Ratan Tata: অমূল্য ‘রতন’ হারাল ভারত, টাটা গ্রুপের প্রবাদপুরুষের জীবন এক অত্যুজ্জ্বল গাথা

বুধবার রাত ১১টা ৪৫ মিনিটের পর থেকে গুগল সার্চে তাঁরই নাম রয়েছে শীর্ষে। বৃহস্পতিবার ভোরেও ‘ratan tata news’ পরিণত হয়েছে একমাত্র সার্চে। শুধু তা-ই নয়, গুগল সার্চে বার বার ভেসে উঠেছে ‘ratan tata today’, ‘ratan tata news today’, ‘ratan tata death’, ‘ratan tata death news’, ‘ratan tata rip’, এবং ‘ratan tata quotes’। দেশের প্রথম সারির উদ্যোগপতি তিনি তো বটেই, কিন্তু শুধু এটুকুতেই প্রয়াত রতন টাটার জীবনের সারসংক্ষেপ করা যায় না। এই অত্যুজ্জ্বল জীবনগাথার ঝলক রইল এখানে।

১৯৩৭ সালে জন্ম, কালক্রমে টাটা গ্রুপের বিস্তার- এ তো স্বতসিদ্ধ! কিন্তু এক শিল্প প্রতিষ্ঠানে মানবিকতার সঞ্চারও যে করা যায়, তার একমাত্র দৃষ্টান্ত বোধহয় তিনিই। ছয় দশকেরও বেশি সময় জুড়ে বর্ণময় কর্মজীবনে সারা বিশ্বের কাছে প্রচেষ্টা, সাফল্য এবং সহানুভূতির নাম হয়ে থাকবেন রতন টাটা।

আরও পড়ুন: ‘রতন, আমার মনে তুমি চিরদিন থেকে যাবে’, প্রিয় বন্ধুবিচ্ছেদে লিখলেন মুকেশ আম্বানি

প্রারম্ভিক জীবন এবং শিক্ষা

ডিসেম্বর ২৮, ১৯৩৭: রতন টাটা ভারতের অন্যতম ধনী এবং সবচেয়ে সম্মানিত ব্যবসায়ী পরিবারে মুম্বইতে জন্মগ্রহণ করেছিলেন।

১৯৪৮: তার পিতামাতা, নেভাল এবং সোনু টাটার বিচ্ছেদের পরে, রতন তাঁর দাদি, লেডি নবজবাঈ টাটার কাছে বড় হয়ে ওঠেন।

১৯৬২: তিনি কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আর্কিটেকচার এবং স্ট্রাকচারাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে স্নাতক হন।

১৯৭৫: হার্ভার্ড বিজনেস স্কুল থেকে অ্যাডভান্সড ম্যানেজমেন্ট প্রোগ্রামের একটি কোর্স সম্পন্ন করেন।

কর্মজীবনের শুরু

১৯৬২: রতন টাটা টাটা গ্রুপে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেছিলেন, টাটা স্টিলের দোকান থেকে শুরু হয়েছিল এই যাত্রাপথ, যেখানে তিনি ব্লু-কলার ওয়ার্কারদের সঙ্গে কাজ করতেন।

১৯৭১: তিনি ন্যাশনাল রেডিও অ্যান্ড ইলেকট্রনিক্স কোম্পানি লিমিটেডের (NELCO) ডিরেক্টর-ইন-চার্জ রূপে নিযুক্ত হন, এই দায়িত্ব তাঁকে দেওয়া হয়েছিল ইলেকট্রনিক্স বিভাগকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য।

টাটা গ্রুপের নেতৃত্ব

১৯৯১: ভারতে অর্থনৈতিক উদারীকরণের একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে রতন টাটা টাটা সন্স এবং টাটা গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসাবে জেআরডি টাটার স্থলাভিষিক্ত হন।

চেয়ারম্যান হিসেবে উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ

১৯৯৮: টাটা ইন্ডিকা লঞ্চ- যা টাটা মোটরসের জন্য একটি উল্লেখযোগ্য অর্জন। এই প্রথম ভারতে যাত্রীবাহী গাড়ি তৈরি হল।

২০০০: টেটলি চা অধিগ্রহণ, এটিই টাটার প্রথম বড় আন্তর্জাতিক ক্রয়, যা টাটা টি-কে বিশ্বের বৃহত্তম চা কোম্পানিগুলির মধ্যে স্থান করে দেয়।

২০০৪: টাটা কনসালটেন্সি সার্ভিস, সংক্ষেপে TCS-এর পাবলিক লিস্টিং, যা এটিকে ভারতের বৃহত্তম এবং সবচেয়ে মূল্যবান সংস্থাগুলির মধ্যে একটিতে রূপান্তরিত করে।

২০০৭: টাটা স্টিল ১২ বিলিয়ন ডলারে ব্রিটিশ-ডাচ ইস্পাত প্রস্তুতকারী কোরাস গ্রুপকে অধিগ্রহণ করে, যা ইস্পাত উৎপাদনে বিশ্বব্যাপী নেতা হিসাবে টাটা স্টিলের মর্যাদাকে মজবুত করে।

২০০৮: টাটা মোটরস ২.৩ বিলিয়ন ডলারে ফোর্ড থেকে জাগুয়ার এবং ল্যান্ড রোভার ক্রয় করে এবং এই দুই আইকনিক ব্রিটিশ অটোমোটিভ ব্র্যান্ডের মালিকানা লাভ করে।

২০০৯: ভারতীয় পরিবারের লক্ষ্যে বিশ্বের সবচেয়ে সাশ্রয়ী মূল্যের গাড়ি টাটা ন্যানো লঞ্চ।

আরও পড়ুন: ‘থ্যাংক- ইউ ফর…’ তাঁর ‘শেষ’ সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে কী লিখেছিলেন রতন টাটা? চোখের জলে ভাসলেন অসংখ্য ফ্যান!

অবসর ও জনহিতৈষিতা

ডিসেম্বর ২০১২: টাটা সন্সের চেয়ারম্যান হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন, সাইরাস মিস্ত্রির কাছে তুলে দেন নেতৃত্ব গ্রহণের ভার, যদিও উপদেষ্টামণ্ডলীতে সক্রিয় থাকেন।

২০১৪: Snapdeal, Ola এবং Paytm সহ বিভিন্ন স্টার্টআপে বিনিয়োগ, যা ভারতের ক্রমবর্ধমান ডিজিটাল অর্থনীতির জন্য তার সমর্থন প্রদর্শন করেছে।

২০১৬: সাইরাস মিস্ত্রির বরখাস্তের পরে টাটা সন্সের অন্তর্বর্তী চেয়ারম্যান হিসাবে ফিরে আসেন, ২০১৭ সালে নটরাজন চন্দ্রশেখরন দায়িত্ব নেওয়ার পরে আবার পদত্যাগ করেন।

পরবর্তী জীবন এবং সম্মানলাভ

২০১৭: বাণিজ্য ও শিল্পে তাঁর উল্লেখযোগ্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ ভারতের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক পুরস্কার পদ্মবিভূষণে সম্মানিত হন।

২০২০: COVID-19 মহামারী চলাকালীন তাঁর মানবিক প্রচেষ্টার প্রকাশ্যে আসে, এই সময়ে টাটা ট্রাস্ট স্বাস্থ্যসেবা উদ্যোগকে সমর্থন করার জন্য যথেষ্ট সম্পদ দান করেন।

ব্যক্তিগত জীবন এবং আগ্রহ

রতন টাটা গাড়ি, বিমান চালানো এবং বিবিধ শৈল্পিক ডিজাইনের প্রতি তাঁর আবেগের জন্য বিখ্যাত ছিলেন। একজন নিবেদিতপ্রাণ জনহিতৈষী রূপে তিনি তাঁর সম্পদের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ টাটা ট্রাস্টকে দান করেছিলেন, যা ভারত জুড়ে স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা এবং বিভিন্ন সামাজিক উদ্যোগের অর্থায়নে সাহায্য করে।

মহাপ্রয়াণ

২০২৪ সালের ৭ অক্টোবর তাঁর শারীরিক অবস্থা দুর্বল হয়ে পড়ে। রক্তচাপের ক্রমঅবনতির কারণে তাঁকে মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানেই ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে ছিলেন দেশের প্রথম সারির সুদক্ষ চিকিৎসকদের তত্ত্বাবধানে। কিন্তু কালের আহ্বানে সাড়া দিতেই হয়। বুধবার ৯ অক্টোবর মুম্বইয়ের ব্রিচ ক্যান্ডি হাসপাতালেই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন ভারতীয় শিল্পজগতের এই সুপরিচিত ব্যক্তিত্ব।