স্কুলের দেওয়া নির্দেশিকা

North 24 Parganas News: সোশ্যাল মিডিয়া অ্যাকাউন্ট বন্ধের নির্দেশিকা স্কুলের… সিদ্ধান্তে তোলপাড়

উত্তর ২৪ পরগনা: বিদ্যালয়ে পড়লে ব্যবহার করা যাবে না কোনও সোশ্যাল মিডিয়া প্লাটফর্ম। উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সদর শহর বারাসতের ঐতিহ্যবাহী কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকার জারি করা নির্দেশিকা ঘিরেই এবার তৈরি হয়েছে নতুন বিতর্ক। বিদ্যালয়ের তরফে জানা গিয়েছে, স্কুল চলাকালীন ছাত্রীদের একাংশ গোপনে মাতছে অশ্লীল চ্যাটিংয়ে। ক্লাসের মাঝে বা টিফিন টাইমে স্কুলের মধ্যেই তৈরি হচ্ছে রিল ভিডিও। আর তা নজরে আসতেই উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন বিদ্যালয়ের শিক্ষিকারা। এর জেরেই এই নয়া সিদ্ধান্ত নিল বারাসতের কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয়।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী সেনগুপ্ত পড়ুয়াদের হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে নির্দেশিকা দিয়ে জানান, ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম ও এক্স হ্যান্ডেল তিন ধরনের সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও ছাত্রীর অ্যাকাউন্ট থাকবেনা। অমান্য করলে বিদ্যালয় থেকে ছাত্রীকে বের করে দেওয়া হবে। আর দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীদেরও ‘ক্যারেকটার সার্টিফিকেট’ পাওয়ার ক্ষেত্রে সমস্যা হতে পারে। মূলত, পড়াশোনার মানের উন্নতি ঘটাতেই এই কড়া পদক্ষেপ নিল বারাসতের সরকারি বিদ্যালয়টি বলেই মনে করা হচ্ছে। নির্দেশিকা জানাজানি হতেই প্রধান শিক্ষিকার এই পদক্ষেপের তারিফ করেছেন বহু অভিভাবক।

১৮৪৭ সালে ব্রিটিশ রাজত্বে বাংলার নারী শিক্ষার প্রসারের লক্ষ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবীদ কালীকৃষ্ণ মিত্রের হাত ধরে বারাসতের কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় স্থাপিত হয়। মাত্র দু’জন মহিলাকে নিয়ে শুরু হয়েছিল এই বিদ্যালয়। লোকমুখে প্রচলিত রয়েছে বিদ্যালয়ে দুই ছাত্রীকে পড়াতে কলকাতা থেকে ১৬ কিমি হেঁটে আসতেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর। আর বিদ্যাসাগরের স্মৃতি বিজড়িত বারাসতের কালীকৃষ্ণ উচ্চ বালিকা বিদ্যালয় আজও তার গরিমা বজায় রেখে চলেছে। সম্প্রতি কিছু ঘটনা নিয়ে চিন্তায় বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

বিদ্যালয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শিক্ষিকাদের নজর এড়িয়ে বিদ্যালয়ে মোবাইল ব্যবহার করছে ছাত্রীদের একটি বড় অংশ। শুধু তাই নয়, সোশ্যাল মিডিয়ায় অশালীন চ্যাটিংয়ের বিষয়টিও নজরে এসেছে বেশ কয়েকবার। পাশাপাশি কিছু ছাত্রীর আচরণ চিন্তা বাড়াচ্ছে। এরপরেই বিদ্যালয়ের পরিচালন সমিতির সভাপতি সহ অন্যান্য শিক্ষিকারা আলোচনা করেই সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। প্রধান শিক্ষিকা নির্দেশ জানিয়েছেন, ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুক, ট্যুইটার এই অ্যাকাউন্টে যদি কোনও ছাত্রীকে দেখা যায়, তাঁদের আর স্কুলে রাখা হবে না।

প্রধান শিক্ষিকার এই কড়া বার্তার পর ‘বাধ্য’ প্রায় ৫০-এর অধিক ছাত্রী অ্যাকাউন্ট ডিলিট করেছেন বলেও জানা গিয়েছে। এর স্ক্রিন শটও প্রধান শিক্ষিকাকে পাঠিয়েছেন তাঁরা। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা মৌসুমী সেনগুপ্ত জানান, ছাত্রীরা আমার কন্যাসম। ওদের ভবিষ্যৎ ও পড়াশোনার মানের উন্নতির জন্যই সভাপতির সঙ্গে আলোচনা করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। এটার জন্য অভিভাবকরা প্রশংসা করেছেন। তবে, সমালোচনা হলেও আমি তাতে কান দিচ্ছি না।”

অভিভাবকদেরও বিষয়টি নিয়ে সচেতন করা হয়েছে। অভিভাবিকা রোশনি বিশ্বাস জানান, শিশুদের বাবা-মা যদি শাসন করতে পারেন, তাহলে শিক্ষিকারা কেন পারবেন না! বিদ্যালয় যা সিদ্ধান্ত নিয়েছে তা সাধুবাদযোগ্য। এই সিদ্ধান্তের জেরে অন্তত পড়াশোনাটা ঠিক মতো করতে পারবে, অন্যদিকে মন না দিয়ে। তবে বিদ্যালয়ের এমন সিদ্ধান্তে অবশ্য বিরূপ প্রতিক্রিয়াও মিলেছে বহু ক্ষেত্রে। বিষয়টি নিয়ে এখন সোশ্যাল মিডিয়াতেও চর্চারীতিমত তুঙ্গে।