বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য

Srijan Bhattacharya: ৭৭ দিনের শিক্ষা, ভোটে হেরে খোলা চিঠি সৃজনের! বড় ঘোষণা বাম নেতার

কলকাতা: লোকসভা নির্বাচনে রাজ্যে এবারও শূন্য হাতে ফিরতে হয়েছে বামেদের। যাদবপুর লোকসভা নির্বাচনে বাম প্রার্থী সৃজন ভট্টাচার্য অনেক আশা জাগিয়েও পরাজিত হয়েছেন। নির্বাচনে কেনও এরকম ফলাফল হয়েছে তা নিয়ে দলীয় স্তরে আলোচনা চলছে। এরই মাঝে খোলা চিঠি দিলেন যাদবপুরের সিপিআইএম প্রার্থী। তিনি কী লিখেছেন চিঠিতে? যাদবপুর লোকসভা কেন্দ্রের ভোটারদের ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি লিখছেন, “হেরেছি। তবে, হাল ছাড়িনি। খুব কঠিন লড়াইতে, ময়দানে থাকতে এসেছি। জিততে শিখতে এসেছি। এখানে কোনও শর্টকার্ট নেই। ইউ-টার্ন তো একেবারেই নেই। রুদ্র মহম্মদ শহীদুল্লাহর কবিতার মতো – “আর যাই হোক, পলাতক নই…”।

সৃজন আরও লিখেছেন, ‘যাদবপুর লোকসভার অন্তর্গত ৭টি বিধানসভা আছে। তার মধ্যে ৬টি বিধানসভা এলাকায় ২০২১’এর তুলনায় সামান্য হলেও ভোট বেড়েছে আমাদের। ভাঙড় বিধানসভা এলাকায় আলাদা লড়ে সিপিআই(এম) এবং আইএসএফ, দু’জনেরই ভোট কমেছে। যে ২,৫৮,৭৩২ জন সহনাগরিক ভোট দিলেন আমাদের – তাঁদের ধন্যবাদ। যাঁরা ভোট দিলেন না, তাঁদেরও ভরসার যোগ্য হয়ে উঠতে চেষ্টা করব আগামী দিনে। আমি এই ভোটের ফলাফলকে রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবেই দেখব। তবে, এখান থেকেই নতুন উদ্যমের উপাদানও খুঁজতে চাইব। আমরা এই ভোটের প্রচারপর্ব জুড়ে রুজি-রুটি-কাজের ইস্যুগুলিকে সামনে এনে তৃণমূল-বিজেপি’র প্রচলিত তরজার বাইরে এক বিকল্প ভাষ্য গঠনের চেষ্টা করেছি। নির্বাচনের ফল বলছে, ধ্বংসাত্মক বিজেপি কমলো দেশজুড়ে, রাজ্যজুড়েও। এটা আমাদের পক্ষে অবশ্যই উৎসাহব্যঞ্জক। তৃণমূল-বিরোধী মানুষের কাছে বিকল্প শক্তি হয়ে ওঠার প্রয়াস আমাদের জারি রাখতে হবে।’

আরও পড়ুন: দম বিরিয়ানি থেকে আমের ক্রিম, কুলফি-স্টাফড লিচি-রসমালাই! রাষ্ট্রপতি ভবনে মোদির শপথের রাতের মেন্যুতে কী কী?

সৃজনের দাবি, ‘আমরা বিগত পুরসভা ও পঞ্চায়েত ভোটে তৃণমুল-বিজেপি’র বাইনারি খানিকটা ভেঙে দিতে পেরেছিলাম। এই ভোটে আবার সে দেওয়াল উঠে গিয়েছে। আরএসএস’এর ভূমিকা আছে এ প্রশ্নে। আমাদের সামনে কাজ অনেক। ‘২৬’এর ভোটের আগে আবার ভাঙতে হবে তৃণমূল-বিজেপি’র সাম্প্রদায়িক বাইনারি। বাড়ি বাড়ি গিয়ে বলতে হবে জীবন-জীবিকার কথা। এই নির্বাচনে কংগ্রেস কর্মীরা আমাদের সাহায্য করেছেন। সাহায্য করেছেন বিভিন্ন রাজনৈতিক শক্তি ও ব্যক্তি। রাজনীতির সাথে যুক্ত নন, এমন অনেক মানুষও বিভিন্নভাবে পাশে থেকেছেন আমাদের। আমি সবার কাছে কৃতজ্ঞতা জানাই। মিডিয়ার কর্মীরা, যাঁরা আমাদের প্রচারের খবর সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিয়েছেন, তাঁদেরও ধন্যবাদ জানাই। ভোট-প্রক্রিয়া চলাকালীন ও ভোট-পরবর্তী সময়ে আমাদের পার্টি কর্মীদের উপর সন্ত্রাসের বেশ কিছু ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ প্রশাসন আংশিকভাবে সক্রিয়, পুরোটা নয়। যারা জিতেছে, তারা দায়িত্বশীল ও সংযত হবে, এ প্রত্যাশা স্বাভাবিক। যদি অন্যথা হয়, আত্মরক্ষার অধিকার আমাদের দেশের সংবিধানে আছে – এ কথা ভুলে যাব না আমরা কেউ।’

আরও পড়ুন: তমলুকে অভিজিতের কাছে হারলেন কেন? ‘দুই’ কারণ স্পষ্ট করে চাঞ্চল্যকর দাবি দেবাংশুর

তাঁর কথায়, ‘এই ৭৭ দিন ব্যক্তিগতভাবে আমার জন্য এক বিপুল শিক্ষণীয় জার্নি হয়ে থেকেছে। এত মানুষের ভালবাসা, স্নেহ ও পরামর্শ পেয়েছি, যা আমার সারাজীবনের পাথেয় হয়ে থাকল। যাদবপুরের যে কোনো মানুষ, তাঁর প্রয়োজনে আমার সাথে, আমাদের সাথে, যোগাযোগ করতে পারেন। আমরা আছি। আমরা থাকব। ইউ-টার্ন নেব না!’ লোকসভা নির্বাচনে পরাজয়ের পর বহু প্রার্থীই বিভিন্ন কারণ বা শুধুই অজুহাত সামনে এনেছেন। কেউ বলেছেন অন্তর্ঘাত হয়েছে। কেউ বলেছেন আসন অনুযায়ী প্রার্থী বাছাই ঠিক হয়নি। অনেকে রাজনৈতিক অশান্তি আবার অনেকে অন্যান্য অজুহাত সামনে আনছেন। সেখানে সৃজনের চিঠিকে দৃষ্টান্ত হিসেবে দেখছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞ মহলের একাংশ।