ভোট প্রচারে এ দিন হুগলির চুঁচুড়়াতেই ছিলেন রচনা এবং লকেট৷ একসময়ে বহু বাংলা ছবিতেই একসঙ্গে অভিনয় করেছেন তাঁরা৷ সে কথা মনে করিয়ে দিয়েই রচনা বলেন, ‘দু’ জনে এত ভাল ভাল ছবি করেছি।এখনও যদি আমি আর লকেট সামনাসামনি বসি সারা রাত কেটে গেলেও আমাদের কথা শেষ হবে না। আমরা যখন সিনেমা করতাম আমাদের বন্ডিংটা ভীষণ স্ট্রং ছিল। আমরা যখন অনেকদিন ধরে ছবি করতাম, আউটডোর শ্যুটিং করতাম, আমরা পাঁচ ছয় জন শিল্পী,আমি, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, লকেট চট্টোপাধ্যায়, লাবণী সরকার, কৌশিক বন্দ্যোপাধ্যায় এবং রঞ্জিত মল্লিক। আমরা একটা গ্রুপ ছিলাম। শ্যুটিংয়ের পরে জমত আড্ডা। হয়তো প্রসেনজিৎ হারমোনিয়াম বাজাচ্ছে, লকেট গান করছে, আমি তবলা বাজাচ্ছি- এরকম হয়েছে। সেই স্মৃতিগুলো খুব ভাল ছিল। আমি সেই স্মৃতি নিয়েই লকেটকে আমার কাছে রাখতে চাই।’
রচনার বক্তব্যের পাল্টা সৌজন্য দেখিয়েছেন লকেটও৷ বিজেপি প্রার্থী বলেন, ‘রাজনীতির বাইরে যে ক’জন বন্ধু আমার আছে আমি তাদের কাছে সাংসদ না আমি সেই লকেট। আমি আমার পরিচয়টা সেরকম সাধারণ হিসেবে রাখতে চাই।আমি হয়তো সাংসদ আজ আছি কাল কী হবে জানি না। আমি দশ বছর অভিনয়ের জায়গাটা ছেড়ে এসেছি তাই যোগাযোগটা হয়তো কিছু কমে গিয়েছে কিন্তু স্মৃতিটা আছে। ওঁর কাছে হয়তো সেসব টাটকা কারণ উনি এখনও লাইট, ক্যামেরা, অ্যাকশনের মধ্যে আছেন।আমি চাই ব্যক্তিগত সম্পর্কে যেন রাজনীতির আঁচ যেন না পরে।ব্যক্তিগত সম্পর্ক যেন আমাদের ভাল থাকে। রাজনীতি মানে কেউ কাউকে গালিগালাজ করা নয়, ভুল ধরিয়ে দেওয়া নয়। আমরা মানুষের জন্য কাজ করতে এসেছি এবং যে যার বিচারধারা নিয়ে সেই কাজ করছি।’
বিজেপি সাংসদ আরও বলেন, ‘আমার মনে হয়েছে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে নরেন্দ্র মোদির যে বিচারধারা রয়েছে আমি সেই বিচারধারায় উৎসাহিত হয়েছি। ওনার মনে হয়েছে তাই উনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দলে এসেছেন। আগামী দিনে মানুষ ঠিক করবে কার বিচারধারা ঠিক। মানুষের কাজ করা অনেক কঠিন। আমি নিজেও ক্যামেরার সামনে থেকেছি।ওঁর সঙ্গে যদি কখনও দেখা হয় বা কথা হয় উনি নিজেও বুঝতে পারবে। এখানে মানুষের যন্ত্রনা, দুঃখ অনেক বেশি। আমরা যখন টিভি ক্যামেরার মধ্যে থাকি তখন মানুষ আমাদের ছুঁতে পারে না কিন্তু সেই টিভি ভেদ করে যখন মানুষের কাছে আসি তখন মানুষ আমাদের ছুঁয়ে দেখতে চায়।আমি ওঁকে স্বাগত জানিয়েছি। নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বে দেশ যেভাবে এগিয়ে চলেছে, তাতে একদিন না একদিন হয়তো আমার সঙ্গে উনিও ভারতীয় জনতা পার্টিকে সমর্থন করবে।’
বাংলার বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশে রচনা-লকেটের এই সৌজন্যই এখন বিরল৷ ৪ জুন শেষ পর্যন্ত দুই অভিনেত্রীর মধ্যে জয়ের হাসি কে হাসেন, সেটাই এখন দেখার৷